প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,দেশে দূর্ভিক্ষের ষড়যন্ত্র এখন ও আছে,নির্বাচন যারা চাইনি তারাই এই চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে।
শুক্রবার (২৩ ফ্রবুয়ারি) সকাল ১০ টার দিকে গণভবনে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্লেলন নিয়ে এক সংবাদ সম্লেলন এ সব কথা বলেন তিনি। নিত্যপণ্য মজুদ করে কৃত্রিমভাবে দাম বাড়ানোর সঙ্গে সরকার উৎখাতের আন্দোলনে জড়িতদের যোগসূত্র দেখছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নির্বাচনের আগে গত বছরের ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনাটি ‘নির্বাচন বানচালের ঝড়যন্ত্রের অংশ ছিল’ বলেই তিনি মনে করেন। মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা জানাতে শুক্রবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “এগুলো যে হঠাৎ করে করা তা তো না, এটা পরিকল্পিতভাবে।”
প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, দেশে মার্চের দিকে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির একটি আন্তর্জাতিক চক্রান্ত চলছে বলে তিনি নির্বাচনের আগে মন্তব্য করেছিলেন, সেই শঙ্কা এখনও আছে কি না। আর বাজার কারসাজি কীভাবে মোকাবেলা করা যায়।
উত্তর দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “স্বড়যন্ত্র তো ছিল, ষড়যন্ত্র তো আছে। আপনারা জানেন, আমি আাসর পর থেকে বার বার আমাকে বাধা দেওয়া, ক্ষমতায় যেন না যেতে পারি। ৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার ঘটনাই ধরেন না কেন, রাসেলকেও তো ছাড়েনি,কেন, যেন ওেই রক্তের কেউ বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসতে না পারে। পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার কথাই ধরুন, শিশু রাসেলকেও তো ছাড়েনি। কেন, যাতে ওই রক্তের কেউ যেন বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসতে না পারে। আমি এবং ছোট বোন বিদেশে থাকায় বেঁচে গেছি। তারপর ফিরে এসে দায়িত্ব নিয়েছি। আমার চেষ্টাই হচ্ছে, স্বপ্ন নিয়ে জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করেছেন, সেই স্বপ্ন পূরণ করা। সেক্ষেত্রে ষড়যন্ত্র প্রত্যেকবারই হচ্ছে। বারবার মানুষের ভোটের অধিকার আমরাই আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করেছি, গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে এনেছি। যার সুফল দেশবাসী পাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন যাতে না হয়, সে জন্য বিরাট চক্রান্ত ছিল— সেটি আপনারা জানেন। ২৮ অক্টোবরের ঘটনাটা একবার চিন্তা করেন। ২০১৩, ১৪, ১৫ সালের সেই অগ্নিসন্ত্রাস। তারপর আবার গত বছরের ২৮ অক্টোবর…। এগুলো হঠাৎ করে করা, তা নয়— পরিকল্পিত। যারা এই ধরনের নির্বাচন বানচালের পক্ষে তারা যখন দেখলো, নির্বাচন কিছুতেই আটকাতে পারবে না, কারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততা আছে, তখন চক্রান্ত হলো যে জিনিসের দাম বাড়বে। তারপর সরকার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হবে। তখন আন্দোলন করে সরকারকে উৎখাত করবে। এটি তাদের পরিকল্পনার একটা অংশ। কাদের সেটা আপনারা ভালো বোঝেন। আমি আর কারও নাম বলতে চাই না, বলার দরকারও নেই আমার। কিন্তু এই চক্রান্তটা আছে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘তবে আমি বলতে পারি। এই যে দেখেন, কালকে বৃষ্টি হলো! কথায়ই তো আছে— ‘যদি বর্ষে মাঘের শেষ, ধন্যি রাজার পুণ্য দেশ’। এই যে মাঘের শেষেও বৃষ্টি হলো, ফাল্গুনের শুরুতেই বৃষ্টি। আমের মুকুল তরতাজা হয়ে উঠছে। ক্ষেতে ধানের চারা রোপণ, সেখানেও সেচের প্রয়োজন হবে না। ভালো বৃষ্টি হলে ফসল ভালো হবে। খাদ্যপণ্য উৎপাদনে কোনও অসুবিধা হবে না।’
করোনাকাল, বিশ্বব্যাপী স্যাংশন, পণ্য পরিবহনে বাধাগ্রস্ত হওয়ার সময় থেকেই নিজেদের খাদ্য নিজেদের উৎপাদনের তাগিদ দেওয়ার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘তখন থেকেই নিজেদের খাদ্য নিজেদের উৎপাদন করতে হবে বলে যাচ্ছি। এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। সেটি বলা না, কার্যকরও করেছি। আমাদের পরিবারের যত জমি ছিল সেগুলোর সঙ্গে আশপাশের সমস্ত জমি পরিষ্কার করা এবং সেগুলোতে চাষ করা আমরা শুরু করে দিয়েছি। নিচু জমিতে মাছ আর উঁচু জমিতে ধান চাষ করতে বলেছি। যার যত জমি আছে, সে হিসেবে ভাগ পাবে। ফলে এবার কম করে হলেও ১০-১৫ হাজার টাকা করে একেকজন পেলো।’
এক সময় অভাব বলতে পেটে ভাত নেই শোনা যেত– মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, এখন কী সেই কথাটা বলে? বলে না। কী বলে? ডিমের দাম, পেঁয়াজের দাম, গরুর মাংসের দাম অথবা পাঙাস মাছের পেটি খেতে পারছে না— এই তো! এটা কি একটা পরিবর্তন না? ১৫ বছরে এই পরিবর্তনটা তো এসেছে, সেটা তো স্বীকার করবেন। ১৫ বছর আগে কী ছিল? ভাতের জন্য হাহাকার ছিল। একটু নুন ভাত। ভাতের ফেন চেতো। এখন তো তা চায় না।
ডিম লুকিয়ে রেখে দাম বাড়ানোর ঘটনায় সরকার উৎখাতের আন্দোলন করে, তাদের কারসাজি আছে— সেটি মনে হয় না? এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, এর আগে এই রকম পেঁয়াজের খুব অভাব। দেখা গেলো, বস্তায় বস্তায় পচা পেঁয়াজ পানিতে ফেলে দিচ্ছে। এই লোকগুলোকে কী করা উচিত? সেটা আপনারাই বলেন। একটা গণধোলাই দেওয়া উচিত। সরকার কিছু করতে গেলে বলবে সরকার করছে। তার থেকে পাবলিক কিছু করলে প্রতিকার করে, সব থেকে ভালো। কেউ কিছু বলতে পারবে না। জিনিস লুকিয়ে রেখে পচিয়ে ফেলে দেবে, আর জিনিসের দাম বাড়বে! পেঁয়াজ আমাদের যথেষ্ট উৎপাদন হচ্ছে। সেটা আমরাই শুরু করেছি। পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন আমরা শুরু করেছি। কোন কোন এলাকায় পেঁয়াজ হয়, সেগুলো আমরা খুঁজে বের করেছি। কাজ করে যাচ্ছি। আগামীতে বাইরে থেকে আনতে হবে না। তবে আমদানির কথাটা বলতে হয় এই কারণে যে, এত পেঁয়াজ আসছে নিউজ হলে যারা লুকিয়ে রাখে তারা তারাতাড়ি বের করে। বাজারে তার একটা প্রভাব আছে। সে জন্য দাম সামঞ্জস্য হয়। এটা বাস্তবতা, খুব খোলামেলা কথা বলছি। লুকানোর কিছু নেই।