নওগাঁয় পুলিশ কর্তৃক আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সক্রিয় ১২ জন ডাকাত সদস্য গ্রেফতার, লুষ্ঠিত ট্রাকসহ ৩৪২ বস্তা চাল ও চাল বিক্রির নগদ ২ লাখ ১৬ হাজার ৪৫০ টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার বেলা ১১টায় নওগাঁ জেলা পুলিশ সুপার এর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক জানান, গত ২২মার্চ রাত আনুমানিক দেরটারদিকে নওগাঁ জেলা সদর উপজেলার বাইপাস সড়ক থেকে ৮ জন ডাকাত ট্রাকের চালক ও হেলপারকে বেঁধে রেখে একটি চাল বোঝাই ট্রাক ডাকাতি করেন। ট্রাকটি ৪শ’ বস্তা আতব চাল নিয়ে গাইবান্ধা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ যাচ্ছিল। যাওয়ার পথে রাত একটার পরে নওগাঁ সদরের বাইপাস সড়কের ইকরতারা নামক স্থানে পৌঁছলে ডাকাত দল রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে উক্ত ট্রাকটি থামিয়ে ড্রাইভার এবং হেলপারকে ট্রাক থেকে নামিয়ে রাস্তার পাশে মাঠের মধ্যে হাত পা বেঁধে রেখে দু’জন ডাকাত ট্রাকটি নিয়ে চলে যায়। প্রায় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা পর অপর ডাকাতরা ড্রাইভার এবং হেলপার’কে ফেলে রেখে চলে যায়। ভোরে ড্রাইভার এবং হেলপার কৌশলে তাদের হাতের বাঁধন খুলে পাশে লোকালায়ে গিয়ে বিষয়টি জানালে তারা সকালে ঘটনাটি পুলিশকে জানায়।
এ সংক্রান্তে নওগাঁ সদর মডেল থানা একটি মামলা দায়ের হলে নওগাঁ জেলা পুলিশ সুপার এর সার্বিক সহযোগীতা ও দিক নির্দেশনায় জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ গাজিউর রহমান পিপিএম এর নেতৃত্বে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফৌজিয়া হাবিব খান ও নওগাঁ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফয়সাল বিন আহসান এর নের্তৃত্বে পুলিশের চৌকস টিম ডাকাতদের সনাক্ত করার জন্য কার্যক্রম শুরু করেন।
এক পর্যায়ে বগুড়া জেলার শেরপুর থানার রানিরহাটে পরিত্যক্ত অবস্থায় ট্রাকটি উদ্ধার করা হয়। এরপর প্রযুক্তি এবং সোর্সকে কাজে লাগিয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয় যে, ডাকাতিকৃত চাল শেরপুর থানার একটি গোডাউনে আনলোড করা হয়েছে গত ২৮ মার্চ সেখানে অভিযান চালিয়ে ডাকাতিকৃত চালের দুই জন ক্রেতাকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ডাকাত সোহাগের বাড়ী থেকে ১০ বস্তা চাল এবং বগুড়া সদরের নিশিন্দারা হতে ২০ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও গত ২৯ মার্চ কাহালু থানা এলাকা থেকে শাজির উদ্দীন মন্ডল ওরফে মিলন ডাকাতকে গ্রেফতার করে তার কাছে থেকে ১১১ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়। এরপর ২৯ মার্চ ডাকাত জিয়াকে কাহালু থানা এলাকা থেকে এবং ৩০ মার্চ রাতে ডাকাত শাজাহান ওরফে লালন, মেহেদী এবং ইউসুফকে জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর থানা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
ডাকাত মেহেদী হাসান ও ইউসুফ বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
জেলা পুলিশ সুপার আরো বলেন, গতরাতে বগুড়া সদরে অভিযান চালিয়ে ডাকাত মাহফুজ, রাজু পালোয়ান এবং রতনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত রাজু পালোয়ানকে নিয়ে সিরাজগঞ্জ-এ অভিযান চালিয়ে ডাকাতিকৃত চাল বিক্রয়ের সাথে জড়িত হাটিকুমরুল এলাকার শরিফকে গ্রেফতার করে তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ১১১ বস্তা চাল বিক্রির নগদ ২ লাখ ১৬ হাজার ৪৫০ টাকা তার নিকট হতে জব্দ (উদ্ধার) করা হয়।
এছাড়াও গ্রেফতারকৃত ডাকাতদের কাছ থেকে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র হাসুয়া, দা, প্লাস ও হাতুড়ি উদ্ধার করা হয়।
উল্লেখ্য যে, দেশের বিভিন্ন জেলায় গ্রেফতারকৃত আসামী জিয়ার বিরুদ্ধে ডাকাতি সহ ৭টি, আব্দুল মজিদের বিরুদ্ধে ডাকাতি সহ ৪টি, মেহেদীর বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ ২টি, রতনের বিরুদ্ধে ডাকাতি সহ ৭টি এবং রাজু পালোয়ানের বিরুদ্ধে খুন-ডাকাতিসহ ৮টি মামলা রয়েছে।