জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার ধরঞ্জী ইউনিয়নের বিভিন্ন মসজিদে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টি আর) প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্ধকৃত টি,আর প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মমতাজুর রহমানের বিরুদ্ধে। দিনের পর দিন ঐ নেতার পিছনে ঘুরে প্রকল্পের টাকা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মসজিদের মুসল্লি ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা । এ বিষয়ে জুলকার নাইন নামের এক ব্যক্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়সহ একাধিক দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
লিখিত অভিযোগ ও অনুসন্ধানে জানা যায়, গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টি আর) প্রকল্পের আওতায় নির্বাচনী এলাকা ভিত্তিক ২০২১-২২ অর্থ বছরে ধরঞ্জী ইউনিয়নে ১১ টি প্রকল্পের অনুকূলে ২২লক্ষ ৯২হাজার ৫শ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়। এর মধ্যে কোতোয়ালীবাগ বাজারের সিসি ক্যামেরা স্থাপন বাবদ ১লক্ষ টাকা এবং ধরঞ্জী ইউনিয়নে বিভিন্ন ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বজ্র নিরোধক দন্ড স্থাপন প্রকল্পে ৬টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ২লক্ষ টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়। এ প্রকল্প দুটির কাজ না হলেও সংশ্লিষ্ট প্রকল্প অফিসে কাজের বিল ভাউচার জমা দিয়ে সম্পূণ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। স্থানীয় ধরঞ্জী ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত ইউপি সদস্য নিলুফার ইয়াসমিন প্রকল্প দুটির সভাপতি হলেও তিনি নিজেও জানতেন না এ প্রকল্প দুটির বিষয়ে। ধরঞ্জী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মমতাজুর রহমান অন্য একটি প্রকল্পের কাগজপত্রে স্বাক্ষর করে নেওয়ার সময় কৌশলে এ প্রকল্পের কাগজপত্রে স্বাক্ষর নিয়েছেন বলে জানান। ঐ অর্থ বছরেই কোতোয়ালীবাগ ৭নং ওয়ার্ড আজিজার রহমানের ঈদগাহ মাঠের বাউন্ডারী ওয়াল ও প্লাস্টার করণের জন্য ২লক্ষ টাকা বরাদ্ধ থাকলেও সেখানে কোন কাজের আলামত পাওয়া যায়নি।
একই ভাবে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের একই ইউনিয়নে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টি আর) প্রকল্পের আওতায় নির্বাচনী এলাকা ভিত্তিক ১০টি প্রকল্পের আওতায় ১৬লক্ষ ৩৭ হাজার ৫শ টাকা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে রতনপুর জোড়পুকুরিয়া জামে মসজিদের ছাদ ঢালাইয়েরর জন্য ১ম পর্যায়ে ৩লক্ষ টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়। টিআর প্রকল্পের বরাদ্দ আসার পর ধরঞ্জী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মমতাজুর রহমান টাকা উঠানোর কথা বলে প্রকল্প কমিটির সভাপতি ঔ মসজিদের ইমাম মাওলানা ওয়াজেদ আলীর নিকট থেকে দুটি ফাঁকা চেকের পাতায় স্বাক্ষর নেন। পরে টাকা তুলে মসজিদ কমিটিকে না দিয়ে তিনি নিজেই আত্মসাৎ করেন। