জনপ্রিয় অভিনেত্রী অপর্ণা সেন এর শুভ জন্মদিন। ভারতীয় তথা বাংলা চলচ্চিত্র জগতের এক অত্যন্ত কিংবদন্তী নাম অপর্না সেন।
তিনি একাধারে অভিনেত্রী ও পরিচালিকা এবং একজন চিত্র নাট্যকার। নাট্যমঞ্চ সিনেমা পরিচালনা প্রভৃতি সর্বক্ষেত্রেই তিনি তাঁর অসাধারন প্রতিভার বিকাশ করে চলেছেন। যার ফলে ক্রমশ সমৃদ্ধ হয়ে চলেছে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। অপর্না সেন ২৫ শে অক্টোবর ১৯৪৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতা ছিলেন চলচ্চিত্র সমালোচক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা চিদানন্দ দাশগুপ্ত। তাঁর মা সুপ্রিয়া দাশগুপ্ত ছিলেন সম্পর্কে প্রখ্যাত বাংলা কবি জীবনানন্দ দাশের খুড়তুতো বোন।অপর্না সেন তাঁর ছোটবেলা কাটিয়েছেন হাজারীবাগ এবং কলকাতা শহরে। তিনি কলকাতার মডার্ন হাই স্কুল ফর গার্লস এ লেখাপড়া করেছেন। তিনি কলকাতার বিখ্যাত প্রেসিডেন্সি কলেজে ইংরাজীতে অনার্স নিয়ে পড়েছিলেন যদিও তিনি ডিগ্রী নেননি। অপর্না সেন পরবর্তীকালে সঞ্জয় সেন কে বিবাহ করেন তাঁর দুই মেয়ে কমলিনী ও কঙ্কণা এবং জামাতা রণবীর শুরে (কঙ্কনার স্বামী) অপর্না সেন ১৯৬১ সালে ‘তিন কন্যা’ সিনেমায় অভিনয় করে, অভিনয় জীবনে পদার্পন করেন। এরপর ১৯৬৯ সালে ‘অপরিচিত’ সিনেমায় নিজ অভিনয় দক্ষতার প্রকাশ ঘটান। এরপর ‘অরন্যের দিন রাত্রি’ সিনেমায় অভিনয় করে বাংলা সিনেমার জগতে নিজেকে একজন প্রথম সারির নায়িকার স্থানে প্রিতিষ্ঠিত করেন। এরপর তিনি একে একে ‘এখনি’, ‘জীবন সৈকতে’, ‘জন অরণ্য’ , ‘উনিশে এপ্রিল’ , ‘অন্তহীন’ এর মত বেশকিছু সুন্দর সুন্দর সিনেমা আমদের উপহার দিয়েছেন। এরপর অপর্না সেন ১৯৮১ সা;ল থেকে সিনেমায় অভিনয়ের পাশাপাশি সিনেমা পরিচালনাতেও আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তাঁর পরিচালিত প্রথম সিনেমা হল ‘৩৬ চৌরঙ্গি লেন’। এই সিনেমাটির জন্য তিনি জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্ত হয়েছিলেন শ্রেষ্ঠ পরিচালকের জন্য। এরপরেও তিনি অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে বেশকিছু সিনেমা পরিচালনা করেছেন সেগুলির মধ্যে ‘পরমা’, ‘সতী পারমিতার এক দিন’‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস লইবার, ’১৫ পার্ক অ্যাভিনিউ’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস লইয়ার’ এর জন্য তিনি দ্বিতীয়বার শ্রেষ্ঠ পরিচালকের জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্ত হন। তিন কন্যা, আকাশ কুসুম, অপরিচিত,
পদ্মগোলাপ, অরন্যের দিন রাত্রি, কলঙ্কিত নায়ক, বম্বে টকিজ, খুঁজে বেড়াই, এখনি, এখানে পিঞ্জর, জয় জয়ন্তি, নায়িকার ভূমিকায়, জীবন সৈকতে, মেমসাহেব, এপার ওপার, সোনার খাঁচা,কায়াহীনের কাহিনী, বসন্ত বিলাপ, রাতের রজনীগন্ধা, যদু বংশ, মহাপৃথিবী ইতি মৃণালিনী তিতলি,অন্তহীন, অভিশপ্ত প্রেম, চতুষ্কোণ প্রভৃতি। ৩৬ চৌরঙ্গী লেন, পরমা,সতী, যুগনট, পারমিতার একদিন, মিস্টার অ্যান্ড মিসেস লইয়ার, ১৫ পার্ক অ্যাভিনিউ, দি জাপানিজওয়াইফ, ইতি মৃণালিনী, গয়নার বাক্স, আরশীনগর প্রভৃতি।
অপর্না সেন ১৯৮৭ সালে পদ্মশ্রী পুরষ্কার পান। ১৯৭০ সালে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে বিএফযে পুরষ্কার পান ‘অপরিচিতর’ জন্য।
এরপর ১৯৭৫ এ সুজাতা’, ১৯৮৮ তে ‘একান্ত আপন’, ১৯৯৩ তে শ্বেত পাথরের থালা’, ২০০১ সালে ‘পারমিতার একদিন’ এর জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরষ্কার পান। এছাড়াও ১৯৯২ ও ১৯৯৭ সালে শ্রেষ্ঠ সহ অভিনেত্রীর পুরষ্কার লাভ করেন ‘মহাপৃথিবী’ ও ‘অভিশপ্ত প্রেম’ এর জন্য। এরপর ২০১৩ সালে লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরষ্কারে সম্মানিত হন। ২০০২ সালে শ্রেষ্ঠ নামকরনের জন্য আনন্দলোক পুরষ্কার প্রাপ্ত হন। ১৯৯৩ সালে নাট্য মঞ্চে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে কলাকার পুরষ্কারে সম্মানিত হন।