রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইস্তেহারে উপকূলের প্রাণ-প্রকৃতি ও জীবন-জীবিকা সুরক্ষার বিষয়ে সুনির্দ্দিষ্ট অঙ্গীকার ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিগণ। তারা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভয়াবহ দূর্যোগের ঝুঁকিতে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল। অথচ জাতীয় বাজেটে বরাদ্দের ক্ষেত্রে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের জনগণ সবসময় বৈষম্যের শিকার। এই বৈষম্য অবসানের বিষয়ে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ঘোষণা প্রত্যাশা করে জনগণ।আজ শনিবার খুলনা জেলার কপিলমুনি বাজারে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে এই দাবি জানানো হয়। উন্নয়ন সংস্থা ‘লিডার্স’ এবং নাগরিক সংগঠন ‘সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন’ আয়োজিত কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন কপিলমুনি ইউপি চেয়ারম্যান কওসার আলী জোয়ার্দ্দার। সমাবেশে বক্তৃতা করেন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র, সাবেক কৃতি ফুটবলার ও সমাজকর্মী শেখ আব্দুর রশিদ, অধ্যক্ষ শিমুল বিল্লাহ বাপ্পি, অনির্বাণ লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক প্রভাত দেবনাথ, ইউপি সদস্য সখিনা বেগম, পাইকগাছা প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি মো. আব্দুল আজিজ, যুবনেতা প্রদীপ দত্ত, সচেতন সংস্থার সভাপতি বিদ্যুৎ বিশ্বাস, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের দুলাল দেবনাথ, নদী কর্মী আলাউদ্দিন মোড়ল প্রমুখ।
সমাবেশে ৭দফা দাবি তুলে ধরে বলা হয়, সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলাকে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ বিশেষ এলাকা ঘোষণা করতে হবে। এই অঞ্চলের সুরক্ষা ও উন্নয়নে প্রতি অর্থ-বছরে জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে। দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে উপকূলীয় এলাকায় একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আদলে একটি বাড়ি একটি শেল্টার হোম, কার্যক্রম শুরু করতে হবে। উপকূলের রক্ষাকবচ বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবনের ইকোসিস্টেম রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ ও বৃক্ষরোপনের মাধ্যমে উপকূলে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তুলতে হবে। নিরাপদ খাবার পানির স্থায়ী ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনকে মাথায় রেখে স্থায়ী ও মজবুত বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার করতে হবে। টেকসই উন্নয়নের জন্য উপকূলীয় উন্নয়ন বোর্ড গঠন করতে হবে।সমাবেশে বক্তারা বলেন, ভৌগলিক অবস্থান, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দূর্যোগ, ভঙ্গুর অবকাঠামো, দারিদ্রতা, দীর্ঘমেয়াদী লবণাক্ততা, সংকটাপন্ন কৃষি, প্রভৃতির কারণে উপকূলীয় এলাকার মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলা। এরপর নদ-নদী দখল-দূষণ ও ভরাটের কারণে এই ঝুঁকি আরো বেড়েছে। মানুষের জীবন-জীবিকা, সম্পদ, খাদ্য, পানি, বাসস্থানসহ অন্যান্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ফলে মানুষের বাস্তুচ্যুতির সংখ্যা বাড়ছে। এই সংকট থেকে উত্তোরণে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে অদূর ভবিষ্যতে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল জনশূণ্য হয়ে পড়বে। তাই এই সংকট নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলোকেই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।