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও টাকা না দেওয়ায় মসজিদ কমিটির সভাপতি হারুন মোল্লা টাকা চাইতে গেলে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মমতাজুর রহমান বিভিন্ন তালবাহনা করতে থাকেন। পরবর্তীতে তিনি মসজিদ কমিটিকে ৫০ হাজার টাকা দিতে চেয়ে ও সেটিও দেননি। একই ভাবে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে ধরঞ্জী ইউনিয়নের ধরঞ্জী সোনারপাড়া জামে মসজিদ নির্মাণের জন্য বরাদ্দকৃত ২ লক্ষ টাকা আসলে প্রকল্পের সভাপতি মাওলানা ফজল হোসেনের নিকট থেকে একইভাবে ফাঁকা চেকে স্বাক্ষর নিয়ে টাকা তুলে তা প্রকল্প কমিটির হাতে না দিয়ে তার পছন্দের লোককে মসজিদের কাজের জন্য নির্মান সামগ্রী কিনে দেন । প্রকল্পের মেয়াদ অনেক আগে শেষ হলেও যার কোন হিসাবই জানে না প্রকল্প কমিটির সভাপতি বা মসজিদ কমিটির কোন সদস্য। একইভাবে দৈবকনন্দনপুর মাহমুদুলের পাড়া জামে মসজিদের নির্মাণ বাবদ ১ম পর্যায়ে বরাদ্দ ২লক্ষ ৯৫ হাজার টাকার মধ্যে দেয় মাত্র এক লক্ষ টাকা । বাঁকী টাকার বিষয়ে কোন হদিসই জানেন না প্রকল্প সভাপতি ও মসজিদ কমিটির সদস্যরা। কোতোয়ালীবাগ জামে মসজিদের টাইলস ও জানালার থাই গ্লাস লাগানো বাবদ ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে তৃতীয় পর্যায়ে ২লক্ষ ৩০ হাজার টাকা এবং একই মসজিদে ২০২০-২০২১ ও ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে একই কাজে টিআর প্রকল্প বরাদ্দ আসে। যা মসজিদ কমিটির সভাপতিই জানেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঐ মসজিদের টাইলস লাগানোর জন্য জনৈক এক মহিলা ৭০হাজার টাকা দান করেছেন বলে মসজিদের সভাপতি মীর কাশেম জানান। মসজিদের ইমাম ও প্রকল্প কমিটির সভাপতি মাওলানা আজিজার রহমান প্রকল্পের টাকা উত্তোলনের জন্য ব্যাংক চেক স্বাক্ষর করে দিলেও তিঁনি নিজেও জানেন না কত টাকার প্রকল্প ও কি কাজে বরাদ্দ এসেছে।
রতনপুর জোরপুকুরিয়া মসজিদের ইমাম মাওলানা ওয়াজেদ আলী, ধরঞ্জী সোনাপাড়া জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা ফজল হোসেন, কোতোয়ালীবাগ জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আজিজার রহমান ও দৈবকনন্দনপুর মাহমুদুলের পাড়া জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মোফাজ্জল হোসেন সংশ্লিষ্ট মসজিদের প্রকল্প কমিটির (পিআইসি) সভাপতি। তারা একই সুরে বলেন, আমরা মসজিদের ইমাম। আমাদের প্রকল্প কমিটির সভাপতি করলেও আসলে আমরা এসবের কিছুই জানিনা। মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি আমাদের স্বাক্ষর করতে বলেছে তাই স্বাক্ষর করেছি। মূলত পরিচালনা কমিটি মসজিদের কাজ করবে।
রতনপুর জোড়পুকুরিয়া জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি হারুন মোল্লা বলেন, মসজিদটির ছাদ ঢালাইয়ের সময় স্থানীয় এমপিকে দাওয়াত করলে তিনি না আসায় তার প্রতিনিধি হিসাবে ধরঞ্জী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মমতাজুর রহমান আসেন। তিনি এমপির পক্ষ থেকে ৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দের ঘোষনা দেন। পরবর্তীতে তিনি প্রকল্পের টাকা উত্তোলন করে ৫০ হাজার টাকা দিতে চাইলে সেটিও আর দেয়নি। তার পিছনে পিছনে ঘুরেও কোন লাভ হয়নি। একই মসজিদের কোষাধ্যক্ষ ফরিদুজ্জামান ফুটু বলেন, মানুষ কতটা জালেম হলে মসজিদের টাকা মেরে খায়।
আর কোতোয়ালীবাগ মসজিদ কমিটির সভাপতি অবসর প্রাপ্ত প্রাইমারী শিক্ষক মীর কাশেম বলেন, কত টাকা এসেছে বলতে পারবো না সব মমতাজুল ভাই বলতে পারবে। আমরা তো নামে মাত্র। বুঝাই তো পারোছেন এলার (এসবের) ব্যাপার স্যাপার আছে। প্রকল্প উত্তোলনের রেজুলেশন করা আছে কি না এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমাদের শুধু স্বাক্ষর নিয়েছে আর বলেছে কাজগুলো ঠিক ঠাক হচ্ছে কি না দেখেন এই আর কি? দৈবকনন্দনপুর মাহমুদুলের পাড়া জামে মসজিদের মুসল্লীরা জানান, কত টাকার প্রকল্প সেটা মমতাজুল বলতে পারবে। আমাদের এক লক্ষ টাকা দিয়েছে সেটা দিয়ে কাজ করেছি। আর