নওগাঁর বদলগাছীতে গভীর-অগভীর নলকূপের ট্রান্সফরমার চুরির হিড়িক পড়েছে। গত নভেম্বর এবং চলতি মাস মিলে উপজেলার বিভিন্ন মাঠ থেকে ৩৪ টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। জানাযায়, গত ১৭/১২/২৩ খ্রিঃ উপজেলার মথুরাপুর ইউপির বৈদ্যনাথ সরকার পিতা-মৃত বিষু, গ্রাম- ভয়ালপুর থেকে একটি ১০ কেভিএ ট্রান্সফরমারের কোর ও কয়েল চুরি করে নিয়ে যায়। রোপা- আমন ধান কৃষক ঘরে তোলার পর মাঠ ফাঁকা হয়ে যাওয়ায়, শীতের কুয়াশাছন্ন অন্ধকার রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে, চোরেরা তখন বৈদ্যতিক তার কেটে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে খুলে নেওয়া হয় মুল্যবান তামার তার এবং কয়েল। একেকটি ট্রান্সফরমার ৫ এবং ১০ কেভি বিদ্যুৎ ধারন সম্পুর্ণ। যেখানে ৯ কেজি থেকে ১৬ কেজি পর্যন্ত তামার তার থাকে। প্রতি কেজি তামার মুল্য কমপক্ষে ১২শ’ টাকা। একটি ৫ কেভি ট্রান্সফরমারের মুল্য ৪৫ হাজার টাকা এবং ১০ কেভি ট্রান্সফরমারের মুল্য ৬৮ হাজার টাকা। বাজারে চাহিদা এবং মুল্য ভালো থাকায় প্রতি বছর ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে গভীর নলকূপের অপারেটররা। এতে চুরি যাওয়া ৩৪ টি ট্রান্সফরমারের গড়মুল্য ২১ লক্ষ্য ৫১ হাজার টাকা। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং পল্লী বিদ্যুৎ অফিস থেকে সহযোগিতা না পাওয়ার ফলে চলতি ইরি মৌসুমের আগে নতুন ট্রান্সফরমার কিনে সেচ নিয়ে চিন্তাই পড়েছে কৃষকেরা। তবে কেউ কেউ বলছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর নজরদারির অভাবে চুরি হচ্ছে ট্রান্সফরমার। এতে চরম ক্ষতির মুখে পড়ছে অসহায় কৃষকরা। উপজেলার সদর ইউনিয়নের কৃষক রশিদুল ইসলাম,আব্দুস সাত্তার,সোহেল,হারুন সহ ১০/১২ জন কৃষক বলেন, গভীর নলকূপের বেশীর ভাগ জায়গায় সমবায় সমিতি না থাকায় অপারেটর একা নিয়ন্ত্রন করে।আবার কেউ কেউ ভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ফলে অপারেটর বা কোন পাহারাদার না থাকার কারনে ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ার মূল কারন বলছে তারা। ২/৩ জন অপারেটর বলেন, রাতে চুরি হলে সকালে বরেন্দ্র অফিস এবং থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। বরেন্দ্র অফিসের জাহাঙ্গীর স্যার বলেন, আমাদের কিছু করার নেই নতুন ট্রান্সফরমার কিনে নিন। আর পুরাতন ট্রান্সফরমার সন্ধান পাইলে কম দামে কিনতে পারবেন। আমি আপনাদের মোবাইল ফোনে জানাবো। এ বিষয়ে বরেন্দ্র অফিসে অভিযোগ দিয়েও কোন কাজ হয়নি, এমনটিই বলছে সাধারন কৃষকরা ও অপারেটরা। এতে কৃষকের পকেট কাটা যাচ্ছে বলে অভিযোগ করছে তারা।
বদলগাছী বিএমডিএ’র উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলমের কাছে পুরাতন ট্রান্সফরমার সন্ধান বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক চাউল মিল মালিক বিক্রি করতে চেয়েছিলো। তাই আমি ঐ অপারেটর কে বলেছি। প্রয়োজনের বেশী তো কেউ ট্রান্সফরমার রাখতে পারে না। তাহলে মিল মালিক বিক্রি করবে কিভাবে? জবাবে তিনি বলেন, সে ব্যবসা ক্লোজ করবে। এই জন্য সে
ট্রান্সফরমার বিক্রয় করতে চায়। আপনি বিষয়টি অন্য দিকে নিয়ে যাচ্ছেন কেন?
এব্যপারে বদলগাছী পল্লী বিদ্যুত সমিতির ডিজিএম আহসান হাবিব বলেন, ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। ট্রান্সফরমার চুরি রোধে গভীর-অগভীর মালিকদের নিজ উদ্যোগে ট্রান্সফরমার পাহারার ব্যবস্থা করতে মাইকিং করা হয়েছে।
এবিষয়ে বদলগাছী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছি। কৃষকরা আমন ধান ঘরে তোলার পর অনেক মাঠ ফাঁকা হয়ে গেছে। চোরেরা এই সময়টাকে কাজে লাগাচ্ছে। তবে চোর চক্রকে ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।