ফরিদপুর সদর কানাইপুর ইউনিয়নের পুরদিয়া গ্রামে নতুন বছরের প্রথম দিনে বই উৎসবের মধ্য দিয়ে আনসার আলী মিয়া দাখিল মাদ্রাসার শুভ উদ্বোধন করেন।
অকোটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান এর উদ্যোগে ও সাজিদ-সোবহান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে আধুনিক এবং বিজ্ঞানসম্মত এই মাদ্রাসাটি শুভ উদ্বোধন করেন মাদারীপুর জেলার বাহাদুরপুর পীর সাহেব হাফেজ মাওলানা আব্দুল্লাহ্ মোহাম্মদ হাসান এবং ভিত্তি প্রস্তুর স্থাপন করেন ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহানসহ তার পিতা আনসার আলী মিয়া ও মাতা জহুরা বেগম।
রবিবার (১লা জানুয়ারি) সকাল ১০ টায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে পবিত্র কোরআন তেলোয়াত ও জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
জাতীয় সংগীতের তালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মজিবুর রহমান এবং মাদ্রাসাটির লোগো সম্বলিত পতাকা উত্তোলন করেন প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি অকোটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান।
পরে মাদ্রাসা ভবনের ৩য় তলায় হলরুমে আনসার আলী মিয়া দাখিল মাদ্রাসা উদ্বোধন উপলক্ষে আলোচনা সভা ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই বিতরণ করা হয়। প্রথমেই অতিথিতের ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে বরণ করে নেয়া হয়।
এ সময় মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও অকোটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান বলেন, ‘আমি চেয়েছিলাম এই প্রতিষ্ঠানটিকে একটি রিসার্চ সেন্টার করা হবে কিন্তু সংগত এই মুহুর্তে নামটি দিতে পারিনি। তবে, এই প্রতিষ্ঠানটি শুধু মাদ্রাসা শিক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, এটাকে রিসার্চ সেন্টার হিসেবেই গড়ে তোলা হবে।’
তিনি শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এই কোমলমতি শিশুদের প্রাইমারী শিক্ষার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। এখন যা শেখানো হবে তাই তারা শিখবে। এজন্য নিজেদের বাঁচ্চা মনে করে শিক্ষা দিবেন। পাশাপাশি আপনাদেরও পড়ালেখা করতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা একটি উদাহারণ সৃষ্টি করতে চাই। এটি ব্যবসায়িক কোনো প্রতিষ্ঠান নয়, জনকল্যাণের জন্য করা হয়েছে। শুভ যাত্রায় যে পরিমাণ শিক্ষার্থী রয়েছে, এটা অপ্রত্যাশিত ছিলো। এজন্য মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া।’ শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে, এমনকি দেশের বাহিরে নিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। কারন, এটি শুধু বাংলাদেশ নয়, একটি আন্তর্জাতিকমানের প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। মাদ্রাসাকে আমরা ইসলামের শিক্ষায় আধুনিক ও বিজ্ঞান সম্মত করে গড়ে তুলবো।’
এ সময় কানাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফকির মো: বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘ইঞ্জিনিয়ার সোবহান সাহেব কষ্ট করে পড়ালেখা করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। এই মানুষটার জীবনের বাস্তবতা দিয়ে উপলদ্ধি করতে পেরেছেন যে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই এবং সেই শিক্ষা হতে হবে নৈতিক শিক্ষা, ধর্মীয় শিক্ষা, সামাজিক শিক্ষায় সুশিক্ষিত। তিনি মনে করেন, শিক্ষিত মানে এই নয় যে বড় বড় ডিগ্রি পেতে হবে, সুশিক্ষায় শিক্ষিত হলেই প্রকৃত শিক্ষা। উনার সেই বিশ্বাস থেকে ২০০১ সাল থেকে সাজিদ-সোবহান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন যাত্রা শুরু করে এবং এই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আজ আনসার আলী মিয়া দাখিল মাদ্রাসার যাত্রা শুরু। আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন যে, একটি স্কুল বা মাদ্রাসার কার্যক্রম শুরু হলে প্রথম থেকে এক’শ কিংবা দুই’শ শিক্ষার্থী দিয়ে শুরু করতে হয়। কিন্তু মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়েছে। একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান সাহেবের যে সুনাম ও সুখ্যাত সেটারই বাস্তব প্রতিফলন আজকের শুভ যাত্রা।’
উপস্থিত বক্তারা বলেন, ‘একজন গর্বিত পিতা-মাতার সন্তান ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান সাহেব। তার মহান উদ্যোগে জীবদ্দশায় তার পিতা-মাতা নিজেদের নামে প্রতিষ্ঠান করতে দেখে গেলো। এটা আমাদের গর্বের বিষয়। আশা করি, প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক মানের হয়ে উঠবে।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, ফরিদপুর পল্লী বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজার আবুল হাসান, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহানের ভগ্নিপতি পুলিশ সুপার জাহিদুর রহমান ভূইয়া, ছেলে সাজিদ হোসেনসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানবৃন্দ, শিক্ষার্থীদের অভিভাবকগণ ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
আলোচনা সভা শেষে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেন অতিথিবৃন্দ এবং মাদ্রাসার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করেন বাহাদুরপুর পীর সাহেব হাফেজ মাওলানা আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ হাসান।