৫৭ ওয়ার্ড নিয়ে প্রায় ৩৩০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশের বৃহৎ গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে নগরবাসীসহ সর্বত্র বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। মেয়র পদে এ নির্বাচনে বিএনপির কোনো প্রার্থী অংশগ্রহণ করছেন না।
সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমও একজন হেভিওয়েট প্রার্থী হওয়া সত্তে¡ও আইনি জটিলতার কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেননি। ফলে মেয়র পদে নির্বাচনি লড়াইয়ের জৌলুস খানিকটা হলেও কম বলে মনে করছেন অনেকেই। তবে ৫৭ ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৬টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর এবং ১৯টি সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারীদের মধ্যে নির্বাচনি আমেজের কমতি নেই।
মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পোস্টারে পোস্টারে নগরীর রাস্তাঘাট অলিগলি ও পাড়া-মহল্লা ছেয়ে গেছে। নির্বাচনবিধি অনুযায়ী দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত নগরীর সর্বত্র চলছে বিরামহীন মাইকিং ও প্রচার-প্রচারণা। মেয়র পদে পাঁচ জন প্রার্থীর নাম কমবেশি ঘুরে ফিরে ভাসছে সর্বত্র। তাদের নির্বাচনি প্রচারণাও প্রায় সমান তালে চলমান ।
বাকি তিন জন মেয়র প্রার্থীর প্রচারণা নেই বললেই চলে। যে পাঁচ জন প্রার্থীর নাম কমবেশি আলোচনায় আসছে তাদের মধ্যে এড. আজমতউল্লা খান যথেষ্ট শক্তিশালী। তিনি সরকারী দল আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়াই করতে ব্যপক গণসংযোগ ও প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।
গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র এড. জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুনের অবস্থানও যথেষ্ট ভালো। তিনি টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে ছেলের সঙ্গে নগরীর অলিতে-গলিতে, পাড়া-মহল্লায় নিজের অবস্থান আরো পোক্ত করার মানসে কাজ করছেন।
জাতীয় পার্টি মনোনীত এম এম নিয়াজউদ্দিন (লাঙ্গল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত গাজী আতাউর রহমান (হাতপাখা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম রনি (হাতি)।
এরাও নির্বাচনে ভাল ফলাফল করার জন্য মাঠে প্রচার প্রচারণার পাশাপাশি তারা নিজেরাও গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন।
ভোটের মাঠে ঘুরে ভোটারদের সাথে কথা বলে যে, তথ্যটি পাওয়া গেছে, সেটি হলো- এখন পর্যন্ত ভোটের লড়াইয়ে শীর্ষে রয়েছেন দুই জন প্রার্থী। এদের একজন আওয়ামীলীগের প্রার্থী আজমতউল্লা খান আর অপরজন স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন। আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে আজমতউল্লা খান শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন। অন্যদিকে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন ছেলের জনপ্রিয়তা ও মানুষের আবেগ নিয়ে ভোটারদের মনে তার অবস্থান সুসংহত করছেন।
তবে নির্বাচনি উত্তাপ যতটুকু থাকুক বা না থাকুক, ভোটারগণ কিন্তু নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয়ের দোলাচলে রয়েছেন। মোট কথা আস্থা সংকটে ভুগছেন তারা।
শুধু ভোটার নয়, নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিভিন্ন পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারী প্রার্থীদের মধ্যেও আস্থার রয়েছে অভাব। বিশেষ করে ইভিএম নিয়েই ভোটার ও প্রার্থীরা বেশী শঙ্কা বোধ করছেন।
কেননা এই সিটিতে আগে কোনো নির্বাচনে ইভিএম’র কোনো ধারণা বা অভিজ্ঞতা না থাকায় এবং নানান জনের নানান মতামত ও সন্দেহ-অবিশ্বাস থাকার কারণে ভোটাররা ইভিএম নিয়ে রয়েছেন সংশয়ে।
মেয়র প্রার্থীদের প্রচারণা আওয়ামীলীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আজমতউল্লা খান রোববার নগরীর বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক নির্বাচনি প্রচারণা চালিয়েছেন। দলীয় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে এলাকার ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে লিফলেট বিতরণ করে নৌকা প্রতীকে ভোট চান।
গণসংযোগকালে তার সঙ্গে ছিলেন আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন এলাকায় পথসভায় বক্তব্য রাখেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘আপনাদের চেষ্টা যেন বৃথা না যায়। ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে নৌকার পক্ষে, শেখ হাসিনার সালাম পৌঁছে দিয়ে আজমত উল্লার পক্ষে ভোট চাইবেন।
টেবিল ঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন রোববার সকালে তার ছয়দানার বাসভবনে আগত কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
তিনি কর্মী-সমর্থকদের প্রতি আহŸান জানিয়ে বলেন যে- আপপনারা সকল ভয়ভীতি উপেক্ষা করে শান্তিপূর্ণভাবে টেবিল ঘড়ি প্রতীকের পক্ষে প্রচারণা চালাবেন। বিকালে তিনি গাজীপুর মেট্রো সদর থানা এলাকায় নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নেন। নির্বাচনী প্রচারণাকালে জায়েদা খাতুন বলেন, ‘আমি, আমার ছেলের ওপর যে অবিচার করা হয়েছে, তার জবাব দিতে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছি।
আপনারা আমাকে সহযোগিতা করবেন। ভোট দিয়ে আমাকে জয়লাভ করতে সহযোগিতা করবেন।
জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী এম এম নিয়াজউদ্দিন এবং হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান এবং হাতি প্রতীকের প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম রনি সিটির বিভিন্ন এলাকায় নিজেদের প্রচারণা চালান।