পাঁচবিবিতে বাদশা সীডের আলুবীজ ক্রয় করে কৃষকরা প্রতারিত
সাখাওয়াত হোসেন,পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) প্রতিনিধিঃ
জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে বাদশা সীড এন্ড এগ্রোর মিউজিকা জাতের আলু বীজ ক্রয় করে কৃষকরা প্রতারিত। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার আওলাই ইউনিয়নের রাইগ্রাম বাজার এলাকা ও কুসুম্বা ইউনিয়নের গোবিন্দপুর আবেদ আলীর মোড় এলাকায়। সংবাদ পেয়ে আজ রবিবার সরেজমিনে গেলে রাইগ্রাম বাজারে ঐশি বীজ ভান্ডারের স্বত্ত্বাধীকারী আব্দুল হালিম ও স্থানীয় মুগর চন্ডিপুর গ্রামের কৃষক লুৎফর রহমান, পার্শ্ববর্তী কালাই উপজেলার শালুকগাড়ী গ্রামের আব্দুল আলিমের পুত্র আব্দুল আজিজ জানান, বাদশা সীড এন্ড এগ্রোর প্রতিনিধি কালাই উপজেলার বালাখুর গ্রামের লিটন ও বিক্রয় প্রতিনিধি রনি আমাদেরকে জানান, এই বাদশা সীডের মিউজিকা জাতের আলু খুব ভালো হবে, বীজ মানসম্মত ও উচ্চ ফলনশীল উন্নতজাতের। তাদের প্রতিশ্রুতি এবং আশ্বাসের প্রেক্ষিতে স্থানীয় বীজ ব্যবসায়ী আব্দুল হালিমের মাধ্যমে আমরা তাদের মিউজিকা জাতের আলু সংগ্রহ করে বপণের উপযোগী করার জন্য গাছ গজনোর অপেক্ষায় থাকি। কয়েকদিন পর দেখি আলুগুলো গাছ না উঠে পচে যেতে শুরু করে। এরপর বাদশা সীডের স্বত্ত্বাধীকারী মামুনুর রশিদ সুমন ও বিক্রয় প্রতিনিধিকে রনিকে অবগত করা হয়। তারা কালাইয়ের ব্যবসায়ী লিটনকে বিষয়টি দেখার জন্য এলাকায় পাঠায়। লিটন এলাকায় এসে আলুগুলো স্বচোখে দেখে গেছে। লিটনের দেখার পর বাদশা সীডের স্বত্ত্বাধীকারী মামুনুর রশিদ সুমনকে প্রতিবেদন আকারে জানান। পরে মামুনুর রশিদ সুমন নতুন বীজ পাঠিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন এবং বলেন, আমরা আলু বীজ আবার পাঠিয়ে দিচ্ছি, কোন সমস্যা হবে না। এরপর তারা আর কোন আলু বীজ পাঠায়নি এবং তাদের মোবাইল ফোনে কল করলেও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে আলু চাষী কৃষকরা দিশেহারা হয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল হালিমের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করছে। ব্যবসায়ী আব্দুল হালিম বলেন, আমি বাদশা সীডের লোকজনের আশ্বাসে গত অক্টোবর মাসের ২১, ২৩, ২৬, ২৭, ২৯, ৩০ ও ৩১ তারিখে সাত দফায় ৬ লক্ষ ৯৮ হাজার টাকা বীজ বাবদ তাদেরকে প্রদান করি এবং বাদশা সীডের পক্ষ থেকে মিউজিকা জাতের ২৬৩ বস্তা আলু ৬ দফায় পাঠিয়ে দেন। এই বীজগুলো যে কৃষকরা ক্রয় করেছিল তাদেরকে আবারও নতুন করে অন্য কোম্পানীর বীজ প্রদান করতে হচ্ছে। ফলে এই মৌসুমে বাদশা সীডকে প্রদান করা ৭ লক্ষ টাকা সহ আমার প্রায় ১৪/১৫ লক্ষ টাকার ব্যবসায়ীক লোকশান হতে যাচ্ছে। একইভাবে কুসুম্বা ইউনিয়নের আবেদ আলী মোড় এলাকায় গেলে স্থানীয় হাসান ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধীকারী বীজ ব্যবসায়ী দুলাল হোসেন জানান, তিনি ৭ দফায় ১০ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা প্রদান করে ৫ দফায় বাদশা সীডের মিউজিকা জাতের ৩৯৮ বস্তা আলু সংগ্রহ করেন এবং এলাকার কৃষকদের মাঝে বিক্রয় করেন। আলু পচে যাওয়ায় কৃষকরা এখন তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এসে চাপ সৃষ্টি করছে। তিনি অন্য কোম্পানীর বীজ দিয়ে সমাধানের চেষ্টা করছেন। এ কারণে তিনি খুব চিন্তায় পড়েছেন, তার শরীরের অবস্থাও ভালো না। স্থানীয় গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক কামরুল প্রধানের পুত্র কাজল সহ প্রায় ১৫/২০ জন কৃষক একযোগে জানান, তারা লাভের আশায় বাড়ির গরু বিক্রয় ও বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ গ্রহণ এবং জমি বন্ধক রেখে বাদশা সীডের মিউজিকা জাতের বীজ ক্রয় করেছিলেন। বীজগুলো পচে যাওয়ার কারণে তারা বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। অভিযোগের বিষয়ে স্থানীয় অভিজ্ঞ কৃষকরা জানান, অপরিপক্ক আলু থেকে এই বীজগুলো নির্বাচন করা হয়েছে। ফলে আলু গাছ গজানোর পূর্বেই পচে যাচ্ছে এবং যে আলুর গাছ গজিয়েছে, তাও জমিতে রোপণের পর গরম পেয়ে পচে যাচ্ছে। বাদশা সীডের প্রতিনিধি হয়ে এলাকা পরিদর্শনকারী কালাইয়ের ব্যবসায়ী লিটনের নিকট অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি পাঁচবিবিতে গিয়ে কৃষকদের আলু পচে যাওয়ার দৃশ্য দেখেছি। এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার সূর্যাপুর এলাকার বাদশা সীড এন্ড এগ্রোর স্বত্ত্বাধীকারী মামুনুর রশিদ সুমন ও কালাই উপজেলার বালাখুর গ্রামের বিক্রয় প্রতিনিধি রনি’র সঙ্গে মোবাইলে কথা বলার চেষ্টা করলে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।