মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সিরাজুল আলম খান দাদাভাই ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। খবর বাপসনিঊজ।গত শুক্রবার (৯ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক শোক বার্তায় দাদা ভাইয়ের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীগের পক্ষথেকে সাবেক এমপি আনিসুজজামান খোকন,এমএ সালাম ,আবু জাফর মাহমুদ,এডভোকেট মজিবুর রহমান,সিকদার গিয়াসঊদিদন ,আবু তালেব,রিমন ইসলাম,সিনিয়র সাংবাদিক হাকিকুল ইসলাম খোকন,মোঃনাসির,এবিএম সালেহঊদদীন ,হেলাল মাহমুদ,সামসুঊদদিন আহমেদ শামীম,হাজী আনোয়ার হোসেন লিটন ,এম জেড ফয়সল,নজরুল ইসলাম,ফিরোজ মাহমুদ এবং আয়েশা আক্তার রুরি প্রমুখ ।শোক বার্তায় নেতৃবৃনদ মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
তারা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী সিরাজুল আলম খানের অবদান জাতি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।
সিরাজুল আলম খান দাদা ভাই
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ৯ জুন শুক্রবার তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত সাবেক ছাত্রনেতা ও রাজনীতিবিদ। তিনি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে ‘নিউক্লিয়াস’ গঠন করেন। নিউক্লিয়াস ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’ নামেও পরিচিত। এছাড়াও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ গঠন এবং ‘৭ নভেম্বর ১৯৭৫’ এর নেপথ্য পরিকল্পনাকারী ছিলেন।
সিরাজুল আলম খানের জন্ম নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার আলীপুর গ্রামে। তিনি ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন, গৃহিণী। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। স্থানীয় স্কুলে কিছুদিন লেখাপড়া করে চলে যান বাবার কর্মস্থল খুলনায়। ১৯৫৬ সালে খুলনা জিলা স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেন। তারপর ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৫৮ সালে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হন। গণিতে স্নাতক ডিগ্রি নেয়ার পর তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয় ‘কনভোকেশন মুভমেন্টে’ অংশগ্রহণ করার কারণে। প্রতিদিন রাত করে হলে ফিরতেন। ফলে হল থেকেও একবার বহিষ্কৃত হন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করায় তার পক্ষে মাস্টার্স ডিগ্রি নেয়া সম্ভব হয়নি।
১৯৬১ সালে ছাত্রলীগের সহ সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৬৩ সালে সিরাজুল আলম খান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। জাতীয়তাবাদী চেতনাকে বিকশিত করে বাংলাদেশিদের স্বাধীন জাতীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে ৬২ সালে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে যে নিউক্লিয়াস গড়ে উঠে তিনিই ছিলেন তার মূল উদ্যোক্তা। এই নিউক্লিয়াসের সদস্য ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদ। তারপর মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত এই নিউক্লিয়াসের মাধ্যমে সকল কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। ছয় দফার সমর্থনে জনমত গঠনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন সিরাজুল আলম খান। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাতিল ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করতে প্রধান ভূমিকা পালন করেন।
১৯৭১ সনে স্বাধীনতার পর আন্দোলন-সংগ্রামের রূপ ও চরিত্র বদলে যায়। গড়ে ওঠে একমাত্র বিরোধী দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ। ১৯৭৫ সনের ৭ই নভেম্বরে অনুষ্ঠিত ‘অভ্যুত্থান’ বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসে এক ঘটনা। জাসদ গঠন এবং ‘অভ্যুত্থান’ এর নেপথ্য পরিকল্পনাকারী ছিলেন সিরাজুল আলম খান। আর এই দুটি বৃহৎ ঘটনার নায়ক ছিলেন মেজর জলিল, আ স ম আবদুর রব এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু তাহের।
সিরাজুল আলম খান ভিন্ন ভিন্ন তিন মেয়াদে প্রায় ৭ বছর কারাভোগ করেন। কনভোকেশন মুভমেন্টের কারণে ১৯৬৩ সালের শেষদিকে গ্রেপ্তার হন। ১৯৭৬ সালে জিয়ার আমলে আবার গ্রেপ্তার এবং ১৯৭৯ সালে মুক্তি পান। ১৯৯২ সালে বিদেশ যাবার প্রাক্কালে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ২৪শে মার্চ সিরাজুল আলম খানকে গ্রেপ্তার করা হলে ৪ মাস পর হাইকোর্টের রায়ে মুক্তি পান।
সিরাজুল আলম খানের বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রী অঙ্ক শাস্ত্রে হলেও দীর্ঘ জেল জীবনে তিনি দর্শন, সাহিত্য, শিল্পকলা, রাজনীতি-বিজ্ঞান, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, সমাজবিজ্ঞান, পরিবেশ বিজ্ঞান, সামরিক বিজ্ঞান, মহাকাশ বিজ্ঞান, সংগীত, খেলাধুলা সম্পর্কিত বিষয়ে ব্যাপক পড়াশোনা করেন। ফলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের উপর গড়ে উঠে তার অগাধ পাণ্ডিত্য এবং দক্ষতা। সেই কারণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক নিযুক্ত হন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন রাজ্যের ওশকোশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৬-’৯৭ সনে। আর্থ-সামাজিক বিশেষনে সিরাজুল আলম খানের তাত্ত্বিক উদ্ভাবন বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়।
তার দীর্ঘ ৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে অসংখ্য ছাত্র-যুব নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক এক বিষ্ময়কর ব্যাপার। ব্যক্তিগত জীবনে সিরাজুল আলম খান অবিবাহিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান সংগঠক, রাজনীতির রহস্যপুরুষ সিরাজুল আলম খান (দাদাভাই) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯ জুন ২০২৩,শুক্রবার দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও সশস্ত্র যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ এই সংগঠককে বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়ে ছিল ।
গত ৭ মে রাত সাড়ে ১০টায় শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতার কারণে ঢাকার পান্থপথে শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সিরাজুল আলম খানকে। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে গত ২০ মে ঢামেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় তাকে। সিরাজুল আলম খান উচ্চ রক্তচাপসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। ছবিতে ডান থেকে ২য সিরাজুল আলম খান দাদা ভাইয়ের সাথে নিউইয়র্ক জেএফকে এয়ার পোটে বাথেকে সিনিয়র সাংবাদিক হাকিকুল ইসলাম খোকন.ফিরোজ মাহমুদ ,সিরাজুল আলম খান দাদা ভাই এবং হাজী আনোয়ার হোসেন লিটন ।ছবিঃবাপসনিউজ ।