আল-আমিন,নেত্রকোনা প্রতিনিধি: নেত্রকোনায় নকল ব্যান্ডরোল যুক্ত অবৈধ বিড়ির রমরমা বানিজ্য করে সরকারকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মোঃ হাসানুজ্জামান সিনিয়র সহ-ব্যবস্থাপক (মার্কেটিং) আকিজ বিড়ি ফ্যাঃ লিঃ নেত্রকোনা, জেলা প্রশাসক নেত্রকোনা বরাবরে এই লিখিত অভিযোগ করেন। এবং এডিসি রাজস্ব, নেত্রকোনা, পুলিশ সুপার নেত্রকোনা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার নেত্রকোনা সদরসহ আটপাড়া, কলমাকান্দা, মদন-উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে অনুলিপি প্রদান করেন।
অভিযোগে জানা যায়, মিরাজ বিড়ি -রংপুর, আফিজ বিড়ি-রংপুর সহ বেশ কয়েকটি বিড়ি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নকল ব্যান্ডরোলযুক্ত অবৈধ বিড়ি বাজারজাত করে সরকারকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে.! অভিযোগের পর ২৪ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) জেলার কলমাকান্দা উপজেলার সিধলী বাজার থেকে নকল ব্যান্ডরোলযুক্ত প্রায় ১০ হাজার দয়াল বিড়ি ও ডিলার আলমগীরকে আটক করে সিধলী ফাঁড়ি পুলিশ।
পরবর্তীতে পুলিশ মুছলেখা নিয়ে বিড়িসহ তাদেরকে ছেড়ে দেয়। এব্যাপারে নেত্রকোনা কাষ্টমস অফিসকে জানানোর পরেও কোন ব্যাবস্থা নেয়নি।
২০১৮-২০১৯ ইং অর্থ বছরে ১৯ জুন পর্যন্ত বিড়ি বাবদ নেত্রকোনায় ৬ কোটি ৩ লাখ ১৪ হাজার টাকা রাজস্ব আদায় করে কাস্টমস নেত্রকোনা। যার মধ্যে আকিজ বিড়ি ফ্যাঃ লিঃ নেত্রকোনা ৫ কোটি ৮৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা রাজস্ব দিয়ে সরকারের সর্বোচ্ছ করদাতা হিসেবে সম্মাননা সনদ গ্রহণ করেন।
জানা যায়, মিরাজ বিড়ি (রংপুর), তারেক বিড়ি,মাস্টার বিড়ি(রংপুর),আফিজ বিড়ি (রংপুর), আজাদ বিড়ি , দয়াল বিড়ি (ভৈরব) স্টার বিড়ি ( রংপুর), আলম বিড়ি (কুষ্টিয়া), আলম বিড়ি (রংপুর) মমতা বিড়ি (রংপুর), যমুনা বিড়ি,রানী বিড়ি সহ বেশ কয়েকটি বিড়ি ফ্যাক্টরি এইসমস্ত নকল ব্যান্ডরোলযুক্ত বিড়ি ডিলারের মাধ্যমে নেত্রকোনা জেলার বিভিন্ন উপজেলার হাট-বাজার গুলোতে দীর্ঘদিন যাবত নকল ব্যান্ডরোলযুক্ত বিড়ি বাজারজাত করে আসছে।
৯ ফেব্রুয়ারী (রবিবার) নেত্রকোনা সদর উপজেলার কান্দুলিয়া এলাকায় ৪৫,০০০ ( পয়তাল্লিশ হাজার) নকল ব্যান্ডরোলযুক্ত মিরাজ বিড়ি (রংপুর) জনতা আটকের পর নেত্রকোনা রাজস্ব কর্মকর্তা মোঃ নবাব আলী আকন্দকে জানালে তিনি তা আটক করতে আপারগতা জানায়! পরে মিরাজ বিড়ির নেত্রকোনা মার্কেটিং অফিসার রঞ্জু জনতাকে হুমকি-ধমকি দিয়ে বিড়িগুলো নিয়ে যায়।
অভিযোগমূলে সরেজমিনে জানা যায়, উপজেলার হাটবাজারের বিভিন্ন বাজার ও দোকানগুলোতে মূল্যস্তর লঙ্ঘন করে নিন্মমানের তামাক আর র-মেটেরিয়াল ব্যবহার করে এই সমস্ত নকল ব্যান্ডরোলযুক্ত বিড়ি বিক্রয় করে কোটি কোটি টাকা সরকারকে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করছে। এক প্যাকেট বিড়ির জন্য একটি ব্যান্ডরোল এর ভেটসহ রাজস্ব দিতে হয় ০৭ টাকা ৫৮ পয়সা। প্রতি এক লাখ প্যাকেট নকল ব্যান্ডরোলযুক্ত বিড়ি ৭ লাখ ৫৮ হাজার টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে!
জানা যায়, ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা এই সমস্ত নকল ব্যান্ডরোল সরবরাহ করে থাকে। যা ব্যবহার করে বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের হাটবাজার গুলোতে লাখ লাখ প্যাকেট বিড়ি নিন্ম আয়ের ভোক্তাদের মাঝে বাজারজাত করে আসছে। প্রতি তিনমাস অন্তর অন্তর বিড়ির প্যাকেটে সতর্কীকরন ছবি বদলানোর নিয়ম থাকলেও তা প্রায় বিড়িতেই দেখা যাচ্ছে না.!
আকিজ বিড়ির সেল্স সুপার ভাইজার খায়রুল জানান, নকল বেন্ডরোলযুক্ত বিড়ি কম দামে বিক্রি করার করণে আমরা সরকারকে রাজস্ব দিয়েও আমাদের বিড়ি বিক্রি করতে পারছি না। নেত্রকোনা কাষ্টম অফিসে ঐসব বিড়ি ধরিয়ে দিলেও কাস্টমসকে যাতায়াতের টাকা দিতে হয় অন্যতায় তারা কর্নপাত করেন না। লাখ লাখ বিড়ি ধরেও তারা মামলা দায়ের করেন না। তাদের কাছে টাকা দিয়ে সবাই পার পেয়ে যায়। কাস্টমের উদাসীনতা আর তালবাহানায় এই সমস্ত নকল ব্যান্ডরোলযুক্ত অবৈধ বিড়ি রমরমা বানিজ্যের কারনে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে নেত্রকোনা কাস্টমস অফিসে রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নবাব আলী আকন্দের সাথে কথা বল্লে তিনি বলেন, আমার লোকবল কম তাই আমরা সব কাজ করতে পারিনা। আমার বদলী হয়ে গেছে এখন আর কাজ করতে পারবনা।
আর এইসব নকল ব্যান্ডরোলযুক্ত বিড়ি বন্ধে তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের হস্তক্ষেপ কামনা করেন সাধারণ ভোক্তা ও অভিযোগকারী প্রতিষ্ঠান।