উলিপুরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বোরো ধানের চারা রোপন করতে ব্যাস্ত সময় পার করছেন বোরো চাষিরা। তীব্র শীতের দাপট থাকলেও বোরো ধানের বীজতলায় তেমন প্রভাব পড়েনি। শীতের ঠান্ডাকে উপেক্ষা করে জমি প্রস্তুতে পানি সেচ আর হাল চাষ চলছে। বোরো ধানের চারা ভালো থাকায় জমি প্রস্তুত করে বোরো রোপনের ধুম ফেলেছে চাষিরা।
সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কৃষকেরা উৎসাহ নিয়ে বোরো আবাদ শুরু করেছেন। জমিতে সেচ, হালচাষ, সার প্রয়োগ, বীজ ওঠানো ও প্রস্তুতকৃত জমিতে চারা রোপণে যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছেন কৃষকেরা। কেউ সেচের জন্য ড্রেন নির্মাণ কিংবা পাম্পের বা শ্যালো মেশিনের জন্য ঘর তৈরি করছেন। অনেকে তৈরি জমিতে পানি সেচ দিয়ে ভিজিয়ে রাখছেন। এবারে শীতের দাপট বেশি থাকলেও বোরোধানের বীজতলায় তেমন প্রভাব পড়েনি। তবে অনেকে বীজতলায় ঢাকনা হিসাবে পলি ব্যাবহার করে তীব্র শীত থেকে রক্ষা করেছেন চাষিরা। উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায় এবারে উপজেলায় পৌরসভা সহ বোরো ধান চাষের লক্ষ্য মাত্রা প্রায় ২২ হাজার ৩’শ ৫০ হেক্টর। উপজেলায় প্রান্তিক চাষিদের মাঝে বিরি-৯০, ৯১ ও ৯২ জাতের বীজ ৫ কেজি ও সার ২০ কেজি করে প্রনোদনা হিসাবে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। তার মধ্যে উন্নতজাতের উচ্চফলনশীল হাইব্রিড জাতের বীজ দেয়া হয়েছে ৪ হাজার ২’শ জন এবং উফসী জাতের বীজ ৬ হাজার ৩’শ জন প্রান্তিক চাষিদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান। এদিকে বোরো ধান চাষিরা বলেন, বীজতলায় চারা রোপন অনেক ভালো হওয়ায় বোরো চাষে ব্যাস্ত সময় পার করছি। তারা বলেন, এবারে সার, ডিজেল ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বোরো ধান চাষ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজার মূল্য ঊর্ধ্বগতি হওয়ায় খেটে খাওয়া শ্রমিকদের চড়া দামে নিতে হচ্ছে। তাতে করে বিপাকে পড়েছি বোরো ধান চাষিরা।
উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের হারুনেফড়া গ্রামের কৃষক জরিফ উদ্দিন বলেন, এ বছর প্রায় ৫ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করছি। জমিতে চারা রোপন পর্যন্ত বিঘা প্রতি (৩৩ শতাংশ) প্রায় ৩ হাজার ৫’শ টাকা খরচ হয়েছে। প্রচন্ড শীতের কারণে শ্রমিকরা কাজ করতে চাচ্ছেন না। দেরি করে আবার জমি রোপন করা শুরু করলে কাজের চাপে শ্রমিকও পাওয়া যাবে না। যার কারণে একটু আগেই মজুরি বেশি দিয়ে কাজ করে নিতে হচ্ছে। তবে যে ভাবে তেল, সার ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে বোরো চারা লাগাতে হিমশিম খাচ্ছি। আবার শ্রমিকদের অনেক কদরও বেড়ে গেছে। তাদেরকে অনেক চড়া দামে মজুরি দিতে হচ্ছে। তবে বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং আবহাওয়া ভাল থাকলে ফসলও ভাল হবে। আর ভাল ভাবে ঘরে উঠাতে পারব বলে জানান তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মোশাররফ হোসেন বলেন, এবারে উপজেলায় বোরো ধান চাষের লক্ষ্য মাত্রা প্রায় ২২ হাজার ৩’শ ৫০ হেক্টর। সরকারি ভাবে ৪ হাজার ২’শ পরিবারকে উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড ধান বীজ এবং ৬ হাজার ৩’শ জনকে উফসী ধান বীজ বিতরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন ভালো ফলন হলে এ সকল উন্নত জাতের ধান বিঘা ৩৩ শতাংশ প্রতি প্রায় ২৭ মণ পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলনের আশা করছেন এ কৃষি কর্মকর্তা।