রংপুরে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে বিশেষ করে গ্রামগঞ্জের একেবারেই প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষেরা। কেউবা প্রতারিত হচ্ছে লোভে কেউ বা প্রতারিত হচ্ছে প্রতারকদের অভিনব কায়দায়। কোনো কিছু বুঝে ঊঠার আগেই লাপাত্তা হচ্ছে সেই চক্র। অবশেষে বিচারের বানী কাঁদে নিভুর্তে ঐ ইউনিয়ন কিংবা গ্রাম্য শালিশের মধ্যেই। কেনো না আদালত কিংবা থানা পর্যন্ত যাওয়ার পথ খুজে পায় না তাঁরা এসব প্রতারক চক্র বাহিনীর কর্মকান্ড থেকে। অথবা তাদের এই প্রতারিত হওয়ার গল্পটাও থেকে যায় লোক চক্ষুর অন্তরালে।
আসলে কে শোনে কার কথা। বলছি রংপুরের গঙ্গাচড়া কোলকোন্দ ইউনিয়নের এক নতুন নারী উদ্যোক্তার কাহিনী। সরজমিনে জানা যায়,মিতু বেগম থাকেন সন্তান স্বামী নিয়ে চর বিনবিনিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে। করেন সেখানকার স্থানীয়দের নিয়ে সমাজের ঝড়ে পড়া মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে কিছু করার। কৃষি থেকে শুরু করে দেখা শুনা করেন অসহায় সহজ সরল এই মানূষদের। বিপদে হাতটি বাড়িয়ে দেন যেকোনো সময়। তাই তো তিনি চরাঞ্চলে পরিচিতি পেয়েছে মিতু আপা নামে। আর এই পরিচিতিটাই কাল হয়ে দাঁড়ালো তাঁর হাতে গড়া খামারের স্বপ্নের। প্রতারক চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেলেন তিনি। কোথা থেকে কি হয়ে গেলো কিছুই বুঝতে পেলেন না এই নারী উদ্যোক্তা মিতু বেগম।
তাঁর সাথে কথা হলে তিনি জানান,স্বল্প সুদে সরকারী ব্যাংকে ঋণ পাওয়ার আশায় প্রতারক চক্রের সাথে পরিচয়।তাদের কথা বার্তা সব কিছু বিশ্বাস করেই আজ আমি নিঃস্ব। ঋণের জন্য সোনালী ব্যাংকে একাউন্ট খুলে দীর্ঘ এক মাস লেনদেন করে একটা মোটা অংকের টাকা একাউন্টে রেখে দিতে বললেন সাত দিনের জন্য। এরেই মাঝে বাসায় এসে লোনের জন্য সব কাগজ পত্র প্রস্তুত করে প্রতারক চক্রের মুলহোতা পাশের গ্রামের রমজান খলিল ও লালমনিরহাটের এনজিও কর্মী মামুন। অবশেষে লোন পাওয়ার জন্য আমার সেই একাউন্টের ব্লাঙ্ক চেকের পাতা নিয়ে সব কিছু রেডি বলে চলে যায় তাঁরা। এর পরের দিনেই মোবাইলে ম্যাসেজ আসে আপনার একাউন্ট থেকে সাড়ে ছয় লক্ষ টাকা উঠানো হয়েছে। পরক্ষনে ঐ প্রতারক চক্রের মোবাইলে ফোন দিলে আর সাড়া পাওয়া যায় নাই।
মিতুর মতো চর বিনবিনিয়ার রুহুল,আতিয়াররহমান,আতিকুল,শফিকুল,আব্দুল আজিজ ছাড়াও কয়েকজন গ্রামের কৃষকের সাথে কথা হয়। তাঁরা জানান তাদেরকেও একই অভিনব কায়দায় লাখ লাখ টাকা এই প্রতারকরা প্রতারণা করে ব্যাংক থেকে তুলে নিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ঐ গ্রাম থেকে ঋণের কথা বলে অর্ধকোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে প্রতারক চক্রের মুলহোতারা।
চর বিনিবিনিয়ার ষাট উর্ধ আনোয়ার মিয়ার সাথে কথা হয়। তিনি জানান এবছর বন্যার সময় রমজানের গোডাউনে ২১০ মন ভুট্রা রেখেছিলাম। সেটাও সে আমাকে না জেনে বিক্রি করে টাকা নিয়ে পালিয়েছে। আমি এখন নিঃস্ব।আত্মহত্যা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
এব্যাপারে ঐ ইউনিয়নের ওয়ার্ড মেম্বার মনোয়ার হোসেন জানান, শালিশ বৈঠকে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে রমজান ও তাঁর বাবা তালেব মিয়া বাড়ী থেকে লাপাত্তা হয়েছে। খলিল এখনো বহাল অবস্থায় গ্রামেই আছেন করছেন ব্যবসা। আর এক প্রতারক মামুন চালাচ্ছেন তাঁর গ্রামের বাড়ী লালমনিরহাট শাপ্টি বাড়ীতে রমরমা দাদন ব্যবসা। এর বিচার চান তিনি।সব কিছু শেষ হওয়ার পরে এই প্রতারকদের নামে বাদী হয়ে মামলা করে আদালতে মিতু বেগম।
এব্যাপারে মুঠো ফোনে রংপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোঃ ইফতে খায়ের আলম এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এবিষয়ে গঙ্গাচড়া থানায় কোনো অভিযোগ আসে নাই। অভিযোগ আসলেই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
তবে লাপাত্তা হওয়ার পর থেকে প্রতারক বাবা ছেলের মুঠোফোন গুলো বন্ধ। কিন্তু রংপুর ছেড়ে অন্য কোথাও নতুন প্রতারনার দোকান খুলবেন কীনা তা খতিয়ে দেখার দাবি গঙ্গাচরার চর বিনবিনিয়া এলাকাবাসীর।#