চাঁপাইনবাবগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারের বিরুদ্ধে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও গরু লুটের মামলা হয়েছে। রবিবার (৩১ জুলাই) চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আমলী আদালতে এই মামলা দায়ের করেন, সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের দক্ষিণ চরি মির্জাপুর গ্রামের মৃত ফজর মন্ডলের ছেলে মো. শাহ জামাল (৫৫)। একটি বিবাহ বিচ্ছেদকে কেন্দ্র করে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের একটি কক্ষে বাবা ও ছেলেকে আটকে রেখে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানোর পর বাড়িতে লুটপাট করার অভিযোগে এই মামলা করা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আমলী আদালতের জৈষ্ঠ বিচারক মো. নাজমুল হোসেন মামলাটি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিআইবিকে তদন্তভার দেন। মামলা নম্বর-৭৩৮/২২ (নবাবগঞ্জ)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীর আইনজীবী মো. দেলুয়ার জাহান। মামলায় প্রধান আসামী করা হয়েছে, গোবরাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম টিপুকে। দ্বিতীয় আসামী গোবরাতলা ইউনিয়ন পরিষদের ০২নং ওয়ার্ড সদস্য মো. নুরুল ইসলাম।
মামলার অন্য আসামীরা হলেন- গোবরাতলা ইউনিয়নের মুনসেফপুর গ্রামের মৃত আলতাস আলীর ছেলে মোহাম্মদ ইব্রাহিম আলী, মো. হবু আলী, শারিফ আলি, মৃত সদর আলীর ছেলে মো. ফারুক আলী, মোহাম্মদ ওসমান আলী, মৃত মফিজুল ইসলামের ছেলে আলী আহসান, মৃত দাউদ আলীর ছেলে ইউনুস আলী, হবু আলীর ছেলে আহাদ আলী, মৃত সদর আলী মেয়ে মোসা. মোসলেমা, মোসা. রোকেয়া বেগমসহ অজ্ঞাত ৪-৫ জন।
মামলার নথি, বাদী, পুলিশ ও আইনজীবী সূত্রে জানা যায়, বাদী শাহ জামালের ছেলে জসিম উদ্দিনের সাথে ২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় একই ইউনিয়নের মুনসেফপুর গ্রামের মোসলেমা খাতুনের সাথে। পারিবারিক বনিবনা না হওয়ায় সংসার জীবনের এক বছর পর গত ৩১মে তালাক প্রদান করেন জসিম উদ্দিন। তালাক নিষ্পত্তি করতে ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম টিপু গত ১৯ জুলাই ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে সালিসের আয়োজন করে। এসময় বউ তালাক দেয়া বাবদ জসিমের কাছে ২ লাখ টাকা ৩ হাজার টাকা জরিমানা করে ইউপি চেয়ারম্যান টিপু।
জানা যায়, সালিশে অতিরিক্ত জরিমানা হওয়ায় দিতে অস্বীকৃতি জানালে ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে আটকে রাখ হয় জসিম ও তার বাবা শাহ জামালকে। ১০০ টাকার স্ট্যাম্পে সাক্ষর দিতে না চাইলে অবশেষে তাদেরকে ছেড়ে দেন চেয়ারম্যান টিপু। পরবর্তীতে গত ২৫ জুলাই ভোর ৫টা ৩০ মিনিটের দিকে চেয়ারম্যান ও মেম্বারের নির্দেশে অন্য আসামীরা শাহ জামালের বাড়িতে হামলা করে।
মামলার বাদী শাহ জামাল বলেন, লুটপাটের সময় তারা ঘরের দরজায় তালা মেরে বাড়ির উঠানে থাকা দুইটি গরু নিয়ে যায়। গরু দুটির মূল্য ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এছাড়াও ছেলের বউ জেসমিন আখতারের গলায় কানে থাকা দশ আনা স্বর্ণের মালা ও ছয় আনা ওজনের দুইটি কানের দুল ছিনিয়ে নেয়। যার আনুমানিক বাজারমূল্য ৫০ হাজার টাকা। এমনকি দুটি স্মার্টফোন ও বিছানার নিচে থাকা ৪৩ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এসময় বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে নানারকম ভয়ভীতি দেখায় তারা।
শাহ জামালের ছেলে ও মামলার সাক্ষী জসিম উদ্দিন জানান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জোরপূর্বক জরিমানা চাপিয়ে দেয়। জরিমানা দিতে না পারলে আমার বাবা ও ভাইকে ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে আটকে রাখে। তার নির্দেশে ঘুমন্ত অবস্থায় আমাদের বাড়িতে হামলা করা হয়। লুটপাটের সময় আমি ঘরের মধ্যে ঘুমিয়ে ছিলাম। যাত বের হতে না পারি, সেইজন্য আমার ঘরের দরজায় তালা মেরে দেয় তারা।
বাদীর আইনজীবী মো. দেলুয়ার জাহান বলেন, আদালত মামলাটি গ্রহণ করেছেন। তদন্তের জন্য পিবিআই-কে দায়িত্বভার দেয়া হয়েছে।
মামলার প্রধান আসামী ও গোবরাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম টিপু বলেন, আমার বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি শুনেছি। এবিষয়ে সরাসরি কথা বলব। পরে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ফোন রিসিভ করেননি ইউপি চেয়ারম্যান টিপু।
এবিষয়ে রাজশাহী পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিআইবি’র অতিরিক্ত সুপার (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ মুঠোফোনে জানান, আদালতের নির্দেশনার অনুলিপি এখনও আমাদের কাছে আসেনি। আদেশের অনুলিপি পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।