প্যারিসের সাধারণ একটা বাড়ির সাদামাঠা প্রবেশ পথ। তবে ভিতরে ঢোকার অনুমতি পেলে বদলে যাবে দৃশ্যটা। গোপন পথে বেয়ে পৌঁছে যাওয়া যাবে সোনালি রংয়ের চোখ ধাঁধানো ব্যাঙ্কোয়েটে। ঝাড়বাতিতে সাজানো ঝলমলে সেই ঘরে চলছে বিলাসবহুল ডিনার পার্টি। মাথাপিছু খাওয়ার খরচ ন্যূনতম ১৮৯ ডলার। ৫৭৮ ডলার খরচ করতে পারলে চুমুক দেওয়া যাবে বহুমূল্য শ্যাম্পেনে। সেখানে অভিজাত অতিথিরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন হল জুড়ে। পরিবেশন করছেন সুসজ্জিত ওয়েটারেরা। অতিথি বা পরিবেশন কর্মী— কারও মুখে অবশ্য মাস্কের বালাই নেই। দেখে বোঝার উপায় নেই যে করোনার বাড়াবাড়িতে শহরটায় গত সোমবার থেকে ফের কড়া লকডাউন শুরু হয়েছে। গত পাঁচ মাস ধরে শহরের সমস্ত পাব, রেস্তরাঁ বন্ধ।
করোনা বিধি উড়িয়ে এমন কিছু গোপন ডিনার পার্টির আয়োজন করেছিল ফ্রান্সের কিছু অভিজাত রেস্তরাঁ গুলো। তারই একটি ভিডিয়ো ক্লিপ ছড়িয়ে পড়েছে সংবাদ মাধ্যমের দৌলতে। একটি টিভি চ্যানেলের তরুণী সাংবাদিক পুরো ঘটনাটি গোপন ক্যামেরায় তুলেছেন। সেই ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, পার্টির আয়োজকেরা তরুণীদের বলছেন, ‘শুধু এক বার এই দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করুন। এই দুনিয়ায় করোনা বলে কিছু নেই।’’ ফ্রান্সে এমন আর একটি গোপন পার্টিতে দেখা গিয়েছে দেশের কিছু নেতা-মন্ত্রীকেও। এই ঘটনায় জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ায় বিষয়টি মোটেই হালকা ভাবে নিচ্ছে না প্রশাসন। দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ে ইউরোপের সহ বহু দেশ বেসামাল। টিকাকরণ শুরু হলেও নতুন স্ট্রেনের দাপাদাপিতে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। ফলে বহু দেশেই নতুন করে লকডাউন জারি করা হয়েছে। তার মধ্যে এই ঘটনা সামনে আসায় অস্বস্তিতে ফ্রান্স প্রশাসন।
আর অন্য দিকে ফিলিপিন্সের কাভিটি প্রদেশে লকডাউন-বিধি ভাঙায় এক ব্যক্তিকে ৩০০টি স্কোয়াট জাতীয় ব্যায়াম করার শাস্তি দিয়েছিল পুলিশ। বাড়ি ফিরে অসুস্থ বোধ করতে থাকেন তিনি। পরের দিন তাঁর মৃত্যু হয়। মৃতের এক আত্মীয় ফেসবুকে পুরো ঘটনাটি জানিয়ে পুলিশকে দায়ী করেছেন। কাভিটিতে কড়া লকডাউন চলছে। মৃতের পরিবারের অভিযোগ, গত বৃহস্পতিবার সন্ধেয় জল আনতে বেরিয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। কার্ফু ভাঙায় তাঁকে ও আরও কয়েক জনকে আটকায় পুলিশ। তাঁদের একটানা ১০০টি স্কোয়াটের নির্দেশ দেওয়া হয়। বলা হয়, মাঝপথে থামলেই শাস্তি বাড়বে। ওই ব্যক্তিকে এ ভাবে ৩০০টি স্কোয়াট করানো হয়। পরের দিন সকালে শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে তিনি বাড়ি ফেরেন। এর পরেই মারা যান তিনি। বিষয়টি জানাজানি হতে স্থানীয় মেয়র তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘এই ঘটনা অত্যাচারের সামিল।’’ পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, কার্ফু ভাঙলে শারীরিক শাস্তির নিয়ম নেই। সাবধান করে ছেড়ে দেওয়াই দস্তুর। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কেন এমন হল তা তদন্ত করে দেখা হবে।
ইস্টার পর্যন্ত কড়া লকডাউন চালানোর পরে সামনের সপ্তাহ থেকে পরিস্থিতি কিছুটা শিথিল করার কথা জানালেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ধাপে ধাপে খুলবে স্কুল, বাজার-দোকান। বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে টিকাপ্রাপ্তদের ‘ভ্যাকসিন পাসপোর্ট’ চালু করার কথা ভাবছে ব্রিটিশ প্রশাসন।