শেখ হাসিনা ভয়ে লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, উনি খুব বড় গলায় বলতেন, আমি পালাবো না। আমি শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে, কোনোদিন পালাই না। কিন্তু আজ লেজ গুটিয়ে পালিয়েছেন। বুধবার (১৪ আগস্ট) বিকেল পৌনে ৩টার দিকে রংপুরের পীরগঞ্জের মদনখালী ইউনিয়নের জাফরপাড়া মাদরাসা মাঠে সম্প্রীতি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তারা আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গুম, খুন করছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। তারা পালিয়ে গেলেও তাদের প্রেতাত্মারা এখনো রয়েছে। আমরা পরিষ্কারভাবে দাবি জানিয়েছি, যে সকল পুলিশ এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের বিচার করতে হবে। হাসিনার বিচার করতে হবে। হাসিনার মন্ত্রীসভার সদস্যদের লুটপাট ও খুনের বিচার করতে হবে। বিচার শুরু হয়েছে। আল্লাহ করে দিয়েছেন। আল্লাহর মাইর দুনিয়ার বাইর। ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। তারা আজ নিজেরাই পালিয়েছে আর দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। তিনি আরও বলেন, আবু সাঈদ বুকের রক্ত দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। যে ইতিহাস হচ্ছে, তরুণদের আত্মত্যাগের ইতিহাস। ফ্যাসিবাদী, খুনি সরকারের পতনের দাবিতে শত শত মানুষ বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছেন। লাখ লাখ মানুষ যখন গণভবনের দিকে যাচ্ছিল তখন হাসিনা ভয়ে পালিয়ে গেলেন। পালিয়ে গেলেও চুপ করে বসে নেই। ভারতে বসে ষড়যন্ত্র করছে। আমরা সম্প্রীতির সমাবেশ করছি। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান একসঙ্গে নতুন স্বাধীনতাকে সুসংহত করতে সম্প্রীতির সমাবেশ করছি।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, হাসিনার বিচার দাবিতে সব রাজনৈতিক দল আজ সমাবেশ করছে। হাসিনা শত শত মানুষকে হত্যা করেছে, গুম করেছে। দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করছে। সমস্ত প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে হাসিনা একটা একনায়কতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র, ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল। নেতা-কর্মীদের নিয়ে আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আবু সাঈদ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আবু সাঈদ একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তার মা-বাবার সঙ্গে দেখা করেছি। আজ তারা বাকরুদ্ধ। কথা বলতে পারছেন না। অনেক স্বপ্ন ছিল ছেলেকে নিয়ে। আবু সাঈদের মতো যারা শহীদ হয়েছেন তাদের আত্মত্যাগ সফল করতে আমাদের সব সময় সজাগ থাকতে হবে। সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এর আগে দুপুর পৌনে ২টার দিকে গাড়িবহরে করে পীরগঞ্জের মদনখালী ইউনিয়নের জাফরপাড়া বাবনপুর গ্রামে এসে পৌঁছান মির্জা ফখরুল। সেখানে তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেন। পরে নিহতের পরিবারের সদস্যদের খোঁজখবর নেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। এ সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু, রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, মহানগরের আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামুসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত, গত ১৬ জুলাই দুপুর আড়াইটার দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হন।