নওগাঁ জেলা ১১টি উপজেলাসহ সারাদেশে চাল, ভোজ্যতেল, গ্যাস পানিসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার সাথে সাথে অস্বাভা বিকভাবে বেড়েছে ডিমের দাম।
কিছুদিন স্বস্তিতে পার হওয়ার পর গত দুই-তিনদিন ধরে হালিতে বেড়েছে পাঁচটাকা থেকে ১০ টাকা। বর্তমানে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫৫ – ৬০ টাকা।
ডিমের মূল্যবৃদ্ধিতে প্রভাব পড়ছে দরিদ্র মানুষের আমিষের চাহিদা মেটানোতে। দ্রব্যমূল্যের বাজারে পরিবারের খাবার খরচ কমাতে যারা ডিম খাচ্ছিলেন, তাদের ঘাড়ের বোঝাটাও আরেকটু ভারী হয়েছে।গত কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রতি ডজন মুরগির ডিমের দাম খুচরায় ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে ১৭৫-
১৯০ টাকা হয়েছে। কোনো কারণ ছাড়াই কারসাজির মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা ডিমের দাম বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সাধারণ খেটেখাওয়া মানুষ।
বিক্রেতারা বলছেন, গত মাসেও প্রতি হালি ডিমের দাম ছিল ৪০-৪৫ টাকার মধ্যে। এর আগে কখনো কোনো ডিমের দাম এত বেশি হয়নি। খামার থেকে এখন ডিম কম আসছে। ডিমের সরবরাহ কম, এ কারণে দাম বেড়েছে। কম দামে আনতে পারলে ভোক্তাদের কম দামে ডিম দিতে পারব। তবে এ বছর মূল্যবৃদ্ধির হার অস্বাভাবিক।
এভাবে দাম বাড়ানো যুক্তিঙ্গত নয়। কোনো কিছুর দাম বাড়াতে হলে সুনির্দিষ্ট কারণ থাকতে হবে।জানা গেছে, ডিম শুধু দরিদ্র বা বিক্রেতারা নন, ডিম এখন প্রতিটি ঘরে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয়। সস্তা ও সহজলভ্য বিবেচনায় এমন পুষ্টি উপাদানে ভরপুর খাদ্য দ্বিতীয়টি আর নেই। এছাড়া যারা মাছ-মাংস কিনে খেতে পারছেন না, তাদের আমিষের চাহিদার বেশি অংশ এখন ডিম পূরণ করে। পাশাপাশি বিভিন্ন খাদ্যের প্রধান উপাদান হিসেবে শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রায় সব বয়সীদের কাছে জনপ্রিয় ডিম।বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) নওগাঁ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় হাট বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আকার ভেদে ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা দরে। সেই হিসাবে প্রতি হালি ডিমের দাম পড়ে ৫৫ টাকা থেকে ৫৮ টাকা।
নওগাঁ চৌমাশিয়া বাজার এলাকায়
কামাল মিয়া বলেন, /ডিম সবচেয়ে ভালো খাবার। সবার পছন্দ। কম দাম, পোষায় বেশি। ডিম ছিল বলে এ অভাবের সংসারে একবেলা ডিমেরঝোল-ভাত খাওয়ার সাধ মেটে। সেটাও বেড়ে গেলে আমাদের উপায় হবে কি! চৌমাশিয়া আদিবাসী গ্রামরর গৃহিনী বৃষ্টি ও লতা পাহান বলেন, কয়েকদিনের মধ্যে এক হালি ডিমের দাম ১০ টাকা বেড়ে গেছে! এত দামে আমি কখনো ডিম কিনিনি। সাশ্রয়ী দামে এই একটি খাবারই ছিল। সেটাও এখন অস্বাভাবিক চড়া। কী কারণে দাম বাড়ছে, সেটাও জানি না।বাসস্ট্যান্ড এলাকার কাঁচা বাজারে ডিম বিক্রেতা হাসান বলেন, এখন ডিমের দাম সবোর্চ্চ। জীবনে কখনো এত দামে ডিম বিক্রি করিনি। বর্তমানে পাইকারিতে প্রতি হালি ফার্মের মুরগির ডিম লালটা প্রতি হালি বিক্রি করছি ৫৫ টাকা। আমরা আড়ৎ থেকে ডিম আনি। এখানে খুচরা ও পাইকারি বিক্রি করি। কম দাম পেলে আমরা কম দামে বিক্রি করি। বেশি দাম পেলে বেশি দামে বিক্রি করি। ডিমের দাম কেন বাড়ছে সেটা বলতে পারব না। আড়তে জিজ্ঞেস করলে বলে সরবরাহ কমেছে। আসলে সরবরাহ কমেছে কি না জানি না।-
–ডিম বিক্রেতা মোস্তফা বলেন, আগে কখনো ডিমের দাম এত বেশি ছিল না। গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিনই ডিমের দাম বাড়ছে। এ কারণে ডিম কিনতে আসা প্রায় প্রত্যেক ক্রেতার সঙ্গে দাম নিয়ে বাগবিতণ্ডা হচ্ছে। দাম শুনে ফিরে যাচ্ছেন বেশির ভাগই। আমরা কী করব? পাইকারি বিক্রেতার এককথা, নিলে নেন, না নিলে নাই।-ডিম কিনতে আসা রফিক মিয়া বলেন, ডিমের বাজারে এখন খেলা চলছে। গত মাসের শেষের দিকে এক ডজন ডিম কিনেছি ১৪৫ -১৫০ টাকা করে।
আজ সেই ডিম কিনতে হচ্ছে ১৭০-১৮০ টাকায় ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে দাম বাড়াচ্ছে। বাজার মনিটরিং যদি ঠিক মতো হতে তাহলে সব কিছু নিয়ন্ত্রণে থাকতো। আসলে দেখার কেউ নেই। মরলে শুধু গরিব মরবে, তাতে কার কী? আসে যায় চৌমাশিয়া বাজার এলাকায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নওগাঁ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বলেন, ডিমের বিষয়ে আমরা কঠোর নজরদারি করতেছি, আমরা উৎস পর্যায়ে এটার খোজ খবর নিচ্ছি। কোন ধরণের অনিয়ম পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।#