সদ্য বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ব্যাপক সমালোচিত ও বিতর্কিত। বিতর্ক যেন তার পেছন ছাড়ছে না। গত ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দিতে চাপ দেওয়ার ঘটনায় জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে তার বিরুদ্ধে চলমান তদন্ত নতুন মোড় নিয়েছে।
জর্জিয়ার ঘটনাতেই ট্রাম্পের আরেকটি চাপ প্রয়োগের ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। তিনি জর্জিয়ায় ডাকযোগে আসা ভোটের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ট্রাম্পের নতুন একটি ফোনালাপের সূত্র ধরে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়, জর্জিয়ায় ডাকযোগে পাওয়া ভোট নিয়ে তদন্তের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাকে তখনকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সরাসরি ফোন করেছিলেন। ফ্রান্সিস ওয়াটসন নামের ওই তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে ছয় মিনিটের ফোনালাপে ট্রাম্প জর্জিয়ায় ডাকভোটে জালিয়াতি খোঁজার কথা বলেন।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের হাতে আসা ফোনালাপের রেকর্ডের সূত্র ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প বলেছেন, জর্জিয়ার ভোটে তিনি জয়ী হয়েছেন। জো বাইডেন জয়ী হওয়ার ফলাফল এলেও ট্রাম্প বলেন, জর্জিয়ায় খারাপ কিছু ঘটেছে। তিনি কিছুতেই হারতে পারেন না।
তদন্ত কর্মকর্তাকে ট্রাম্প অনেক পুরোনো স্বাক্ষরের সঙ্গে প্রত্যেক ভোটদাতার স্বাক্ষর মিলিয়ে দেখার অনুরোধ করতে থাকেন। ট্রাম্প ওয়াটসনকে বলেন, জাল ভোট আবিষ্কার করে সঠিক ফল বের করে আনলে তিনি (ওয়াটসন) প্রশংসিত হবেন।
অঙ্গরাজ্য পর্যায়ের একজন নির্বাচনী তদন্ত কর্মকর্তা সরাসরি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ফোন পেয়ে হতভম্ব হয়ে পড়েন। তিনি বিনয়ের সঙ্গে ট্রাম্পকে বলেন, ‘আমি জানি, আপনি খুবই ব্যস্ত মানুষ। খুবই গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। আমাকে ফোন করেছেন দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি।’
ওয়াটসন ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে জানিয়েছেন, তখনকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বারবার বলতে থাকেন, তিনি দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন।
জর্জিয়ার ফুলটন কাউন্টিতে বাইডেন সর্বাধিক ভোট পেয়েছিলেন। ফুলটন কাউন্টির ডাকে আসা ব্যালট পেপার তল্লাশি করে জাল ভোট খোঁজার জন্য বলতে থাকেন ট্রাম্প। জালিয়াতির কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য না দিয়েই ট্রাম্প জাল ভোটের খোঁজর জন্য নির্বাচনী তদন্ত কর্মকর্তাকে চাপ দিতে থাকেন।
ওয়াটসন ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে বলেন, তিনি ট্রাম্পকে আশ্বস্ত করেন যে তার তদন্ত দলের পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রকৃত সত্য খুঁজে বের করার জন্য তারা কাজ করছেন।
জানুয়ারি মাসে জর্জিয়ার সেক্রেটারি অব স্টেটকে হোয়াইট হাউস থেকে ভিন্ন একটি ফোন করা হয়েছিল। এই ফোনে ট্রাম্প তার ভোটের খোঁজ পাওয়ার কথা বলেন। মাত্র ১১ হাজার বেশি ভোট পেলেই ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের চেয়ে তার ভোট বেশি হয়ে যায় বিধায় তিনি এই পরিমাণ ভোট খুঁজে পাওয়ার জন্য ফোনে চাপ দিতে থাকেন। ট্রাম্পের এমন ফোনের বিষয়টি নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট প্রথম সংবাদ প্রকাশ করে। এই সংবাদের জেরে নিন্দার মুখে পড়েন ট্রাম্প।
৩ নভেম্বরের নির্বাচনে হেরেছেন বলে এখনো মনে করেন না ট্রাম্প। তিনি ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা থেকে বিদায় নেন। তারপর তাঁর বিরুদ্ধে জর্জিয়ায় তদন্ত শুরু হয়। নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করেছিলেন ট্রাম্প। এ ধরনের চেষ্টা করা অপরাধ।
জর্জিয়ার নির্বাচন অফিস বিষয়টি নিয়ে এখনো তদন্ত করছে। এই তদন্তে নতুন করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে ফাঁস হওয়া ফোনকলের অডিও রেকর্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।