মোঃ আলী সোহেল, কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :
১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস, বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল দিন। দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মধ্যদিয়ে ১৯৭১ সালের এই দিনে আমরা পেয়েছি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ, নিজস্ব মানচিত্র ও লাল-সবুজের পতাকা। মহান বিজয় দিবসের এই মাহেন্দ্রক্ষণে বিনম্র চিত্তে স্মরণ করছি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নির্যাতিতা মা-বোনদের, যাঁদের মহান আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছিলো বিজয়ের রক্তিম সূর্য। গৌরবোজ্জ্বল বিজয় অর্জনের চিরস্মরণীয় এই দিবসে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের সকল বীর শহীদদের স্মরণে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস-২০২৪ বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে থানা প্রাঙ্গণে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে বিজয় দিবস উদযাপনের শুভ সূচনা করা হয়।
অন্যান্য কর্মসূচীর অংশ হিসেবে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি ভবন সমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
সকাল ৮টার দিকে ক্রমান্বয়ে উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, উপজেলা ও পৌর বিএনপিসহ এর অঙ্গ সংগঠন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কুলিয়ারচর সরকারি কলেজ, কুলিয়ারচর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, কুলিয়ারচর প্রেসক্লাব, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, উপজেলা দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, আবাসিক প্রকৌশলী, বেগম নূরুন্নাহার পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, জাকের পার্টি, আনসার ভিডিপি, বড়খরচর আদর্শ গ্রাম, প্রতিবন্ধী সেবা সংস্থা সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উপজেলা সরকারী কর্মজীবী কল্যাণ পরিষদ, বাংলাদেশ প্রথমিক শিক্ষক সমিতি, পপুলার মেডিকেল সেন্টারে, গ্রীন লাইফ জেনারেল হাসপাতাল, আল রাজ্জাক ডিজিটাল জেনারেল হাসপাতাল, সামাজিক সংগঠন, বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এর পক্ষ থেকে পৃথক পৃথক ভাবে কেন্দ্রীয় শহীদ সেলিম স্মৃতি সংসদ প্রাঙ্গনে স্বাধীনতা স্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা পরিষদের প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবিহা ফাতেমাতুজ্-জোহরা, উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মো. রাকীন মাশরুর খান ও তাঁর সহধর্মিণী নুঝাত তাসনিম দৃষ্টি, উপজেলা বিএনপির সভাপতি নূরুল মিল্লাত, সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. শাহাদাত হোসেন শাহ্ আলম, কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হেলাল উদ্দিন পিপিএম, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মো. এনামুল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম (অব.), বীর মুক্তিযোদ্ধা সালাহ উদ্দিন নান্টু, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাইয়ুম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আকবর খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা এ.এফ.এম আমান উল্লাহ, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আদনান আক্তার, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক, সাংবাদিক এডভোকেট মুহাম্মদ শাহ্ আলম, মো. নাঈমুজ্জামান নাঈম, মুহাম্মদ কাইয়ুম হাসান, মো. আনোয়ারুল হক আমান, আলি হায়দার, ফারজানা আক্তার, মো. সবুজ মিয়া সহ স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গ, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকতা-কর্মচারী, শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ।
সকাল ৯টার দিকে থানা সংলগ্ন মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন উপজেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবিহা ফাতেমাতুজ্-জোহরা। পরে থানা মাঠে দিনব্যাপী চারু, কারু ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত শিল্প-পণ্যের বিজয় মেলা পরিদর্শন করেন অতিথিবৃন্দ।
পরে থানা মাঠ সংলগ্ন শহিদ হুমায়ুন কবিরের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে বীর মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত এবং জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
সকাল ১১টার দিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর ২ টার দিকে হাসপাতাল ও এতিমখানায় উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। বিকালে থানা মাঠে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ (উপজেলা প্রশাসন, কুলিয়ারচর ও বীরমুক্তিযোদ্ধা সম্মিলিত একাদশ বনাম কুলিয়ারচর পৌরসভা ও সুধীজন সম্মিলিত একাদশ) এর আয়োজন করা হয়।
এছাড়া, স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (স্কুল, কলেজ, ও মাদ্রাসা) ছাত্র-ছাত্রীদের অংশ গ্রহনে দিবসটি উদযাপন করা হয়।