২০ দলীয় জোটে থাকা না থাকা নিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের বক্তব্য সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য দিচ্ছে না বিএনপি। জোট ছাড়ার বিষয়ে বিএনপি নেতারা বলছেন, এটা তাদের (জামায়াতের) আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য নয়।
জোট ভাঙার আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণাও দেওয়া হয়নি। আর বিএনপির মহাসচিব গণমাধ্যমে এ নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি না।২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘জামায়াতের আমিরের বক্তব্য নিয়ে তার দলের নেতারাই যা বলার বলেছেন, আমাদেরতো আর বলার দরকার নেই। ’
কিন্তু দেশের মানুষতো এ বিষয়ে বিএনপির বক্তব্য জানতে চায়।এ বিষয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, তাদের (জামায়াতের) নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মোহাম্ম’দ তাহের সাহেব বলেছেন ‘এটা আমাদের দলের বক্তব্য না। ’ তিনজন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেছেন, এটা তাদের দলের বক্তব্য না। দলে এমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তাহলে এটা নিয়ে আমাদের বক্তব্যের কি দরকার আছে।
তিনি বলেন, আম’রাতো আসলে জোট ভে’ঙে দেইনি। কিন্তু উনি (জামায়াত আমির) বক্তব্যে যেটা বলেছেন, সেটাও ঠিক। আম’রা সবার সঙ্গে আলোচনা করেছি আম্রা বলেছি যে, বৃহত্তর আ’ন্দোলনের শুরু হিসেবে যুগপৎ আ’ন্দোলন করবো। সব বিরোধী দলের সঙ্গে মিটিংয়ে এই ধরনের বক্তব্যই বলেছি। উনিও (জামায়াত আমির) তার বক্তব্যে এটাই বলেছেন।
বিভিন্ন দলের সঙ্গে বিএনপি যে বৈঠক করেছে ধারাবাহিক সেই বৈঠক শেষ হয়েছে কিনা এবং জামায়াতের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল সেটা হবে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, উনার বক্তব্যে তো উনি (জামায়াত আমির) বলেছেন যে, আলোচনা হয়েছে। আম’রা একমত হয়েছি।
জামায়াতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা দলের সিদ্ধান্তের বিষয়। আমি একাতো এটা বলতে পারবো না।নজরুল ইসলাম বলেন, জামায়াতের সঙ্গে যে আলোচনা হয়নি বিষয়টি তেমন না। তারাও বলেছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে এবং একমত হয়েছে যুগপৎ আন্দোলন হবে ইনশাল্লাহ। অন্যদের সঙ্গে আমাদের যে আলোচনা হয়েছে সেটাও একই কথা।
জানা গেছে, জামায়াতকে জোটে রাখা না রাখার বিষয়ে গণমাধ্যমে কিছু না বলতে হাই কমান্ডের নির্দেশ ফলো করছেন দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ই’স’লা’ম আলমগীর।সোমবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।
তিনি বলেন, এখন বলে লাভ নেই। আমি উত্তর দেবো না। আপনারা (সাংবাদিকরা) কী বলবেন সেটাও আমি জানি। আমি উত্তর দেবো না।এই পর্যায়ে একজন সাংবাদিক বলেন, এটাতে আমা’র গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে। মহাসচিব বলেন, আপনার গণতান্ত্রিক অধিকারকে সম্মান রেখেই বলছি, আমা’রও গণতান্ত্রিক অধিকার আছে সেটার উত্তর না দেওয়ার। আপনাদের ধন্যবাদ।
জামায়াতে ইসলামীর মজলিশে এক ভা’র্চ্যুয়াল সভায় দলটির আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘২০ দলীয় জোট আর কার্যকর নেই। বিএনপি এই জোট কার্যকর করতে চায় না। বছরের পর বছর ধরে এই ধরনের অ কার্যকর জোট চলতে পারে না। আমরা তাদের (বিএনপি) সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেছি। এর সঙ্গে তারা ঐকমত্য পোষণ করেছে। তারা আর কোনো জোট করবে না। এখন যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করব। একই সঙ্গে তিনি সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আ’ন্দোলন করবেন বলেও ওই বক্তব্যে বলেছেন। ’
গত ১৪ আগস্ট জামায়াতের মজলিশে শূরার সভার একটি ভিডিও ক্লিপ ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।তবে এ বিষয়ে দলটির সিনিয়র নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্ম’দ তাহের গত রোববার (২৮ আগস্ট) গণমাধ্যমকে বলেন, দলের আমিরের ওই বক্তব্য ছিল কর্মীদের সঙ্গে ঘরোয়া এক বৈঠকে খোলামেলা আলোচনা। দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত নয়। বিএনপির সঙ্গে জোট আছে নাকি ভেঙে গেছে-এ প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘বিএনপি তো বলেনি যে জোট ভে’ঙে গেছে। আমরা কীভাবে বলি ভেঙে গেছে। ’
অপরদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলানিউজকে বলেন, জামায়াত নিয়ে দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরামে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে পরে জানানো হবে।
তিনি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বলেন, তাদের দলে ঘরোয়া আলোচনার একটি বক্তব্য নিয়ে অহেতুক বিতর্ক করা হচ্ছে। জামায়াতের যে কোনো বক্তব্য সংবাদ বিজ্ঞপ্তি কিংবা সংবাদ সম্মেলন অথবা জনসভা’র মাধ্যমে তারা তুলে ধরেন। যে বক্তব্য নিয়ে আলোচনা চলছে, সেই বক্তব্য তাদের দলের আমির দলীয় একটি ভা’র্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি-এসব পটভূমিতে জোটের ভূমিকা নিয়ে ব্রিফ করেন। এই বক্তব্যটি কোনো অবস্থাতেই সংগঠনের সিদ্ধান্ত হিসেবে জাতির সামনে পেশ করার জন্য নয়। কিন্তু এই বক্তব্যটি যেভাবেই হোক, মিডিয়ায় গেছে।
১৯৯৯ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় পার্টি (এরশাদ), জামায়াতে ইসলাম ও ইসলামী ঐক্যজোট’কে নিয়ে খালেদা জিয়া চার দলীয় জোট গঠন করেন। ১/১১ এর ঘটনাবলীর পরে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল চার দলীয় জোটের কলেবর বাড়িয়ে ২০ দলীয় জোট করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এই সময়ের মধ্যে বেশ কয়েকটি দল জোট ছেড়েছে আবার কয়েকটি জোটে যোগ দিয়েছে। কিন্তু আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে সেই জোট ভে’ঙে দেয়নি বিএনপি।
বর্তমানে ২০ দলীয় জোটে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশ, এলডিপির দুই অংশ, কল্যাণ পার্টি, লেবার পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির একাংশ (এনপিপি), বাংলাদেশ মু’সলিম লীগের একাংশ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) দুই অংশ, ডেমোক্রেটিক লীগ (ডিএল), সাম্যবাদী দল, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম’মের একাংশ, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির একাংশ (ডিপি), ইসলামিক পার্টি, ন্যাপ ভাসানী, বাংলাদেশ ন্যাপের একাংশ, পিপলস লীগ ও জাতীয় দল রয়েছে। এই দলগুলোর সঙ্গে নতুন করে বিএনপি সংলাপও করেছে। সবাই য