এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে কর্তৃত্ববাদী সরকারের দমন–পীড়নের বিপরীতে মানবাধিকার, বাক্স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় ভূমিকা রাখা ব্যক্তিদের নিয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে কানাডাভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন এক্সচেঞ্জ (আইএফইএক্স)। সেখানে এই অঞ্চলের তিন নারী সাংবাদিকের ভূমিকা উল্লেখ করেছে তারা।
সেই তালিকায় শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ফিলিপাইনের সাংবাদিক মারিয়া রেসার সঙ্গে প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি রোজিনা ইসলাম ও ভারতের রানা আইয়ুবের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতে কাজ করা ১১৯টির বেশি সংস্থা ও সংগঠনের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক আইএফইএক্স। ৫ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি নিবন্ধে আইএফইএক্সের আঞ্চলিক সম্পাদক মং পালাতিনো লিখেছেন, ২০২২ সালে করোনা মহামারি বহু মানুষের দুর্দশা বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে অঞ্চলজুড়ে রাজনৈতিক সংকট ও সরকারি দমনপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদও দেখা গেছে। দুর্নীতিপরায়ণ শাসকের পতনের দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে, সাংবাদিকেরা দুর্নীতি প্রকাশ করেছেন, স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন নারী এবং এসব আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছে সুশীল সমাজ।
গত ৮ ডিসেম্বর ওয়াশিংটনে রোজিনা ইসলামের হাতে ২০২২ সালের অ্যান্টিকরাপশন চ্যাম্পিয়নস অ্যাওয়ার্ড তুলে দেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন
গত ৮ ডিসেম্বর ওয়াশিংটনে রোজিনা ইসলামের হাতে ২০২২ সালের অ্যান্টিকরাপশন চ্যাম্পিয়নস অ্যাওয়ার্ড তুলে দেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনছবি: যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের সৌজন্যে
এ আলোচনায় আফগানিস্তানে তালেবান শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সংগঠনে ভূমিকা রাখা তরুণ শিক্ষার্থী এবং মিয়ানমারে জান্তা সরকারের নিপীড়ন ও হুমকির মধ্যে কাজ করে যাওয়া নারী সাংবাদিকদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতের রানা আইয়ুব, বাংলাদেশের রোজিনা ইসলাম এবং ফিলিপাইনের মারিয়া রেসার কথা। বলা হয়েছে, তাঁদের মতো নারী সাংবাদিকেরা সরকারি কর্মকর্তাদের জবাবদিহির মুখোমুখি করতে স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের জন্য প্রয়োজনীয় ভূমিকা রেখেছেন। সাংবাদিকতার জন্য নিপীড়নের শিকার হওয়ার পর তাঁরা বিপুলভাবে জনতার সমর্থন পেয়েছেন। মানুষের ঐক্যের এই শক্তি রাষ্ট্রীয় আক্রমণকে রুখে দেওয়ার সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছেন।
এক দশকের বেশি সময় ধরে প্রথম আলোতে কর্মরত রোজিনা ইসলাম বাংলাদেশে করোনাকালে স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম তুলে ধরতে গিয়ে নিগ্রহ, নির্যাতন ও মামলার শিকার হয়েছিলেন। এরপরেও তিনি তাঁর কাজ অব্যাহত রেখেছেন। সাংবাদিকতার মাধ্যমে দুর্নীতিবিরোধী লড়াইয়ে ভূমিকা রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর গত মাসে তাঁকে ২০২২ সালের অ্যান্টিকরাপশন চ্যাম্পিয়নস অ্যাওয়ার্ড দিয়েছে। এর আগে গত বছর সাহসী সাংবাদিকতার জন্য রোজিনা ইসলামকে সেরা অদম্য সাংবাদিক (মোস্ট রেজিলিয়েন্ট জার্নালিস্ট) শ্রেণিতে ‘ফ্রি প্রেস অ্যাওয়ার্ড’ দিয়েছিল নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামভিত্তিক সংস্থা ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড।
ভারতের পুরস্কারজয়ী সাংবাদিক রানা আইয়ুব ওয়াশিংটন পোস্ট-এর কলাম লেখক। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করায় তিনি উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের ভয়াবহ ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের শিকার হন। গত বছর জানুয়ারিতে তিনি এক টুইটে ইয়েমেনের সাধারণ নাগরিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা বলেন। এতে সৌদি আরব সমর্থকদেরও ব্যাপক ট্রলের শিকার হন তিনি। রানা আইয়ুব ও তাঁর পরিবারকে হত্যা ও ধর্ষণের হুমকি দিয়ে এক দিনে ২৬ হাজার টুইট করা হয়। অনলাইনে হয়রানি এখানেই শেষ নয়। তাঁর সম্পদ ও ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেয় ভারত সরকার। এই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কোভিড-১৯-এ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তার জন্য গড়ে তোলা তহবিল নয়ছয় করার অভিযোগ আনা হয়। এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও রানা আইয়ুব তাঁর অবস্থানে অটল থাকেন।