সরকারি নির্দেশনায় সারা দেশে আনুপাতিক হারে বিদ্যুতের লোডশেডিং শুরু হলেও মতলব উত্তর উপজেলায় ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৪ থেকে ১৬ ঘন্টা গ্রাহক পাচ্ছেন না বিদ্যুৎ সেবা। উপজেলার ১ লক্ষের ও বেশী গ্রাহকের সাথে কলকারখানা, ব্যাংকিং ও স্বাস্থ্য সেবায় চরম ভোগান্তি শুরু হয়েছে। দিনের বেলা লোডশেডিং হলেও রাতের দিকে লোডশেডিং- এ সাধারণ মানুষজন সহ্য করতে পারছেন না। অপরদিকে লোডশেডিংয়ের রুটিন (সময়সূচি) মানা হচ্ছে না গ্রাম অঞ্চলে।
সন্ধা হতে রাত ২ টা পর্যন্ত থাকছে না বিদ্যুৎ, সামনে এইচএসসি পরিক্ষা চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে শিক্ষার্থীদের মাঝে।
বিদ্যুৎ সংকটে এর আগেও লোডশেডিং করা হতো। তবে এবার প্রচন্ড গরমের সময় অধিক মাত্রায় লোডশেডিং হচ্ছে। সকাল থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত দিনে রাতে ২৪ ঘন্টায় একঘন্টা, দু’ঘন্টা অন্তর করে ৫-৭ ঘন্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে।
এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা-বাণিজ্য, কলকারখানায় দুর্ভোগ ও বাসাবাড়িতে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার খুবই কষ্ট হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি মতলব উত্তরে চাহিদার তুলনায় যে বিদ্যুৎ পাচ্ছে তাতে আনুপাতিক হারে ২৪ ঘন্টায় ৪ থেকে ৫ ঘন্টা লোডশেডিং দেওয়া যেত বলে তারা মন্তব্য করেন।
এইচএসসি মেহেদী হাসান বলেন, এত বেশি লোডশেডিং এ স্বাভাবিকভাবে পড়াশুনা করা যাচ্ছে না। টিভিতে নিউজে দেখেছে বিদ্যুৎমন্ত্রী বলেছেন সর্বোচ্চ দু’তিন ঘন্টা লোডশেডিং হবে। তা হলে মতলব উত্তরে ৮-১০ ঘন্টা লোডশেডিং কেন হচ্ছে?
মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান বলেন, বিদ্যুৎ সংকটের কারণে সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হচ্ছে। তবে এভাবে ঘনঘন লোডশেডিং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগীদের ভোগান্তি বাড়িয়েছে।
জনতা ব্যাংক ছেংগারচর বাজার শাখা ব্যবস্থাপক সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার অশেষ কুমার রায় বলেন, বিদ্যুৎ লোডশেডিং স্বাভাবিক ব্যাংক সেবা বিঘ্নিত করছে। এখন প্রতিদিন জেনারেটারে গড়ে ১ হাজার টাকার তেল পুড়িয়ে ব্যাংক সেবা স্বাভাবিক রাখা হচ্ছে।
সুলতানাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক খোকন বলেন, মতলব উত্তর উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে জনসাধরণকে।
চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ মতলব উত্তর উপজেলা জোনাল কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মতলব উত্তর উপজেলায় বিদ্যুৎ গ্রাহক হচ্ছেন ১লক্ষ । ১লক্ষ গ্রাহকের দিনে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ২২ মেগাওয়াট। আর রাতে চাহিদা ২৫ মেগাওয়াট। বর্তমানে মতলব উত্তরে দিনে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় মাত্র ১০ মেগাওয়াট আর রাতে ১২ মেগাওয়াট। মতলব উত্তর আঞ্চলিক কার্যালয়ের অধীন দু’টি উপ-কেন্দ্র আছে। দুটি উপকেন্দ্রের ৬টি ফিডারে দুই ঘন্টা অন্তর লোডশেডিং করতে হচ্ছে। মতলব উত্তরে চাহিদার চেয়ে অর্ধেক বিদ্যুৎ সরবরাহ পেলে লোডশেডিং অনেক কমে যেত বলে এ আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্র জানায়।
চাঁদপুর-২ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি মতলব উত্তর আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ মহা ব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. শামসু উদ্দিন বলেন, সরকারি নির্দেশনা ও তাদের চাহিদার তুলনায় যে বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে তা দিয়ে এভাবে লোডশেডিং করা হচ্ছে। এখানে স্থানীয়ভাবে কিছু করার নেই। তিনি আশাবাদি আগামীতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়বে আর তখন থেকে লোডশেডিংও কমে যাবে।