রাজশাহী নগরীর ৭৫টি নমুনা থেকে ২৮টিতে এডিশ মশার লার্ভার সন্ধান মিলেছে। নগরীর পাঁচটি ওয়ার্ডের ৭৫টি বাড়িতে এ সন্ধান চালিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এর মধ্যে ২১ শতাংশ বাড়িতে দুই প্রজাতির লার্ভার সন্ধান মিলে।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালকের কার্যালয়ের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) থেকে সোমবার (১০ জুলাই) পর্যন্ত এ সন্ধান চালায়। মহানগরীতে এডিশ মশার প্রজননক্ষেত্র শনাক্ত করতে কয়েকটি টিম মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করে। সোমবার নমুনা পরীক্ষা শেষে স্বাস্থ্য বিভাগ এ ফলাফল জানায়। স্বাস্থ্য বিভাগের ল্যাবে নমুনাগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ শেষ হয়। এতে ধরা পড়ে ৭৫টি বাড়ির মধ্যে ২৮টি বাড়িতেই এডিশ মশার লার্ভা রয়েছে।এগুলো থেকে ডেঙ্গু ছড়ানোর আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এমন পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু নিয়ে রাজশাহীর পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বলছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এমন পরিস্থিতিতে এডিশের লার্ভা ধ্বংসে সিটি করপোরেশনকে চিঠি দিবে স্বাস্থ্য বিভাগ।এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য উপ-পরিচালক আনোয়ারুল কবির বলেন, আমরা সিটি করপোরেশন র্যানডম সিলেকশনের মাধ্যমে এলাকার ৭৫টি বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছিলাম। তাতে এজিপ্টাই মশার লার্ভা বেশি পাওয়া গেছে। এজিপ্টাই এবং এলবোপিক্টাসÑএই দুই প্রজাতির লার্ভাই মিলেছে। দুটো মিলে ডেঙ্গু ছড়াতে থাকলে পরিস্থিতি তো উদ্বেগজনক হয়ে উঠতে পারে। তাই লার্ভা ধ্বংসে সিটি করপোরেশনকে চিঠি দেয়া হবে।রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত ১৪ জুন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রথম তিনজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হন। মঙ্গলবার (১১ জুলাই) পর্যন্ত ৪৯ জন রোগী ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ভর্তি হন। তবে এদের মধ্যে ৩৬ জন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। আর একজন মারা গেছেন। ফলে মঙ্গলবার পর্যন্ত ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন ১২ জন। ভর্তি রেজিস্ট্রারে তিনজন ছাড়া সবারই ট্রাভেলিং হিস্ট্রি হিসেবে ঢাকা উল্লেখ করা হয়েছে।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহম্মদ জানান, এ পর্যন্ত যেসব ডেঙ্গু রোগী এসেছেন, তারা সবাই ঢাকায় ছিলেন। সেখান থেকে ডেঙ্গুর জীবাণু নিয়ে এসেছেন। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য হাসপাতালের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডটিকে ডেডিকেটেড করা হয়েছে। ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় ৫ সদস্যের চিকিৎসক টিম গঠন করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় টিকাসহ সব ওষুধই হাসপাতালে আছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও নার্সও রয়েছেন।এদিকে মঙ্গলবার সকালে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশার বংশবিস্তার রোধ, পরিচ্ছন্নতা ও জনসচেতনতা কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্যে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওয়ার্ড সচিব, মশক পরিদর্শক ও সুপারভাইজারদের সাথে আলোচনা সভায় ডেঙ্গু মশার বংশবিস্তার রোধ, পরিচ্ছন্নতা ও জনসচেতনতা কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশনা দেন রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দিন। ড্রেনসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে নগরবাসীকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে এবিএম শরীফ উদ্দিন বলেন, ফুলের টব, ভাঙা হাড়ি-পাতিল, গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ার, টিনের কোটা, ভাঙা কলস, ড্রাম, ডাব-নারিকেলের খোসা, এয়ারকন্ডিশনার ও রেফ্রিজারেটারের তলায় পানি জমতে দেওয়া যাবে না। যেসব স্থানে মশা জন্মাতে পারে সেসব স্থানের পানি জমতে দেওয়া যাবে না। বাড়ির ভেতরে, আসেপাশে ও আঙ্গিনা পরিস্কার রাখতে হবে। দিনে ঘুমানোরে সময়ও মশারি ব্যবহার করতে হবে।এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের উপপ্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা সেলিম রেজা রঞ্জু বলেন, রাজশাহীর অবস্থাও এখনো ভালো। তবে সতর্কতা হিসেবে আমাদের কর্মীরা এখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে নগরবাসীকে সচেতন করবেন, যেন কোথাও তিন দিনের বেশি পানি জমে না থাকে।
শহরের ড্রেনগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় আরও জোর দেওয়া হবে এবং এডিসের লার্ভা ধ্বংসে ড্রেনগুলোতে স্প্রে করা হবে। কোথাও কোথাও এটি শুরুও হয়েছে। এছাড়া মসজিদে জুমার নামাজের আগে খুৎবায় এ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরিতে ইমামদের বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সরিফুল ইসলাম বাবু বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে চিঠি আসলে অফিসে এসেছে। আমি রাজশাহীর বাইরে অবস্থান করছি।
আমাদের পরিচ্ছন্নতা দল প্রতিটি ওয়ার্ডে কাজ করছে। নগরবাসীকে সচেতন হতে হবে। আমরা খুব তাড়াতাড়ি নগরবাসীকে সচেতন করার লক্ষে প্রচারণায় নামবো। ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষ ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নেওয়া হবে। তবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজ স্বাভাবিক রয়েছে।