ঢাকার সাভার উপজেলায় পাষণ্ড এক স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীর স্পর্শকাতর স্থানে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার দিবাগত রাত ১১ টায় উপজেলার ব্যাংক কলোনী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নির্যাতনের শিকার ওই নারীর নাম মেহনাজ আক্তার মিশু (৩৪)। অভিযুক্ত স্বামীর নাম আমির হোসেন মিন্টু ওরফে নিলয় আহমেদ (৪০)। মেহনাজ মিশু ঢাকা জেলা উত্তর যুব মহিলা লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাভার উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন রাজাবাড়ি এলাকার মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেনের মেয়ে। গুরুতর আহত মিশু বর্তমানে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় মেহনাজ মিশুর বাবা মঞ্জুর হোসেন ও মা শাহানাজ আক্তারকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
অভিযুক্ত আমির হোসেন মিন্টু ওরফে নিলয় আহমেদ সাভার পৌরসভার ব্যাংক কলোনী এলাকার ওয়াজেদ আলীর ছেলে। প্রায় ষোল বছর আগে মেহনাজ মিশুর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলে দুই পরিবারের সম্মতিতে নিলয় আহমেদের সঙ্গে বিয়ে হয়।
মেহনাজ আক্তার মিশু ও তার মা শাহানাজ আক্তার এবং স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রেমের সম্পর্ক গড়ে বিয়ের ১০ থেকে ১৫ দিন পরেই আমির হোসেন মিন্টু ওরফে নিলয় আহমেদ টালবাহানা শুরু করে। এক পর্যায়ে মাদক কাণ্ডে জড়িয়ে যাওয়ার পর স্ত্রী মেহনাজ মিশুর সঙ্গে যোগাযোগ ও তাঁর ভরণপোষণ বন্ধ করে দেন। তখন থেকেই স্বামীর বাড়ির লোকজন ব্যাবসা ধরার কথা বলে মিশুকে বাবার বাড়ি থেকে যৌতুকের টাকা আনার জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন শুরু করেন। টিকতে না পেরে বাধ্য হয়ে মিশু তাঁর বাবার বাড়িতে চলে যান।
আরো জানা যায়, কিছুদিন আগে স্থানীয় আপস মীমাংসার মাধ্যমে আমির হোসেন মিন্টু ওরফে নিলয় আহমেদ এলাকার কিছু লোকের সহায়তায় মিশুকে বাবার বাড়ি থেকে ফিরিয়ে আনতে যান।
এ সময় মিশু তাঁর ওপর যৌতুকের জন্য নির্যাতন, মাদক সেবন ও পরকীয়ায় জড়িয়ে খোঁজখবর না রাখার অভিযোগে স্বামীর বাড়িতে ফিরতে চাননি। একপর্যায়ে সবার অনুরোধে তিনি স্বামীর বাড়ি ফিরে আসেন। স্বামীর বাড়িতে ফেরার পরই মিশুর ওপর নতুন করে শুরু হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। নির্যাতন রোধে বাবার বাড়ির পক্ষ থেকে একটি হিরো থ্রীলার ব্র্যান্ডের মোটর সাইকেল উপহার দেওয়া হলেও শুক্রবার রাতে পুনরায় ঘরের দরজা বন্ধ করে আঙুল দিয়ে মিশুর স্পর্শকাতর স্থানে নির্যাতন করেন আমির হোসেন মিন্টু ওরফে নিলয় আহমেদ। এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলা ফুলা রক্তাক্ত জখম করে একপর্যায়ে শ্বাসরোধ করে মিশুকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়।
সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, স্পর্শকাতর স্থানসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে পাশবিক এই নির্যাতনের কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মিশু। মিশু নামে ওই গৃহবধূকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাঁর সুস্থ হতে কিছুদিন সময় লাগবে।
ভুক্তভোগী মেহনাজ মিশুর মা শাহানাজ আক্তার বলেন, ‘ আমার মেয়ের জীবন শেষ করে দিয়েছে আমির হোসেন মিন্টু ওরফে নিলয় আহমেদ। বিয়ের পর থেকেই স্বামীর বাড়িতে থাকতে পারেনি। বিভিন্ন সময়ে যৌতুক হিসেবে মোটা অংকের টাকা দিয়েও মেয়ের শান্তি মিলছে না। আমরা থানা পুলিশের মানবিক সহায়তা চাই। মেয়ের স্বামী নিলয় আহমেদের এমন বর্বর নির্যাতনে আমরা এখন নির্বিকার।’
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আমির হোসেন মিন্টু ওরফে নিলয় আহমেদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুদীপ কুমার গোপ বলেন, ‘গৃহবধু মেহনাজ মিশুর স্বামী আমির হোসেন মিন্টু ওরফে নিলয় আহমেদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এই ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’