সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি
ঢাকার অদূরে ধামরাইয়ে খেলার মাঠের জন্য আবেদন করে এক ব্যক্তির জমি দখলের লক্ষে হামলা চালিয়ে জমির সবজির বাগানসহ বিভিন্ন ধরণের অর্ধশতাধিক গাছপালা কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে এক সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ১১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জনের নামে ধামরাই থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী মো. শাহজাদা কবির (৪৫)।
এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের বড়নালাই গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্তরা হলেন, ধামরাইয়ের গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের বড়নালাই গ্রামের বাসিন্দা ও একটি বাড়ি একটি খামারের প্রকল্পের সাটুরিয়া উপজেলার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আতিকুর রহমান মুকুল (৪০), একই গ্রামের সাজ্জাদ হোসেন কালু (৫০), শহীদুল (৪০), শাকিল (১৯), খোরশেদ (৪০) ও সোলাই (২০), আকাশ (২০), রবিউল (২৫), আমির হামজা (২০), ইকবাল (১৯), ছলিমসহ (৪০) অজ্ঞাত আরও ১৫/২০ জন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের বড়নালাই গ্রামের বাসিন্দা ও একটি বাড়ি একটি খামারের প্রকল্পের সাটুরিয়া উপজেলার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আতিকুর রহমান মুকুল।
তিনি দাবি করে বলেন, জমি দখল করা চেষ্টার প্রশ্নই উঠে না। আমি তো এলাকায়ই ছিলাম না নয়ারহাটে শ্বশুর বাড়ি ছিলাম।
জমি দখল করতে চাইলে খেলার মাঠের জন্য আবেদন কেন করবো? যে জায়গার জন্য আবেদন করেছি তার পাশের জায়গাটি সরকারি হওয়ায় সেটি মাঠের জন্য বলা হয়। তার কাগজপত্র থাকলে তিনি দেখাবেন। অযথাই আমার নামে অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
ভুক্তভোগী মো. শাহজাদা কবিরের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, গত এক সপ্তাহ আগে বড়নালাই গ্রামে গাজীখালি নদীর পাড়ে ১৫১ নম্বর দাগের খাস জমিতে একটি মাঠ করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেন মো. আতিকুর রহমান। প্রস্তাবিত মাঠের জমিটি ১ নম্বর খতিয়ানে ১৫১ নম্বর দাগের। এই জমির পরিমাণ প্রায় ৬০ শতাংশ। যার প্রায় ৪০ শতাংশই নদীগর্ভে। এই জমির পাশেই এসএ খতিয়ান ২৭৬, এসএ ৮৯৫ আরএস খতিয়ান ১১৪, আরএস ১৫২ নং দাগে ৭৯ শতাংশ জমি রয়েছে তাদের। গত রোববার উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জমি পরিদর্শন করে সীমানা নির্ধারণ করেন। এই সীমানার ভেতরে ৭৯ শতাংশের মধ্যে ৪০ শতাংশ জমি থাকায় বিষয়টি ধামরাই উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা আক্তারকে জানানা তারা। এ সময় ফারজানা জমির মালিক দাবিদারদের সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়ে দেন। বিষয়টি জানতে পেরে আতিকুর ক্ষুব্ধ হয়ে সোমবার রাতে ৩০-৩৫ জনকে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেকের জমির লাউয়ের মাচা ভেঙে ফেলে এবং কাঁঠাল গাছসহ বিভিন্ন ধরণের গাছপালা কেটে ফেলেন।
মো. শাহজাদা কবির অভিযোগ করে বলেন, খাস জমিতে মাঠ হতেই পারে। কিন্তু গত দুই-তিনদিন ধরে তারা আমাদের পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে নেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছিল। এরমধ্যে গত সোমবার রাতে আতিকুর রহমান ও কালুর নেতৃত্বে ১৫-২০ জন এসে হামলা চালিয়ে লাউয়ের মাচা, করলা গাছ, কলা গাছ, লেবু গাছসহ অন্য গাছগাছালি কেটে ফেলে। খেলার মাঠ করতে বাধা দিলে আমাদের মারধরের হুমকিও দেয়া হয়। এ ব্যাপারে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
ধামরাই উপজেলার সার্ভেয়ার মিলন হোসেন বলেন, আতিকুর রহমানের করা মাঠের আবেদনের প্রেক্ষিত ১৫১ নং দাগের জমিতে লাল নিশান দেয়া হয়েছে। ১৫২ নং দাগের জমিতে খুঁটি পুঁতে দেয়া হয়েছে। যারা ওই জমি তাদের বলে দাবি করেছেন তাদেরকে কাগজপত্র নিয়ে দেখা করতে বলা হয়েছে। জমি তাদের হলে তারা জমি পেয়ে যাবেন।
ধামরাই উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) ফারজানা আক্তার বলেন, মাঠের আবেদন করা হলেও এখনো মাঠ হিসেবে সেটি বরাদ্দ দেয়া হয়নি। কাল (আজ) বুধবার আমি নিজে ওই স্থানটি পরিদর্শনে যাবো। এরপর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান বলেন, আজ (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় জমির গাছপালা কেটে জমি দখলের চেষ্টা সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।