শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ১২:৩৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম
শিরোনাম
লক্ষ্মীপুরে ব্যবসায়ী বসতঘরে হামলা-ভাঙচুর, আহত -৩ প্রকাশ পেল ‘প্রেম শিকলে বাইন্ধা রে মন’ জাস মান্নাত এবার মিউজিক্যাল ফিল্মে তানিনের ‘ব্যাড গার্লস’ আমিরাতের সারজায় ইউনুছ গণি চৌধুরীর সমর্থনে হাটহাজারীবাসীর জনসভা আমিরাতের সারজায় ইউনুছ গণি চৌধুরীর সমর্থনে হাটহাজারীবাসীর জনসভা ২৫ দিনেও সন্ধান মেলেনি নিখোঁজ স্কুল ছাত্রী মেঘলার টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা পাঁচবিবিতে প্রেসিডেন্ট’স্ স্কাউটস্ অ্যাওয়ার্ড প্রস্তুতি ক্লাস অনুষ্ঠিত ফরিদপুর মটর ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের ‌ ত্রিবার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত স্মাট উপজেলা গড়তে জনগণ আমাকে ভোট দিবে : অধ্যক্ষ নাদিয়া নূর (তনু) জাবির লেকে দৃষ্টিনন্দন পদ্ম ঘিরে ভ্রমণ পিপাসুদের উন্মাদনা সীতাকুণ্ডে সাত বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনায় মামলার আসামী গ্রেপ্তার নবীনগরে হয়রানির আরেক নাম ইউএনওর সিএ কামরুল ৬১ কেজি গাঁজা উদ্ধার করেছে র‍্যাব-১৪ সিপিসি-২ ভৈরব ক্যাম্প
বিজ্ঞপ্তি :
বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রানালয়ে আবেদনকৃত।

মুক্তিযুদ্ধে দেশি বিদেশী গণমাধ্যম কর্মীদের ভূমিকাও ছিল অবিস্মরণীয়-দৈনিক বাংলার অধিকার

ঝনুক মালা, / ৫৩৯ সংবাদটি পড়েছেন
প্রকাশ: সোমবার, ২৯ মার্চ, ২০২১, ৮:২৯ অপরাহ্ণ

৭১-এর ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির এক অবিস্মরণীয় বিষয়। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে বাঙালি অর্জন করেছিল এক অসাধারণ বিজয়। আর এই বিজয়ের পেছনে ছিল সমস্ত বাঙালির লৌহদৃঢ় ঐক্য, মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব, দেশি বিদেশি গণমাধ্যমের ইতিবাচক ভূমিকা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা।

বিশেষ করে দেশি বিদেশি গণমাধ্যম যে সাহসিকতাপুর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে যা বিশ্বজনমত গঠনে ব্যাপক সাড়া জাগায়, উজ্জীবিত করে মুক্তিযোদ্ধাদের। পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা, নারী ধর্ষণ, নৃশংস বর্বরতা, ধ্বংসযজ্ঞ, শরণার্থীদের দুর্ভোগ বহির্বিশ্বে তুলে ধরায় বিশ্ববাসী মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ঘটনা জানতে পেরেছিল। এতে বাংলাদেশর স্বাধীনতা অর্জন ত্বরান্বিত হয়েছিল। দেশি বিদেশি প্রচার মাধ্যমে বিশেষ করে তৎকালীণ রেডিও’র বিভিন্ন খবর, কথিকা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা ও সাহস জুগিয়ে বিজয়ের পথ সুগম করে।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পরই নিরস্ত্র বাঙালির যুদ্ধের খবর ঢাকা ও চট্রগ্রাম থেকে প্রকাশিত সব সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়েছিল।

