কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর পৌর যুবলীগ নেতা আতিক আরমানকে চাঁদা না দেওয়ায় আমেরিকা প্রবাসী ও সাবেক ছাত্র নেতা মো. কামাল মিয়া (৪২) কে মারধোরের প্রতিবাদে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিবাদ সভায় যুবলীগ নেতাকে ৩দিনের মধ্যে বহিস্কার করাসহ দৃষ্টান্তমূলক বিচার না করা হলে কুলিয়ারচর সদরে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের সকল কর্মকাণ্ডসহ সামাজিক সকল অনুষ্ঠান বয়কটের ঘোষণা দেন রামদী, গোবরিয়া আব্দুল্লাহপুর ও সালুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে উপজেলার আগরপুর বাসস্ট্যান্ডে রামদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আলাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় এ বয়কটের হুমকি দেন উপস্থিত তিন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
প্রতিবাদ সভায় নেতারা বলেন, পৌর যুবলীগ নেতা আতিক আরমান কর্তৃক কিছুদিন পর পর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা লাঞ্চিত হয়ে আসছে। ইতোপূর্বে রামদী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী আকরাম ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবু যুবলীগ নেতা আতিক আরমানের হামলার শিকার হওয়ার পর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বরাবর অভিযোগ করেও কোন বিচার না পাওয়ায় তার অত্যচারের মাত্রা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। আতিক আরমান কর্তৃক চাঁদাবাজি ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হলে এবং তার চাঁদাবাজি স্থায়ী ভাবে বন্ধসহ আওয়ামী রাজনীতি থেকে তাকে বহিষ্কার না করা হলে তারা কুলিয়ারচর সদরে আওয়ামী লীগ রাজনীতি ও সামাজিক সকল কর্মকাণ্ড বয়কট করবেন এমন হুমকি দেয় তারা। প্রয়োজনে তারা বিচারের দাবিতে পশ্চিম অঞ্চলের সকল জনগণ নিয়ে পৌর এলাকায় প্রবেশ করে নিজ হাতে বিচার করার হুমকিও দেন তারা।
উক্ত প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বিপ্লব, সহ প্রচার সম্পাদক বাবু নকুল ভৌমিক, সদস্য রাজু আহমেদ, রামদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন শিশু, রামদী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. মাহতাব উদ্দিন, ৮ নং ওয়ার্ড সদস্য মো. জামাল উদ্দিন, সাবেক সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. লায়েছ মিয়া, ৯ নং ওয়ার্ড সহ-সভাপতি ডা.কামাল হোসেন বকুল, সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস মিয়া, সালুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা হুমায়ুন কবির, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি খন্দকার জাহাঙ্গীর আলম ও রামদী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবু প্রমূখ।
ভুক্তভোগী আমেরিকা প্রবাসী কুলিয়ারচর প্রবাসী ফ্রেন্ডস ফোরামের সভাপতি মো. কামাল মিয়া (৪২) তার বক্তব্যে বলেন, কুলিয়ারচর পৌর এলাকার পূর্বগাইলকাটা মৌজার নিউটাউন এলাকায় প্রায় এক বছর পূর্বে তিনি একটি পাঁচতালা বিশিষ্ট বিল্ডিং এর নির্মাণ কাজ শুরু করেন। প্রায় পাঁচ ছয় মাস পূর্বে নির্মাণাধীন বিল্ডিংয়ের সামনে আসিয়া ওই প্রবাসীর নিকট ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে পৌর যুবলীগ নেতা আতিক আরমান বলেন, ৫ লাখ টাকা চাঁদা না দিলে তাকে এখানে বিল্ডিং করতে দিবেনা। এতে রাজী না হওয়ায় ওই প্রবাসীকে অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ সহ বিভিন্ন প্রকার হুমকি ধামকি দিয়ে চলে যায় আতিক আরমান। পরবর্তীতে গত ১৭ জানুয়ারি ওই প্রবাসীর নিকট নির্মানাধীন বিল্ডিংয়ে একটি ফ্লেট বিনা ভাড়ায় থাকার দাবী করে আরমান। এতেও রাজী না হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার (২ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে যুবলীগ নেতা আতিক আরমান তার দুই সহযোগীকে নিয়ে পূর্বগাইলকাটা ঘোষপাড়া মোড়ে কুলিয়ারচর ফ্রেন্ডস ফোরাম অফিসে গিয়ে ওই প্রবাসীকে অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ সহ মারধোর করে পূনরায় ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে বিভিন্ন প্রকার হুমকি দিয়ে চলে যায়। পরে স্থানীয়রা ওই প্রবাসীকে উদ্ধায় করে কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে ভর্তি করেন।এ ঘটনায় উর্ধতন নেতাদের কাছে বিচার চেয়ে এবং কুলিয়ারচর থানায় অভিযোগ দিয়ে কোনো প্রতিকার না পেয়ে পর দিন শুক্রবার বিকালে উপজেলার আগরপুর বাসস্ট্যান্ডে একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে রোববার সকালে একটি বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনের ঘোষনা দেন রামদী ইউনিয়নবাসী। পরবর্তীতে স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব নাজমুল হাসান পাপন ও কুলিয়ারচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমতিয়াজ বিন মুছা জিসান কর্তৃক বিচারের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি বাতিল করেছেন বলে জানান রামদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. আলাল উদ্দিন। পরে এলাকাবাসী শনিবার সকালে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে এ সব বক্তব্য রাখেন।
এঘটনায় আমেরিকা প্রবাসী উপজেলার মুজরাই গ্রামের বর্তমান কুলিয়ারচর পৌর এলাকার খড়কমারা গ্রামের (কামাল প্লাজা) মৃত আঙ্গুর মিয়ার ছেলে বাদী হয়ে কুলিয়ারচর পৌর এলাকার পূর্ব গাইলকাটা গ্রামের যুবলীগ নেতা মো. আতিক আরমান (৪২), তাতারকান্দি গ্রামের অহিদ মিয়ার ছেলে মো. সুজন মিয়া (২৮) ও চারারবন গ্রামের মৃত চেরাগ আলীর ছেলে মো. মোখলেছ মিয়ার বিরুদ্ধে গত শুক্রবার (৩ফেব্রুয়ারি) বিকালে কুলিয়ারচর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগ দাখিলের পর এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত মামলাটি এফআইআর হয়নি।
এব্যাপারে কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।