নওগাঁর পতিসরে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মোৎসবে যাত্রাপালার নামে অশ্লীলতার প্রস্তুতি চলছে। যাত্রার পান্ডেল তৈরী কাজ শেষ। এখন মাইকিং চলছে। আর এ বিষয়ে স্থানীয় সচেতন মহলে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, গত ৮ মে নওগাঁ জেলা প্রশাসন ও সাংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের জাতীয় আয়োজন হিসেবে তিনদিনব্যাপী আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গ্রামীর মেলার মধ্য দিয়ে রবীন্দ্র জন্মোৎসব শেষ হয়। কিন্তু স্থানীয় কিছু ব্যাক্তি নিজেদের রবীন্দ্র ভক্ত দাবী করে আবারও রবীন্দ্র জন্মোৎবের নামে জেলা প্রশাসক বরাবর মাসব্যাপী মেলার আবেদন করেন। যেখানে গ্রামী যাত্রাপালা চালানোর জন্য বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃক নিবন্ধিত যাত্রা দল ” পদ্মা অপেরা” কানাই খালী, নাটোর যাত্রাপালা পরিবেশন করার কথা থাকলেও গত বছরের ন্যায় এই বছরেও যাত্রার নামে মেয়েদেরকে দিয়ে অশ্লীল নিত্য ও যাত্রা পরিবেশ করবে বলে প্রস্তুতি চলছে। তাই অশ্লীল যাত্রা পালা বন্ধ না হলে এলাকার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উপর অশ্লীলতার প্রভাব পরবে বলে মনে করছেন এলাকার সচেতন মহল।
এই বিষয়ে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের নওগাঁ জেলার প্রচার সম্পাদক মেহেদী হাসান অন্তর বলেন, রবীন্দ্র জন্মোৎসব শেষ হয়েছে তবুও স্থানীয় কিছু কথিত কিছু রবীন্দ্র ভক্ত জন্মোৎসবের নামে মাসব্যাপী মেলার আয়োজন করেছে যেখানে থাকবে অশ্লীল যাত্রাপালা। যেখানে তারা নিজস্ব সংস্কৃতির কথা বলে মেলার অনুমতি নিয়েছে প্রাশসনের কাছে থেকে সেখানে স্থানীয় পর্যায়ে যাত্রাপালা দল থাকার কথা এবং নিজস্ব সংস্কৃতির কথা তুলে ধরবে গণ মানুষের মাঝে। তা না করে তারা নাটোর থেকে যাত্রাপালার দল ভাড়া করে নিয়ে এসে গত বছরের ন্যায় এ বছর অশ্লীল ন্যাচ-গান পরিবেশনের প্রস্তুতি নিচ্ছে যা বর্তমান সমাজের জন্য হুমকি। রাতের বেলা ওইসব প্যান্ডেলে যাত্রাপালার নামে চলে অশ্লীল নৃত্য। রাত যত বাড়ে অশ্লীলতা তত বাড়ে। ওই সব যাত্রাপালার নামে অপসংস্কৃতি পরিবেশন করলে যুবসমাজের মধ্যে ভয়াবহতা দেখা দিবে। বেড়ে যাবে ইভটিজিং ও শ্রীলতাহানি মত ঘটনা।
স্থানীয় পতিসর গ্রামের আনোয়ার হোসেনসহ কয়েকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রায় ১ মাস হয়ে গেল সরকারি ভাবে তিন দিনব্যাপী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মোৎসব পালিত হয়েছে। তারপরও জেলা প্রশাসন কেন এই মেলার অনুমতি দিল জবাব চাই? অবৈধ টাকার বিনিময় ছাড়া এমন অনুমতি পাওয়া সম্ভব নয়। এলাকার ৯০ ভাগ মানুষ এই মেলার বিপক্ষে। যেখানে যাত্রার পান্ডেল করা হয়েছে তার ৩ শ গজ দূরেই হাফেজিয়া মাদ্রাসা আছে। সেখানে ২৪ ঘন্টা কোরআর তেলাওয়াত হয়। এই মেলা কমিটি গত বছর যাত্রাপালার প্যান্ডেলের ভিতর অশ্লীল নাচ গানের পাশাপাশি রাত ১২টার পর জুয়ার আসরও বসিয়েছিল। জুয়া খেলতে ছুটে আসতো বিভিন্ন জেলা উপজেলা সহ এলাকার মানুষ এবারো একই অবস্থা হবে যদি যাত্রা পালা চালানো হয়। আমরা এই আশ্লীল যাত্রাপালা বন্ধের দাবী জানাচ্ছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক যুবক জানান, সমাজের যুবকদের কথা ক’জনে ভাবে। আমি ২০-২৫ জন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াই। মেলার কারণে টিউশনি বন্ধ হওয়ার উপক্রম। গান বাজনার কারণে সন্ধ্যার পর টিউশনি করাইতে পারিনি গত বছর এ বছর যদি এমন মেলা ও যাত্রাপালা হয় স্থানীয় শিক্ষার্থীদের মাঝে লেখাপড়ার করার প্রবণতা কমে যাবে ।
আত্রাই থানার অফিসার ইনচার্জ( ওসি) মো:তারেকুর রহমান সরকার বলেন, ওখানে শুধু যাত্রাপালা হবে। জেলা প্রশাসন যেভাবে নির্দেশ দিয়েছে সেই দির্দেশনা কড়াকড়ি ভাবে পালনের জন্য উপজেলা প্রশাসন ও আমরা কাজ করছি। নির্দেশনা বাহিরে কোন কিছু হবেনা। অশ্লীল নৃত্য বা জুয়া কোনটায় হতে দেওয়া হবেনা।
জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান পিএএ জানান, মেলার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে কয়েকদিন সময় দেয়া হয়েছে। তবে সেখানে যদি জুয়ার আসর,অশ্লীল নৃত্য চলে, সেটি বন্ধ করে দেয়া হবে।আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কথা বলে ব্যবস্থা করছি