শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ০৭:৪৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
শিরোনাম
নারী সমর্থ্য উন্নয়নে সুশিলন (স্বপ্ন প্রকল্প ২) আওতায় রাস্তা সংস্কারের কাজের শুভ উদ্বোধন। হাইকোর্টে প্রার্থিতা ফিরে পেলেন তাজুল ইসলাম তাজ। লক্ষ্মীপুরে দস্যুদের অত্যাচারে নিঃস্ব কৃষক কোটি টাকার ফসল লুট নেই কোন প্রতিকার ছাতকে দুর্বিন শাহের নামে সেতু ও পাগল হাসানের নামে চত্বরের প্রস্তাব সংসদে উত্থাপন তপস্বী দাকোপে চেয়ারম্যান ৬, ভাইস চেয়ারম্যান ৭ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানে ৫ প্রার্থীর মনোনয়ন দাখিল বগুড়া শেরপুরে বাংলাদেশ তাঁতী লীগের উপজেলা কমিটি গঠন রংপুরের মিঠাপুকুরে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের দায়ে যুবকের মৃত্যুদণ্ড পাঁচবিবিতে পুর্ব শত্রুতার জেরে কবুতর নিধনে সন্দেহ বকশীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে এমপি কন্যার সংবাদ সম্মেলন কুলিয়ারচরে এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ৫৫ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ শেরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় সাংবাদিক পুত্র নিহত কুড়িগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও সবুজ শিল্পায়ন বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
বিজ্ঞপ্তি :
বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রানালয়ে আবেদনকৃত।

সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা টিটিই শফিকুলকে নিয়ে গর্বিত তার বাবা মা-দৈনিক বাংলার অধিকার

অনলাইন ডেক্সঃ / ২৭৬ সংবাদটি পড়েছেন
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১২ মে, ২০২২, ৯:৫৬ পূর্বাহ্ণ

সম্প্রতি তিন যাত্রীকে বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণ করায় জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরিদর্শক (টিটিই) শফিকুল ইসলাম। এরপর এ ঘটনা দেশুজুড়ে আলোচিত হয়। ওই সময় বরখাস্ত হওয়ার পর রেলমন্ত্রীর এক নির্দেশে শফিকুল আবার কাজে যোগ দেন। বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের পর কাজে যোগ দিয়ে প্রথম’দিনেই বাজিমাত করেছেন শফিকুল ইসলাম। প্রথমদিনের দায়িত্ব পালনকালে বিনা টিকিটের যাত্রীদের কাছ থেকে ৪৯ হাজার ৯৫০ টাকা রাজস্ব আয় করেছেন।

গতকাল মঙ্গলবার ১০ মে খুলনা থেকে চিলাহাটিগামী আন্ত:নগর রূপসা এক্সপ্রেসের চারজন টিটিই দায়িত্ব পালন করেন। তাদের মধ্যে একজন ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) এর দায়িত্ব পালন করেন শফিকুল ইসলাম। এদিন বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন থেকে ট্রেনটি চিলাহাটির উদ্দেশে ছেড়ে যায়। তার আগে দায়িত্ব পালনে ট্রেনে ওঠেন শফিকুল।

তিনি চিলাহাটি স্টেশনে পৌঁছে সেখানকার বুকিং অফিসে জমা দেন ৯ হাজার ১৯০ টাকা। আর চিলাহাটি থেকে সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনে ফিরে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনের বুকিং অফিসে জমা দেন ৪০ হাজার ৭৬০ টাকা। আপ-ডাউন মিলিয়ে তিনি রাজস্ব আয় করেন ৪৯ হাজার ৯৫০ টাকা।

জানা যায়, শফিকুল ইসলামের বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজে’লার সারুটিয়া গ্রামে। এ গ্রামের রজব আলী শেখ ও শুকজান নেছার দম্পতির বড় ছেলে শফিকুল। ২ ভাই ১ বোনের মধ্যে শফিকুল বড় ছেলে। গ্রামে ১৪ শতক জমির ওপর টিনের তিন কক্ষের একটি ঘর। মাঠে নেই কোনো জমি। সারা দিন ক্ষেতখামা’রে কাজ করে যা আয় হয়, তা দিয়েই কোনো রকম সংসার চলে।

পরিবার জানায়, ছোট থাকতে অন্যের বাড়িতে বড় হয়েছেন শফিকুলের বাবা। বিয়ের পর ১৪ শতক জমি কিনে সেখানেই তিন রুমের একটি টিনের ঘর করে থাকেন। অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করে দুই ছে’লেকে মানুষ করেছেন। এক বেলা খেয়ে আরেক বেলা উপোস থেকে স্কুলে গেছে দুই ভাই। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই টিউশনি করতেন শফিকুল। তখন থেকে তার পড়াশোনার খরচ নিজেই চালিয়েছেন। বাবার ওপর কখনো বোঝা হতে হয়নি। নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি ছোট ভাইকেও লেখাপড়া করিয়েছেন টিউশনির টাকা দিয়ে।

