আল-আমিন, নেত্রকোনাঃ সারাবিশ্বে করোনা ভাইরাস এক আতংকের নাম। চীনের উহান শহরে এই ভাইরাসের উৎপত্তি হলেও বিস্তৃতি আজ বিশ্বব্যাপী। আক্রান্ত লক্ষাধিক ব্যক্তি। মৃতের সংখ্যা কয়েক হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশেও এই করোনা ভাইরাস দ্রুত সংক্রমিত হচ্ছে। আক্রান্তের সঠিক সংখ্যা নির্ণয় করা কঠিন। ইতিমধ্যেই তিনজন মারা গেছে। করোনা ভাইরাস বহনকারী বিদেশ ফেরতদের দায়সারা হোম কোয়ারেন্টাইন। আজ আতংকিত রাষ্ট্র। সারাদেশে সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সামাজিক সচেতনতা, সর্তকতা এবং নিরাপদ দুরত্ব নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মাঠে নেমেছে।
নেত্রকোণাতেও করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় নেওয়া হচ্ছে নানামুখী পদক্ষেপ। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে মাইকিং সহ বিলি করা হচ্ছে সচেতনতামূলক লিফলেট। বলা হচ্ছে আক্রান্ত রোগীর সুচিকিৎসার জন্য জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ৫০টি আইসুলেশন বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলার আটপাড়ায় একটি বিল্ডিংয়ে বিদেশ ফেরতদের কোয়ারেন্টাইনের জন্য ৫০টি সিটের ব্যবস্থা আছে। এখন পর্যন্ত কোন রোগীকে সেখানে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়নি।
আক্রান্ত রোগীর সুচিকিৎসার জন্য জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ৫০টি আইসুলেশন বেড প্রস্তুত রাখা হলেও রয়েছে পর্যাপ্ত চিকিৎসক সংকট।
নেত্রকোণা বাসীর চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ১৯৯২ সালে শহরের জয়নগর এলাকায় ৫০শষ্যা বিশিষ্ট্য নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। গত নভেম্বরে হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত হলেও চিকিৎসক সংকটে চরম ভোগান্তিতে ভুক্তভোগীরা।
জানা যায়, হাসপাতালটিতে ৪২জন মঞ্জুরীকৃত ডাক্তারের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ১৭জন। এরমধ্যে সদ্য বিসিএস প্রাপ্ত অনভিজ্ঞ ৫জন। বিভিন্ন উপজেলা থেকে ডেপুটেশনে নিয়ে আসা ৯জন। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মধ্যে রয়েছে একজন গাইনী আর একজন সার্জারী। নেই কোন শিশু বিশেষজ্ঞ ও ডেন্টালসার্জন।
হাসপাতালটিতে সিনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), সিনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), সিনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু), সিনিয়র কনসালটেন্ট (প্যাথলজি), সিনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী), সিনিয়র কনসালটেন্ট (এ্যানাসথেসিয়া), সিনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থোপেডিক) ডাক্তারের ১টি করে পদ মঞ্জুরী থাকলেও পদগুলোতে কোন ডাক্তার নেই। এছাড়াও জুনিয়র কনসালটেন্ট (চর্ম ও যৌন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারী), জুনিয়র কনসালটেন্ট (রেডিওলজি/ইমেজিং) ডাক্তারের ১টি করে পদ মঞ্জুরী থাকলেও পদগুলোতে কোন ডাক্তার নেই। সহকারী সার্জন ৮টি পদের মধ্যে ৮টিই শূণ্য। ৭০জন সেবিকার মধ্যে কর্মরত ৬৬জন। পরিসংখ্যান কর্মকর্তা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদও ১টি করে শূণ্য রয়েছে। তৃতীয় শ্রেণির ৩৮টি পদের মধ্যে ১৯টিই শূণ্য রয়েছে।
প্রতিদিন প্রায় ২’শতাধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সেবিকা জানান, ভর্তিকৃত রোগীদের চিকিৎসার জন্য কোন ইনডোর ডাক্তার নাই। ভর্তিকৃত রোগীর চিকিৎসা এবং দেখভাল করে থাকেন দায়িত্বরত সেবিকারাই। প্রতিদিন সকাল বেলা একজন ডাক্তার হাসপাতালে রাউন্ড দিয়ে থাকেন। পালাক্রমে ৩জন ইর্মাজেন্সি মেডিকেল ডাক্তার হাসপাতালে দৈনিক প্রায় ৫’শতাধিক আউটডোর রোগী দেখে থাকেন। বিশেষ প্রয়োজনে তাদেরকে ডেকে আনা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের রোগীদের চিকিৎসা সেবা দানকারী ডাক্তার-নার্সদের নেই কোন সুরক্ষার ব্যবস্থা। অধিকাংশরাই মাক্স ছাড়াই হাসপাতালে ঘোরাফিরা করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক নার্সরা জানান, আমাদের সুরক্ষার বিষয়ে একাধিকবার হাসপাতালের তত্তবাবধায়ক ডাঃ আবু সাঈদ মোঃ মাহবুবুর রহমান স্যারকে অবহিত করেছি কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনি কোন ব্যবস্থা করেননি। ডাক্তার সংকটে হাসপাতালে সাধারণ রোগীর চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। আতংকিত হয়ে রোগীরা হাসপাতাল ছাড়ছে। পুরুষ ওয়ার্ডের বি-২২ নং বেডে ভর্তি হয়েছিলেন নয়ন শীল। ভর্তির পর পরই তাকে ময়মনসিংহ হাসপাতালে যেতে বলেন। নয়নের ভাই রাজন শীল ও মা ময়না রানী শীল বলেন, নয়নের মাথা ব্যাথা ও বমি এ রোগ দীর্ঘ দিনের। দারিদ্রতার কারণে নয়নের ভালো চিকিৎসা করাতে পারিনা। সকালে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি তারা এখন বলছে ময়মনসিংহ হাসপাতালে নিয়ে যেতে।
এবিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ আবু সাঈদ মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, ডাক্তার ও নার্সদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর চাহিদা দিয়েছিলাম কিন্তু এখন পর্যন্ত পাইনি। আমাদের যে পরিমান ডাক্তার আছে তা দিয়েই চেষ্টা করে যাচ্ছি। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কোন রোগী এখনো ভর্তি হয়নি। ৫শয্যার আইসুলেশন ইউনিট প্রস্তুত রয়েছে। তবে রোগী আসলে চিকিৎসা দিতে হিমসীম খেতে হবে। আমার নিজেরও বদলীর আদেশ হয়ে গেছে আগামীকাল জামালপুর জেলার সিভিল সার্জন হিসেবে যোগদান করবো।
জেলার সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ তাজুল ইসলাম খান বলেন, হাসপাতালে অবস্থাপনা বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক আছেন তিনিই ভালো বলতে পারবেন। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়াতে আমরা মাইকিংসহ বিভিন্ন ধরণের লিফলেট বিতরণ করছি।
সারাদেশে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে জেলা প্রশাসনকে সহযোগীতার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
অন্যদিকে শহরের নিখিলনাথ রোডে খাদ্য বিভাগ কর্তৃক সূলভ মূল্যে আটা বিতরণ সহ ডিসি অফিস চত্ত্বরে সরকারীভাবে পেয়াজ, তৈল, চিনি ও ডাল বিক্রিয়ে শতাধিক মানুষের উপচেপড়া ভিড় রোধে কোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, এবিষয়ে ডিসি স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি।