সুশীল চন্দ্র দাস, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
হবিগঞ্জের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের দুর্নীতির প্রতিবেদন আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই দেওয়া হবে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির সদস্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের যুগ্ম সচিব (নির্মাণ ও মেরামত অধিশাখা) মো. আজম খান।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলে। তিনি আরও বলেন, অভিযোগের সকল বিষয় নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। যেহেতু ঘটনা তদন্তাধীন তাই বিস্তারিত বলা সম্ভব হবে না। তিনি কলেজের অধ্যক্ষ ডা. আবু সুফিয়ান ও ক্রয় কমিটির সদস্য সচিব ডা. নাসিমা খানমকে দীর্ঘসময় জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
২ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের যুগ্ম সচিব (নির্মাণ ও মেরামত অধিশাখা) মো. আজম খানকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি করা হয়।
উল্লেখ্য হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের বইপত্র ও মালামাল ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে ১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে প্রতিষ্ঠানটিতে। ভ্যাট ও আয়কর খাতে সরকারি কোষাগারে জমা হয় এক কোটি ৬১ লাখ টাকা ৯৭ হাজার ৭৪৮ টাকা। ১৩ কোটি ৮৭ লাখ ৮১ হাজার ১০৯ টাকা মালামাল ক্রয় বাবদ ব্যয় দেখানো হয়। কিন্তু বাস্তবে ওই মালামালের মূল্য পাঁচ কোটি টাকার বেশি নয়।
সরবরাহকৃত মালামালের মধ্যে ৬৭টি লেনোভো ল্যাপটপের (মডেল ১১০ কোর আই ফাইভ) মূল্য নেওয়া হয় ৯৯ লাখ ৪৯ হাজার ৫০০ টাকা। প্রতিটি মূল্য পড়েছে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা। ঢাকার কম্পিউটার সামগ্রী বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান ফ্লোরায় একই মডেলের ল্যাপটপ বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৪২ হাজার টাকায়।
৬০ হাজার টাকা মূল্যের এইচপি কালার প্রিন্টার (মডেল জেড প্রো এম ৪৫২এন ডব্লিউ) এর দাম নেওয়া হয়েছে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯০০ টাকা। ৫০ জন বসার জন্য কনফারেন্স টেবিল, এক্সিকিউটিভ চেয়ার ও সাউন্ড সিস্টেমে ব্যয় হয়েছে ৬১ লাখ ২৯ হাজার টাকা। জনপ্রতি চেয়ার-টেবিল ও সাউন্ড সিস্টেমের ব্যয় পড়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৪০০ টাকা। চেয়ারগুলোতে ‘ইয়ামিন ফার্নিচার’ লেখা থাকলেও টেবিলগুলো কোনো প্রতিষ্ঠানের এর কোনো স্টিকার লাগানো নেই। দেশের নামীদামী ফার্নিচার প্রতিষ্ঠান হাতিল ও রিগ্যালে এসব চেয়ারের মূল্য ওই দামের অর্ধেকের চেয়েও কম।
এছাড়া বিলের ৬ নম্বরে আবারো কনফারেন্স সিস্টেম নামে ৫০ জনের জন্য (জনপ্রতি ২১ হাজার ৯০০ টাকা) ১০ লাখ ৯৯ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। অত্যন্ত সাধারণ মানের ১৫টি বুক সেলফের মূল্য ৬ লাখ ৬০ হাজার, পাঁচটি স্টিলের আলমারি ২ লাখ ৮৫ হাজার, ১০টি স্টিলের ফাইল কেবিনেট ৪ হাজার ২২ হাজার, ২৫টি স্টিলের র্যাক ১৩ লাখ ৯৭ হাজার টাকা বিল দেওয়া হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটি ৬ হাজার ৪৭৫টি বইয়ের জন্য নিয়েছে ৪ কোটি ৪৯ লাখ ৮ হাজার ৬৬৪ টাকা। মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ১০৪টি প্লাস্টিকের মডেলের মূল্য ১ কোটি ১৪ লাখ ৮৬ হাজার ৩১৩ টাকা নিয়েছে। দেশের বাজারে ‘পেডিয়াটিক সার্জারি’ (২ ভলিউমের সেট) বইটির দাম ৩৩ হাজার টাকা। নির্ঝরা এন্টারপ্রাইজ দাম নিয়েছে ৭০ হাজার ৫৫০ টাকা।