নিজস্ব প্রতিনিধি : নেত্রকোনায় আলোচিত কৃষক সোহেল হত্যা মামলার আসামীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বুধবার (৩ মে) দুপুরে মদন উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের দড়িবিন্নী গ্রামে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় আসামীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- নিহত কৃষক সোহেলের বাবা হাবিবুর রহমান, মা কনা আক্তার, মামা শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া, প্রতিবেশী সাজেদুল হক খান, মাহবুবুর রহমান, ইসলাম উদ্দিনসহ অন্যান্যরা। এছাড়াও গ্রেপ্তারের দাবিতে একাত্মতা জানিয়ে অর্ধশতাধিক গ্রামবাসী মানববন্ধনে অংশ নেন।
বক্তারা বলেন- মোখলেছুজ্জামান তালুকদার হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত প্রধান আসামি হয়েও নিজ কর্মস্থল ময়মনসিংহে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়ে ফায়ারম্যান হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। অপরদিকে ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি আনিসুজ্জামানসহ অন্যান্যরাও ঘুরে বেড়াচ্ছেন কিন্তু গ্রেপ্তাতার হচ্ছে না। আদালতের প্রতি সম্মান দেখিয়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তাদের প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করা হোক।
সোহেলের বাবা হাবিবুর রহমান বলেন- ‘চাটুয়াকুড়ি বিলটি দখল নিতে চায় আনিসুজ্জামানসহ সঙ্গীয় লোকজন। সেই লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ২৪ জাকনুয়ারী, দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ লোকজন নিয়ে তারা হামলা করে। এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে সোহেলকে আঘাতে রক্তাক্ত আহত করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে ২৬ জানুয়ারী তার মৃত্যু হয়।
পরে এ ঘটনায় নিহত সোহেলের বাবা হাবিবুর রহমান হাবি বাদী হয়ে ১০০ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে মামলার তদন্ত করে, ডিবি-সিআইডি ও পিবিআই।
১৩ মে ২০১৯ ইং তারিখ সাদেকুর রহমান জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত, মদন, নেত্রকোনা মদন থানার মোঃ নং- ১৮(১)১৫, জি.আর ১৮(২)১৫ এর দঃবিঃ ১৪৩/৪৪৭/৩২৪/৩০৭/৩০২/ ১১৪/১০৯/৩৪ ধারায় সাদেকুর রহমান, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্টমদন,নেত্রকোনা মোখলেছুজ্জামান তালুকদার ওরফে এরশাদ সহ পলাতক ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
এছাড়াও অপর একটি মামলায় ফায়ারম্যান মোখলেছুজ্জামান তালুকদার ওরফে এরশাদের বিরুদ্ধে ৩২৬ ধারায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। যাহা- মদন থানার মামলা নং- ১৫(১)১৪।
মামলার এজাহার ও চার্যশীট ভূক্ত আসামি মোখলেছুজ্জামান এবংং আনিছুজ্জামান মদন উপজেলার দড়িবিন্নী গ্রামের মৃত সিরাজুল হক তালুকদার ওরফে সেলু মিয়ার ছেলে।
ঘটনার দিন ও সময় আসামি মোখলেছুজ্জামান তালুকদার ওরফে এরশাদ কিশোরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এ কর্মরত ছিলেন। কিন্তু নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া থানায় নতুন ফায়ার স্টেশন চালু হওয়ায় কেন্দুয়া ফায়ার স্টেশনে সাময়িক ডিউটি করার জন্য কেন্দুয়ায় অবস্থান করেন এবং কেন্দুয়ায় অবস্থানরত ঘটনার দিন ও সময়ে নিকটবর্তী মদন- দড়িবিন্নী গ্রামে হত্যাকান্ডটি ঘটান বলে অভিযোগ করেন।
নিহত সোহেলের বাবা দৈনিক বাংলার অধিকারকে বলেন, নেত্রকোনা মদন উপজেলার চাটুয়াকুড়ি বিলের জায়গা দখলকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। ভিক্টিমের বাবা মোঃ হাবি চাটুয়াকুড়ি বিলে অন্যের কাছ থেকে ১.৪০ একর জমি পত্তন নিয়ে নিজ হালে চাষাবাদ করে আসছিল। পত্তনকৃত জমির দখল ছেড়ে দেওয়ার জন্য ভিক্টিমের পরিবাকে হুমকি দিয়ে আসছিল এরশাদ গং। পত্তনকৃত জমির দখল না ছাড়ায়, ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ইং নিজ বাড়ির সামনের মরিচ ক্ষেতে কাজ করা অবস্থায় কৃঘক সোহেলকে মোখলেছুজ্জামান গং দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ পরিকল্পিত সংঘবদ্ধ হামলা চালিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত করে। চিকিৎসাধীন হাসপাতালে ২৬ জুন তার মৃত্যু হয়। এবং নিহত সোহেলের মা প্রধানমন্ত্রীর নিকট আকুল আবেদন করেন ন্যায় বিচারের জন্য।
ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের মহা-পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো: সাজ্জাদ হোসেন জানান- ব্যক্তিগত অপরাধের দ্বায়ভার ডিপার্টমেন্ট নেবে না। আদালতের নির্দেশ থাকলে অবশ্যই গ্রেফতার হবে মোখলেছুজ্জামান। আদালতের নির্দেশ বাস্তবতায়নে যেন কোনো প্রতিকূলতা সৃষ্টি না হয় সেক্ষেত্রে ডিপার্টমেন্ট কোনো ধরণের হস্তক্ষেপ করবে না।
২১/০৫/২০২০ ইং তারিখে দৈনিক বাংলার অধিকার অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে ময়মনসিংহ ফায়ার সার্ভিস স্টেশন হতে বিভাগীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে সংযুক্ত ফায়ারম্যান মোখলেছুজ্জামান তালুকদার এর বিরুদ্ধে সোহেল হত্যা মামলা সংক্রান্ত কাগজপত্র প্রেরণের জন্য সহকারী পরিচালক, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ময়মনসিংহকে ২৭/০৫/২০২০ ইং তারিখে উপ-পরিচালক আবুল হোসেন লিখিত নির্দেশ প্রদান করেন!
নেত্রকোনা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো: আকবর আলী মুনসী সাংবাদিকদের জানান- কেউ-ই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকার পর কেউ গ্রেপ্তার এড়িয়ে থাকবে এমন সুযোগ নেই। যাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি আছে প্রত্যেককেই গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হবে।