শফিকুল নবগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১৯৯৯ সালে এসএসসি, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে ২০০৬ সালে মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিভাগে ২০১২ সালে অনার্স ও ২০১৩ সালে মাস্টার্স শেষ করেন। ই’স’লা’মী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিভাগে অনার্সে পড়া অবস্থায় চাকরি পান বাংলাদেশ রেলওয়েতে ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরিদর্শক (টিটিই) হিসেবে।

ব্যক্তিজীবনে এক মেয়ে ও এক ছেলের জনক তিনি। তার মেয়ে এবার ঈশ্বরদীর একটি স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী, আর ছেলে পড়ে ক্লাস ওয়ানে। স্ত্রী’ ও ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ঈশ্বরদী শহরের পূর্বটেংরি পাড়ার কেন্দ্রীয় গোরস্তানের পূর্ব পাশে ভাড়া বাড়িতে থাকেন তিনি। ৯ বছর ধরে সততার সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। চাকরির টাকা দিয়ে মাঠে এক শতক জমি তো দূরের কথা, বাবার ভিটায় একটা ভালো বাড়িও বানাতে পারেননি শফিকুল।

সরেজমিনে শফিকুলের বাড়িতে গেলে গণমাধ্যমের কাছে কথাগুলো বলছিলেন আলোচিত টিটিই শফিকুল ইসলামের বাবা রজব আলী শেখ।বাড়িতে ঢুকতেই দেখা যায়, তার বাবা মাঠ থেকে কাজ শেষে বাড়ি ফিরে ছাগলের জন্য ঘাস কাটছেন। তার মা ঘরদোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছেন। বাড়িতে দুজন ছাড়া আর কোনো সদস্যকে দেখা যায়নি। তাদের টিনের তিন রুমঅলা একাট ঘর রয়েছে। এ ছাড়া আর কিছুই নেই।শফিকুলের বাবা রজব আলী শেখ জানান, বাড়ির জমি মাত্র ১৪ শতক। মাঠে নিজের কোনো জমি না থাকায় পরের জমিতে কা’মলার কাজ করে সংসার চালাতেন। এখন অন্যের জমি ইজারা নিয়ে চাষবাদ করেন। পাশাপাশি গরু-ছাগল লালনপালন করেন।

ছেলে শফিকুলের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জানান, ছেলেকে পড়ালেখা করানোর কোনো সাম’র্থ্য ছিল না তার। তাই ছোট থেকে টিউশনি করতে হয়েছে শফিকুলকে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেলেও ভর্তির টাকা দিতে পারেননি তিনি। কিন্তু হাল ছাড়েননি শফিকুল। তাই দিনরাত ৪টি

রজব আলী শেখ বলেন, হঠাৎ চাকরি থেকে বরখাস্তের খবরে আমরা কোনো টেনশন করিনি। কারণ, আমি জানি আমার ছেলে কোনো অন্যায় করেনি। সে তার ডিউটি সে পালন করেছে। কিন্তু আমাদের দুঃখ একটাই, আমার সৎ ছেলেকে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়েছে। তাকে নিয়ে আমিসহ গ্রামের সবাই গর্ব করি। শফিকুল আমাদের গর্বের সন্তান। তার কাজে আম’রা খুশি।

শফিকুলের মা শুকজান নেছা বলেন, আমার ছেলে মানুষের সঙ্গে কখনো খারাপ ব্যবহার, খারাপ কথা বা মারামারি করে মানুষ হয়নি। গ্রামের কোনো মানুষ তাদের খারাপ বলবে, সে সুযোগ দিইনি। আমার ছেলে খুব কষ্ট করে পড়ালেখা করেছে। শফিকুল লেটারসহ এসএসসি পাস করার পর বিভিন্ন কলেজের স্যাররা আমার ছেলেকে কলেজে নেওয়ার জন্য বাড়িতে আসেন। শেষে চেয়ারম্যানসহ সবাই অনেক অনুরোধ করেন। ছোট থেকেই আমার ছেলে অনেক সৎ।

এ সময় প্রতিবেশী সাইফুল জানান, শফিকুলের বাবা পরের বাড়িতে কাজকর্ম করেন। সন্তানদের কোনো দিন ভালো পোশাক-আশাক দিতে পারেননি। তারা শুধু ভালো ছাত্র ছিল এবং টিউশনি করে নিজে লেখাপড়া করেছে বিধায় এই পর্যায়ে আসতে পেরেছে। একটা সরকারি চাকরি করতে পারছে। কিন্তু একজন টিকিট না কে’টে ট্রেনে উঠেছে, সে জানতে চাওয়ার কারণে তাকে সাময়িক বরখস্ত করা হয়। তার সঙ্গে যে কাজটি করা হয়েছে, সেটা অন্যায়। সে যদি অসৎ হবে, তাহলে তাদের এই বাড়িঘর থাকার কথা না। তারা এখনো মাঠে এককাঠা জমিও কিনতে পারেনি। শুধু শফিকুল সৎ বলেই তার এই সাময়িক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।


এ বিভাগের আরও সংবাদ

আর্কাইভ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর
Don`t copy text!
Don`t copy text!