ঢাকা বেতার থেকেও খবর প্রচার হচ্ছিল। কারণ, তখন বেতারই ছিল একমাত্র ভরসা। ফলে নগর বন্দর গ্রামে অপ্রতিহত গতিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বিদেশি সংবাদ মাধ্যমগুলোও বুঝতে পারে পূর্ব পাকিস্তানে কিছু একটা হতে চলেছে। তাই তারা তাদের সংবাদকর্মীদের পাঠাতে শুরু করে তৎকালীণ পূর্ব পাকিস্তানে। এদের বেশিরভাগই ২৫ মার্চ অবস্থান নেন তৎকালীণ হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে যা এখন হোটেল শেরাটন নামে পরিচিত। এদের মধ্যে ছিলেন, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, সোভিযেত ইউনিয়ন এবং জাপানের প্রায় ৪০ সাংবাদিক।

২৫ মার্চ গণহত্যা শুরুর প্রাক্কালে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বিদেশি সব সাংবাদিককে হোটেলে অবরুদ্ধ করে রাখে। দেশের খবর যাতে বহির্বিশ্বে জানতে না পারে সেজন্য সব বিদেশি সাংবাদিকদের দেশ ত্যাগের নির্দেশ দেন। কিন্তু বেশ কিছু বিদেশি সাংবাদিক এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে হোটেলের ছাদে ওঠে ঢাকার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন এবং কেউবা রাতের আঁধারে খবর সংগ্রহে বেরিয়ে পড়েন। তারা ছবিসহ খবর সংগ্রহ করে তা লিখে বিদেশগামী বিমানে বিভিন্ন যাত্রির মাধ্যমে নিজ নিজ দেশের পত্রিকায় পাঠান। ২৬ মার্চ থেকে কোলকাতা আকাশবাণী, বিবিসিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্বসহ গণহত্যার বিবরণ প্রচার করতে থাকে।

৭১-এর ২৮ মার্চ লন্ডনের ‘দ্য অবজারভার’ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। একটি প্রতিবেদনে লেখা হয়, ‘রাশিয়া বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে পারে। মস্কো উপলব্ধী করতে পেরেছে, পরাশক্তিগুলো যদি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়, তবে পাকিস্তানের গণহত্যা বন্ধ হতে পারে’। অন্য একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় ‘অভ্যুত্থানের নায়ক শেখ মুজিবর রহমানের অবস্থান সম্পর্কে পরস্পর বিরোধী খবর পাওয়া গেছে। পাকিস্তানী সরকার নিয়ন্ত্রিত সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়, শেখ মুজিবকে তারা ঢাকায় তাঁর নিজ বাসভবনে আটকে রেখেছে। অন্যদিকে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে বলা হয় তিনি চট্রগ্রামে রয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দারা গান্ধী বলেছিলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি, উপযুক্ত সময়ে ব্যবস্থা নেব’।

৩০ মার্চ লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ সাংবাদিক সায়মন ড্রিংয়ের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যিনি ২৫ মার্চের গণহত্যার সময় বাংলাদেশে ছিলেন। প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ‘পাকিস্তানী সেনাবাহিনী অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় ২৪ ঘন্টা অবিরাম গোলাবর্ষণ করে প্রায় ১৫ হাজার মানুষকে হত্যা করে’। তারা পুলিশ সদর দফতর, ছাত্রাবাসে নির্বিচারে হত্যা, দোকানপাটে আগুন জালিয়ে দেয়ার খবর দেয়। এতে তারা আরও লেখে বাঙালি যে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিল, তা গত সপ্তাহে বেদনাদায়ক এক গণহত্যার মাধ্যমে শেষ হয়ে গেছে। এই দু:স্বপ্ন ভুলতে তাদের কয়েক প্রজন্ম লেগে যাবে।

