৬ থেকে ৭ বছর বয়সের একটি মেয়ে থালা-বাসন ধুয়ে ঘরের দিকে হেঁটে যাচ্ছে। তার পেছন পেছন ঘরে ঢুকতে চোখে পড়ল আরও হৃদয়বিদারক এক দৃশ্যের।
তিন বছর বয়সী সকাল, বড় বোনের ধুয়ে আনা থালা নিয়ে ভাত বাড়ছে। ভাত নিয়ে এসে তরকারি দেও বলে অনেকটা চিৎকার করছে শিশুটি। এসময় বড় ভাই ১১ বছর বয়সী সজল তরকারির একটি বাসন নিয়ে এগিয়ে আসে।
খেতে বসে শিশু সকাল ছোট বোন ১১ মাস বয়সী সুমির মুখে তুলে দিচ্ছে খাবার। ছোট ছোট প্রত্যেকটি ঘটনা একটি নির্দিষ্ট পরিবারের।
এদিকে মাস দেড়েক আগে চার ভাই-বোন তাদের মাকে হারিয়েছে। সেই থেকে প্রতিদিন অনেকটা এমন দিন কাটে তাদের। এই দৃশ্য দেখা যায় বাগেরহাটের চিতলমা রী উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম রুইয়ার কুলে। এ বিষয়ে বাবা সুদাষ ব্রক্ষ্মা জানান, এক বছর আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন স্ত্রী’ ঝর্ণা বিশ্বা’স। দিনমজুর সুদাষের নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। তাই খুব একটা চিকিৎসা করাতে পারেননি স্ত্রী’র। দেড়মাস আগে অনেকটা বিনা চিকিৎসায় মা’রা যান ঝর্ণা। মূলত এরপরেই দূর্বিষহ জীবন শুরু হয় সুদাষ ও তার চার সন্তানের।
সুদাষ ব্রক্ষ্মা বলেন, আমা’র তেমন কোনো সহায় সম্পত্তি নেই। কোনো রকম দিনমজুরি করে চলি। স্ত্রী’ মা’রা যাওয়ার পরে চার সন্তানকে নিয়ে খুব শোচনীয় অবস্থায় আছি। না পারছি কাজে যেতে, না পারছি বাচ্চাদের খাবার দিতে। দুই ছে’লে-মে’য়ে স্কুলে যেত, তাও বন্ধ হয়ে গেছে।
এ সময় ৫ম শ্রেণি পড়ুয়া সজল জানায়, আগে স্কুলে যেতাম। মা মা’রা যাওয়ার পর থেকে আর স্কুলে যাই না। আমি নিজেই ভাত তরকারি রান্না করি। কোনোদিন না খেয়েও থাকতে হয়। কি করব, আর তো কোনো উপায় নেই। স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ম শ্রেণির শিক্ষার্থী স্বর্ণালী ব্রক্ষ্মা আস্তে আস্তে বলতে থাকে, স্কুলে যেতে ইচ্ছা করলেও পারি না। ভাই বোনদের সঙ্গে থাকি। আর থালা-বাসন ধুয়ে রাখি।
প্রতিবেশী পুতুল বিশ্বা’স বলেন, মা হা’রানোর পর থেকেই খুব করুণ অবস্থা তাদের। ঘরে খাবার নেই, টাকা-পয়সাও নেই। আম’রা কোনোরকম সাহায্যে করি। এছাড়া বাড়ির চারপাশেই পানি, কখন কি ঘটে। তাই সুদাষ দা মাঝে মাঝে ওদের আ’ট’কে রেখে কাজে যায়। এভাবেই কাটছে তাদের দিন। স্থানীয় মনিমোহন ব্রক্ষ্মা বলেন, তিন শতক জায়গার ওপরে ভাঙাচো’রা ঘর সুদাষের। আয়ের বিকল্প কোনো পথও নেই। এই অবস্থায় ওদের সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতার খুব দরকার। এছাড়া শি’শুদের ভবিষ্যত নিয়েও সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে চিতলমা’রী উপজে’লা নির্বাহী কর্মক’র্তা সাইয়েদা ফয়জুন্নেছা বলেন, খবর পেয়ে ইতোমধ্যে উপজে’লা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবারটিরকে খাদ্য সহায়তা এবং শি’শুদের জন্য দুধ কিনে দেওয়া হয়েছে। আম’রা তাদের একটি ভিজিডি কার্ড করে দেব। এছাড়া আমি ওই এলাকায় গিয়ে সরকারি সহযোগিতা পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি স্থানীয়দেরও পরিবারটির পাশের দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করেছি।