ঢালিউডে শিশুতোষ সিনেমার সংখ্যা একেবারে হাতেগোনা। নির্মাতা-প্রযোজকদের এই সংক্রান্ত গল্প-ছবিতে আগ্রহ দেখা যায় না। তবে নিজের নির্মিত প্রথম সিনেমায় সেই সাহসটুকু দেখালেন আবু রায়হান জুয়েল। তার পরিচালিত ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ নির্মিত হয়েছে শিশুদের রোমাঞ্চকর অভিযানের গল্পে।
ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় নায়িকা পরীমণি ও নায়ক সিয়াম আহমেদ জুটির নতুন সিনেমা ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’। যেটি নির্মাণ করেছেন আবু রায়হান জুয়েল। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সিনেমাটি মুক্তি পেতে যাচ্ছে। তার আগে মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর মহিলা সমিতিতে প্রকাশ করা হলো সিনেমাটির পোস্টার ও ট্রেলার। এ সময় আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, নির্মাতা মোর্শেদুল ইসলাম, বসুন্ধরা গ্রুপের সেক্টর এ-এর হেড অব পাবলিক রিলেশনস প্রকৌশলী মো. জাকারিয়া জালাল, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান লাকী ইনাম, বাংলাদেশ ফিল্ম ক্লাব লিমিটেডের সভাপতি পদে কামাল মো. কিবরিয়া লিপু, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জলসহ অনেকে।
সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘রাতুলের রাত রাতুলের দিন’ উপন্যাস অবলম্বনে। এর জন্য প্রথমবারের জন্য গানও লিখেছেন তিনি। একদল শিশু সুন্দরবনে নৌবিহারে যায়। তাদের দেখাশোনার জন্য আছেন কয়েকজন বড় মানুষ। এই ভ্রমণে গিয়ে তাদের জাহাজ আটকা পড়ে, আক্রমণ করে ডাকাত। এসবের মাঝে সুন্দরবনের নৈস্বর্গিক সৌন্দর্যে ঘুরে বেড়ানো, আনন্দ-উল্লাস। সবকিছুরই আঁচ রয়েছে ২ মিনিট ৬ সেকেন্ডের এই ট্রেলারে।
অনুষ্ঠানে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমরা লিখি, কিন্তু সিনেমায় সেটা দেখানো নির্মাতার জন্য অনেক কঠিন। গানটা যখন লিখি, তখন জানতাম না এতো ভালো হবে। গানটার দৃশ্য ধারণ হওয়ার পর আমাকে দেখাতে নিয়ে এসেছিলেন পরিচালক। আমার নাতি দেখে খুব পছন্দ করেছে। তখন বুঝলাম ভালোই হয়েছে গানটা। আশা করি সিনেমাটিও ভালো হবে, আপনারা হলে গিয়ে সিনেমাটি দেখবেন৷’
দেশের সিনেমা ইতিহাসে কালজয়ী হয়ে আছে ‘দীপু নাম্বার টু’। এই শিশুতোষ সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন মোরশেদুল ইসলাম। আমন্ত্রিত অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “আমি খুব এক্সাইটেড। কারণ বাচ্চাদের আরেকটা সিনেমা আসছে। শিশুতোষ সিনেমা তো তেমন হয় না। ২৬ বছর আগে আমি ‘দীপু নাম্বার টু’ বানিয়েছিলাম। সিনেমাটা নাকি এখনও অনেকের ভালো লাগে। আশা করি, সেই ভালো লাগাকে ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ ছাপিয়ে যাবে।”
এ সিনেমায় রাতুল চরিত্রে অভিনয় করেছেন সিয়াম আহমেদ। তিনি বলেন, ‘করোনা থেকে অনেকেই যেমন ফিরে এসেছে, তেমনি সিনেমাটাও ফিরেছে। রাতুল চরিত্রটা আমার অনেক আগে থেকে জানা। সেই চরিত্রটা করতে পারব, এটা কোনোদিন ভাবিনি। সেটাই হলো এবং এটা স্বপ্ন পূরণের মতো। আমি সিয়াম আহমেদ হয়ে গিয়ে ছিলাম, শিশুরা আমাকে রাতুল ভাইয়া করে ঢাকায় পাঠিয়েছ।’
পরীমণিকে দেখা যাবে তিশা চরিত্রে। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেকে নিয়ে এসেছি অনুষ্ঠানে। সিনেমাটাও দেখব। ও যখন বড় হবে, তখন দেখাবো যে তার জন্য একটি উপহার এই সিনেমা। করোনার সময় মনে হয়েছিল, সিনেমাটা শেষ পর্যন্ত আসবে কিনা। এখন সিনেমাটআ মুক্তি পাচ্ছে, সেটাই বড় পাওয়া।’
নিজের নির্মিত প্রথম সিনেমা নিয়ে আবু রায়হান জুয়েল বলেছেন, ‘এটি শিশুদের সুস্থ বিনোদনের জন্য শিশুতোষ চলচ্চিত্র। তবে শুধু শিশুরাই নয়, সিনেমাটি সব বয়সী মানুষই দেখতে পারবেন। এই ছবির শুটিং করতে গিয়ে আমরা মহামারি করোনার কবলে পড়েছিলাম। যার কারণে অনেক বিলম্ব হয়েছে। ওই সময়টাতে শিশুশিল্পীদের বাবা-মায়েরা আমাদের যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।’
উল্লেখ্য, ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ নির্মিত হয়েছে মুহম্মদ জাফর ইকবালের জনপ্রিয় কিশোর উপন্যাস ‘রাতুলের দিন রাতুলের রাত’ অবলম্বনে। সরকারি অনুদান পাওয়া এ সিনেমায় সিয়াম-পরী-তানভীর ছাড়াও অভিনয় করেছেন আজাদ আবুল কালাম, শহীদুল আলম সাচ্চু, কচি খন্দকার, আশীষ খন্দকারসহ একঝাঁক শিশু।