১২ এপ্রিল টাইম সাময়িকী এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে ‘পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবাহিনী সম্ভবত কিছু সময়ের জন্য ঢাকাসহ পূর্বাংশের শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারবে। কিন্তু অনির্দিষ্টকাল ৫৪ হাজার বর্গমাইলের বিশাল অঞ্চল বাগে আনত পারবে না। কারণ, ব্রিটিশরাজ ১৯১১ সালে বাঙালির ভয়ে রাজধানী কোলকাতা থেকে দিল্লীতে স্থানান্তর করেছিল। একই দিন নিউজ উইক ‘একটি আদর্শের মৃত্যু’ শিরোনামে এক প্রতিবেদন ছাপে। এতে বাঙালির আত্মবিশ^াস, গণজাগরণ ও পাকিস্তানীদের প্রতি তাদের ঘৃণার বিষয়টি গুরুত্বসহ তুলে ধরে। একদল লিকলিকে রোগা হতদরিদ্র বাঙালি কীভাবে সুরকি বল্লম আর বাঁশের লাঠি দিয়ে রংপুর এবং যশোরের সুসজ্জিত পাকিস্তানি ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও করেছিল তার বর্ণনা ছিল ওই প্রতিবেদনে। লন্ডনের দ্য অবজারভার তাদের এক প্রতিবেদনে পাকিস্তানী বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ, লুন্ঠন অগ্নিসংযোগ, ছাত্র হত্যা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগীয় প্রধান জি.সি দেব, পরিসংখ্যান বিভাগীয় প্রধান ড. এ. এন মনিরুজ্জামান, হিন্দু ছাত্রাবাস জগন্নাথ হলের প্রভোষ্ট ও ইংরেজি বিভাগের রিডার ড. অবিনশ্বর চক্রবর্তী ছাড়াও আরও ৫জন প্রভাষককে হত্যার খবর ছাপে।

১৩ জুন দ্য সানডে টাইমস গণহত্যা নামে ১৪ পৃষ্ঠার এক প্রতিবেদন ছাপে। যার সাংবাদিক ছিলেন প্রত্যক্ষদর্শী অ্যান্থনি মাসকারেনহাস। মার্চের শেষে পশ্চিম পাকিস্তানিদের পরিকল্পিতভাবে হাজার হাজার বেসামরিক লোককে হত্যা, ধর্ষণ, ৫০ লাখের বেশি মানুষের শরণার্থী হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া ও লুটপাঠের বিষদ বিবরণ তাতে তুলে ধরা হয়। দ্য স্পেকটেটর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটিই বিশ্বের সবচেয়ে জঘন্যতম গণহত্যা। টরেন্টো টেলিগ্রাম সেপ্টেম্বরে এক সম্পাদকীয়তে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে ৩০ লাখ টন খাদ্য এবং ভারতে ৮০ লাখ শরণার্থীর খাদ্যের ব্যবস্থা করতে জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার কথা উল্লেখ করে। এছাড়া আকাশবাণীর দেবদুলাল বন্দোপাধ্যায়, পঙ্কজ সাহা, উপেন তরফদার, এম. আর আখতার মুকুলের ‘চরমপত্র’ স্টেটম্যান পত্রিকার মানস ঘোষ, সিডনী শ্যানবার্গ, লেয়ার লেভিন আলোকচিত্রি কিশোর পারেখ, মার্ক টালীসহ নাম না জানা আরও অনেক সাংবাদিক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

নয়াদিল্লি থেকে ‘দ্য উইকলি নিউ এজ’ ২৬ সেপ্টেম্বর ‘বিজয় নিশ্চিত’ শিরোনামে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে তারা উল্লেখ করে, ‘গত সপ্তাহে আমরা বাংলাদেশে ৬ মাসের লড়াইয়ের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখতে পাই, এতে পাক বাহিনীর অবস্থান ভেঙ্গে পড়বে। মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয়ের ব্যাপারে আর কোনো সন্দেহ নেই। এখন কাজ হচ্ছে এটিকে ত্বরান্বিত করা।

২০ ডিসেম্বর টাইম সাময়িকী ‘যুদ্ধের ভেতর দিয়ে একটি জাতির জন্ম’ শিরোনামে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে তারা লেখে ‘জয় বাংলা’-‘জয় বাংলা’। পদ্মা আর ব্রক্ষ্রপুত্রের মতো বিশাল নদীর তীর, সবুজ প্রান্তর আর অসংখ্য গ্রামের অগণন চত্ত্বর থেকে উঠছে বাংলার এই বিজয় ধ্বণি। এসব চিত্রই বলে দেয় মুক্তিযুদ্ধে গণমাধ্যম কর্মীদের ভূমিকার কথা।


এ বিভাগের আরও সংবাদ

আর্কাইভ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর
Don`t copy text!
Don`t copy text!