রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জকে অঞ্চল ছাড়িয়ে আমের নতুন রাজধানী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁ। এঁটেল মাটির কারণে নওগাঁর আম সুস্বাদু হওয়ায় দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ইউরোপে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে ভরা মৌসুমে জেলায় আম সংরক্ষণের ব্যবস্থা গড়ে না তোলায় ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না বলছেন প্রান্তিক চাষিরা।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জেলায় ২৯ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে ৩ হাজার ৬২৫ হেক্টর বেশি। দুইবারের ঝড়ে আম ঝরে পড়ায় হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৫ মেট্রিক টন। এবার প্রতি কেজি আমের গড় মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ টাকা। সেই অনুযায়ী চলতি মৌসুমে ১ হাজার ৮৪২ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার আম বিক্রির সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
আরও জানা গেছে, জেলায় গোপালভোগ, হিমসাগর, আম্রপালি, বারি-৪, গৌড়মতি, ব্যানানা ম্যাংগো, কাটিমন, ল্যাংড়া, হিমসাগর, ফজলি, মিয়াজিকিসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের আম চাষ হচ্ছে।
জানা যায়, জেলায় আড়ম্বরপূর্ণ আমের মৌসুমে বাজার বসে সাপাহার উপজেলায়। এই বাজারের পার্শ্ববর্তী উপজেলা ধামইরহাট, পত্নীতলা, পোরশা এমনকি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে আম বিক্রি করতে আসেন এই বাজারে। এর ফলে বেশি পরিমাণ আম উঠে কিন্তু বাজারদর কমে যায়। এ ছাড়া উৎপাদিত আমের সংরক্ষণাগার ব্যবস্থা না থাকায় মধ্যস্বত্ব ভোগীদের কারসাজিতে ন্যায্যতা হারাচ্ছেন প্রান্তিক চাষিরা।
জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী, ২৫ মে থেকে জেলায় গুটি জাতের আম নামানোর মধ্য দিয়ে আম পাড়া শুরু হয়েছে। এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে নামানো হবে অন্যান্য জাতের আম।
সাপাহার উপজেলার সদর ইউনিয়নের আমচাষি আমজাদ বলেন, “আম একটি পচনশীল ফল। জেলায় যদি আম সংরক্ষণের জন্য হিমাগারের ব্যবস্থা থাকত, তাহলে সেখানে রেখে কিছুদিন পর বিক্রি করে লাভবান হতে পারতাম।”
উপজেলার আরেক আম চাষি রইচ বলেন, “সংরক্ষণাগার না থাকায় আম পাকা শুরু হলে দ্রুত আমাদের আম বিক্রি করে দিতে হয়। এ জন্য বাগানমালিকদের বাজারে কম দামে বিক্রি করতে হয়। এতে করে মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভের অংশ নিয়ে নেয়।”
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামছুল ওয়াদুদ জানান, এ বিষয়ে এখনো কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি। বেশ কয়েক বছর ধরে জেলায় আম চাষ হচ্ছে। যদি একটি হিমাগার স্থাপন করা যায়, তাহলে আম সংরক্ষণ করে চাষিরা সুবিধামতো সময়ে আম বিক্রি করতে পারবেন। এতে করে চাষিরা লাভবান হতে পারবেন।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান জানান, জেলায় প্রচুর পরিমাণে আম চাষ হয়েছে। আম সংরক্ষণের জন্য একটি আম সংরক্ষণাগারের প্রয়োজন। জেলার কৃষি বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।