ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার ৯নং শুভপুর ইউনিয়ন দক্ষিণ বল্লভপুর গ্রামে কৃষ্ণ কুমার জেলে বাড়ী ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক বাহিনী, আলবদর, রাজাকারদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ঐ বাড়ীর অনেকে পালিয়ে যায়। কিন্তু দেশের টানে থেকে যায় কৃষ্ণ কুমার বাড়ীর জোগল চন্দ্র দাসের পরিবার।
ভিডিও ফুটেজ
দেশ স্বাধীন হয়, নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করে জোগল’র পরিবার। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যায় নেমে আসে দেশে অন্ধকার।
আর এই অন্ধকারময় সময় ছাগলনাইয়া বল্লভপুর গ্রামের হিন্দু পরিবারদের সম্পত্তি দখলের মহোৎসব নামে ঐ এলাকার কতিপয় কিছু মানুষ রূপি জানোয়ার।
সময় চলে যায়, ধীরেধীরে ভূমি খেকো পরিবারটি পুরো জেলে বাড়ী দখলের খায়েশ জাগে।
কেউ নেই এখন বেঁচে আছে শুধু কৃষ্ণ কুমার দাসের ছেলে জোগেল চন্দ্র দাসের পরিবার। অসহায় পরিবারটি কতটা মানবেতর পরিবেশে জীবনযাপন করে তা নিজ চোখে দেখলে বুঝা যাবে।
আব্দুর সক্কুরের গংরা বর্তমানে মিনা রানীকে বাড়ী থেকে উচ্ছেদ করার নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করে ক্ষন্ত হননি, বাড়ীর প্রবেশ পথে গেইট ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে মিনা রানী’র পরিবারকে গৃহবন্দী করে রেখেছেন বলে জানান মিনা রানী।
দৈনিক বাংলার অধিকারের একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মিনা রানীর পরিবার সোমবার বিকালে ৯৯৯ কল দিয়ে পুলিশকে জানালে তাতে ও তেমন কাজ হয়নি।
পুলিশ এসে দু’পক্ষ’কে আদালতে আশ্রয় নিয়ে সমাধান করতে বলেন।
এবিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাঁধা দিলে তাদেরকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে পুনরায় জায়গা জমিন দখলে ব্যাস্ত ছিল ভূমিদস্যুরা।
২০০১ সালে জালিয়াতির মাধ্যমে জমি ক্রয়ের কথা বলে মালিক দাবি করে আব্দুর সক্কুরের পরিবার জেলে বাড়ীতে আসে।
আসার পর কথা হয় মীনা রানীর সাথে মিলেমিশে থাকার। কিন্তু অসহায় মিনা রানী বুঝে নাই সেদিনের কথা। আজ তাকে বাড়ী থেকে উচ্ছেদ করার ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে আবদুর সক্কুরের ছেলে ভূমিদস্যু আজিজুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম ও নুরুল ইসলাম।
২০০১ সাথে অল্পস্বল্প বাঁধা দিয়ে ছিল। কিন্তু তাতে আরো বিপদ হয়েছে। আব্দুর সক্কুর পরিবার ২০০১ সালে বিএনপি জামাত পন্থী হওয়া’তে মিনা রানীকে কোনঠোষা করে রাখেন।
২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতা আসার পর মিনা রানী বুকে আশার প্রদীফ জ্বলে উঠে।
কিন্তু একপর্যায়ে ২০১৪ সালে আগষ্ট মাসের ১৬ তারিখে আপোষনামা করেন আব্দুর সক্কুর গং ও মিনা রানীর পরিবার।
আপোষনামায় লিখা হয়, মীনা রানীকে ৬ ডিসিম জায়গা, ঘর নির্মাণ, নগদ ৩ হাজার টাকা দিয়ে দিবে আব্দুল সক্কুর গং।
এই মর্মে আপোষনামা সাক্ষর করেন দুইপক্ষ। কিন্তু সময় গড়িয়ে যায়। আব্দুর সক্কুর পরিবার এই আপোষনামা তোয়াক্কা না করে পুনরায় মেতে উঠে ভূমি দখলের।
এই যদি হয় হিন্দু অসহায় মীনা রানীর পরিবারের অবস্থা তাহলে দেশও জনগনের কি হবে। মিনা রানীর পরিবারের সদস্য সংখ্যা বর্তমানে মোট ৩ জন। একমাত্র ছেলে সিএনজি চালক রতন কুমার দাস। মীনা রানী জীবিকার তাগিদে মানুষের বাড়ীতে কাজ করেন।
আব্দুর সক্কুরের পরিবারে বর্তমানে রফিকুল ইসলাম, আজিজুল ইসলাম, নূরুল ইসলাম সহ আরো দুই ভাই রয়েছে।
এবিষয়ে জানাতে চাইলে দৈনিক বাংলার অধিকারকে মীনা রানী ও তার পরিবার কান্না কন্ঠে বলেন – আমাদের এখন একটুও জায়গা নাই, সারাক্ষণ ভয়ের মধ্যে থাকি। আমরা ফেনী ১ ও ২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য, ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়ের দৈনিক বাংলার অধিকার এর নিকট আকুল আবেদন জানাচ্ছি আমাদের সম্পত্তি আমাদের ফিরিয়ে দিতে সাহায্য করেন।
শুভপুর ইউনিয়ন পরিষদ এর চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ সেলিম দৈনিক বাংলার অধিকার কে বলেন” বহুবছর আগে থেকে জেলেদের বসবাস। কিন্তু আব্দুল সক্কুর গং ১৯৭৫ সালে একটা ভূয়া দলিল করে জায়গা দখল করে।
জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, সাংবাদিক সবাই এগিয়ে আসলে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। মাননীয় সরকার বাহাদুর নিকট আর্জি করি সরকার যেন এই অসহায় হিন্দু পরিবারদের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের সমস্যা সমাধান করেন।
শুভপুর ইউনিয়ন পরিষদ এর চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ সেলিমের সাথে একই সূর মিলেয়ে ঐ ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বাচ্চু মেম্বার বলেন, আমরা সমাধান করতে গিয়ে মামলার শিকার হই। আমরা চাই এই সমস্যা অচিরেই সমাধান হোক।
আব্দুর সক্কুরের ছেলে নূরুল ইসলাম বলেন আমরা আমাদের পৈতৃক সম্পত্তিতে রয়েছি। এই সব অভিযোগ মিথ্যা। রাস্তা বন্ধ করে গেইট নির্মাণ বিষয় জানতে চাইলে নূরুল ইসলাম বলেন, গেইট সবসময় খোলা থাকবে। যাতায়াতের কোন সমস্যা হবে না।
এলাকাবাসী চায় সরকার’র সুদৃষ্টি দিয়ে এই বিষয়টি অচিরে সমাধান করে অবহেলিত হিন্দু পরিবারটিকে বাঁচিয়ে তুলবেন।
প্রথম পর্ব ১