নীলফামারি জেলা কারাগারের জেল সুপারের ফোন, স্যার একজন বন্দি পাঠাচ্ছি যে মানসিক অসুস্থ, বিজ্ঞ আদালত তাকে মুক্তির আদেশ দিয়েছে কিন্তু তাকে ছেড়ে দিলে সে আবার হারিয়ে যাবে এবং পরিবারের কাছে আর ফেরা হবেনা। সে আটকের সময় কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামের একটা ঠিকানা বলে বিধায় তাকে আপনার কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি স্যার। আমিও সানন্দে রাজি হয়ে গেলাম কেননা কারও উপকার করার সুযোগ পেলে সেটা লুফে নিতে ভালো লাগে,আলহামদুলিল্লাহ।
পরদিন(১৭নভেম্বর) বিকালে পুলিশ স্কট যোগে চলে আসে কুমিল্লা কারাগারে। রাত পেরিয়ে সকালে বিভিন্নভাবে জিজ্ঞাসাবাদে লোকটা জানায় তার নাম শুক্কুর, বাবার নাম আবু, হানারচর, হাইমচর, চাঁদপুর। দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দিলাম ডেপুটি দেলোয়ারকে, সে কথা বললো চাঁদপুরের জেলার মনিরের সাথে। মনির অনেক খোঁজাখুঁজি করে জানায় হানারচর চাঁদপুর সদরের একটা ইউনিয়ন এবং সেখানকার চেয়ারম্যান, মেম্বারের সাথে কথা বলে এই নামে কোনও লোকের সন্ধান পাওয়া যায়নি। আমিতো হতাশ হবার লোক নই, পরদিন আবার নিজেই তার নাম ঠিকানা জিজ্ঞাসা করলে সে গ্রামের নাম বলে মধ্য বাকরপুর যা তার ওয়ারেন্টে উল্লেখ ছিলো এবং আজকে আর হাইমচর বলেনি, শুধু চাঁদপুরই বলেছে। মনে হলো সেতো খুব বেশি এলোমেলো নাম ঠিকানা বলেনি তাই তার ওয়ারেন্টে দেয়া নাম ঠিকানা আর তার মুখে বলা নাম ঠিকানা নিয়ে নিজেই মনিরকে ফোন দিলাম। আগেরদিন অনেক খোঁজাখুঁজি করে মনির কিছুটা হতাশ হলেও আমিতো শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ, না পারলে ভিন্ন ব্যবস্থা কি করবো সেটাও ভেবে রেখেছিলাম। মনির কিছুটা হতাশা নিয়ে বলেছিলো স্যার এটা তো আই ও মানে ইনভেস্টিগেশন অফিসারের কাজ; উত্তরে আমি বলেছিলাম কাউকে না কাউকে তো দায়িত্ব নিতে হবে, একটু চেষ্টা না হয় আমরাই করলাম। এবার ছবিসহ পাঠিয়ে দিলাম এবং চাঁদপুর জেলে আটক হানারচরের দুই চারজন কারাবন্দিকে দেখাতেই তারা চিনে ফেলে এবং জানা যায় নীলফামারিতে ধরা পড়ার পর প্রথম যে নাম পিতার নাম সে বলেছিলো সেটাই সঠিক। নীলফামারি জেলা পুলিশ ১৭ অক্টোবর জিডি মূলে ফৌজদারি কার্যবিধি ৫৭ ধারায় তাকে আটক দেখিয়ে কারাগারে পাঠায়।
বাবা মা বেঁচে নেই কিন্তু ভাই বেরাদার আছে। ভাইয়ের ফোন নাম্বার নিয়ে ডেপুটি দেলোয়ার কথা বললো এবং তাদের আসতে বললে তারা আসতে রাজি হন এবং আজ দুপুরে তার ভাই ও প্রতিবেশী দুজন ভদ্রলোক এসে তাকে বাড়ি নিয়ে যান। দেখতে প্রায় একই রকম ভাইকে দেখিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম চিনো কিনা, মুখ গুঁজে বলে চিনেনা। বুঝতে পারলাম সে চিনেছে ভাইকে কিন্তু হতে পারে তার ভাইয়ের প্রতি চরম অভিমান যেজন্য হয়তো অস্মীকার করছে ভাইকে, বাড়ি না যেতে ওলট-পালট বলছে। ভাই অতি যত্নে পরনের গুলো খুলে নতুন লুংগি, শার্ট পরিয়ে তাকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা টিম নীলফামারীর, টিম চাঁদপুর ও টিম কুমিল্লা।