মিরসরাইয়ে আমন ধানকাটা উৎসব ধানকাটা শুরু হয়েছে। ধান ঘরে তোলা নিয়ে চারদিকে এখন উৎসবের আমেজ। বাতাসে পাকা ধানের মণ্ডম গন্ধ।
ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে এতে প্রায় দুই শতাধিক কৃষক-কৃষাণী অংশ গ্রহণ করে। বৃহস্পতিবার ( ১ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার ১১ নং মঘাদিয়া ইউনিয়নের মিয়াপাড়ায় জমিতে পাকা আমন ধান কাটার মাধ্যমে উৎসবের উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট আইটি বিশেষজ্ঞ, চলচিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব মাহবুব রহমান রুহেল। মঘাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইন মাষ্টারের উদ্যোগে এই উৎসবে কৃষক ছাড়াও স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।উৎসবে গিয়ে দেখা গেছে, শতাধিক কৃষক গায়ে সাদা গেঞ্জি, পরনে লুঙ্গি, মাথায় গামছা ও হাতে কাঁিচ নিয়ে ধান কাটার জন্য সড়কের পাশের সারিবদ্ধভাবে অবস্থান করছেন। প্রধান অতিথি ধান কাটা উদ্বোধন করার সাথে সাথে একসাথে সবাই প্রায় এক একর আমন ধান কাটেন। এরপর এক রঙ্গের শতাধিক নতুন শাড়ী পরিধান করে ছুটে আসেন গ্রামের কৃষাণীরা। কারো হাত খালি নেই। একজন এক ধরনের পিঠা তৈরি করেছেন। কারো হাতে চিতল, দুধচিতল, পুলি, নকশি, ভাপা পিঠা, পাটিসাপটা, পাখন, তেলের পিঠা হরেক রকমের পিঠা পিঠা নিয়ে উপস্থিত হন তারা। জমির চারপাশে একতারা ও বাদ্যযন্ত্র হাতে নেচে নেচে গান গাইছেন একদল শিল্পী। এ যেন গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া সেই ঐতিহ্য ফিরে এসেছে।উৎসবে উপস্থিত কৃষক নুরুল মোস্তফা ও স্বপন চন্দ্র নাথ বলেন, আমার যখন ছোট ছিলাম তখন এমন উৎসব দেখেছি। এমন ধানকাটা উৎসব হারিয়ে গেছে। দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর পর আবার ধান কাটা উৎসবে একত্রিত হলাম, সবাই মিলে ধান কাটলাম অনেক ভালো লাগছে।উৎসবের উদ্যোক্তা মঘাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, আমাদের গ্রামেও শহরের যান্ত্রিকতা চলে আসছে। হারিয়ে গেছে গ্রাম বাংলা সকল ঐতিহ্য। তাই হারিয়ে যাওয়া সেই ঐতিহ্যকে ফিরে পেতে আমার এই আয়োজন। তিনি আরো বলেন, নতুন প্রজন্ম জানে না, ধান কাটা উৎসব কি, নবান্ন উৎসব কি নতুন প্রজন্মকে গ্রাম বাংলা সম্পর্কে ম্যাসেজ দিতে এমন আয়োজন করেছি। শতাধিক কৃষককে নতুন লুঙ্গি, গেঞ্জি, গামছা ও শতাধিক নারীর জন্য নতুন শাড়ির তৈরি করেছি।ধানকাটা শেষে মঘাদিয়া নুরুল আবছার চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহবুব রহমান রুহেল বলেন, আমি ছোট বেলায় দেখেছি আমার দাদারা ধান কাটা নিয়ে অনেক আনন্দ করতো। এখন তা হারিয়ে গেছে। মঘাদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইন মাষ্টার এমন চমৎকার আয়োজন করা জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়ে কিছুতেই তিন ফসলী জমি নষ্ট করা যাবে না। আমাদের অনাবাদী জমি চাষাবাদ করতে হবে। আমার কষ্ট লাগে কৃষকরা উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হন। এক শ্রেণীর মধ্যস্বত্ত্বভোগী লাভবান হয়। কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে, কৃষক ছাড়া একটি দেশ কোন প্রকারেই খাদ্যে নিশ্চয়তা দিতে পারে না। তাই কৃষকদের কৃষি কাজে উৎসাহ দিতে বর্তমান সরকার ভূর্তকি ও বিনা মূল্যে সার, কিটনাশক ও বীজ সরবরাহ করে আসছেন।এসময় আরো বক্তব্য রাখেন মঘাদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইন মাষ্টার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নুরুল গনি, তথ্য-প্রযুক্তি ও গবেষনা বিষয়ক সম্পাদক আরিফ মাঈনুদ্দীন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি তোফায়েল উল্ল্যা চৌধুরী নাজমুল, ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মাসুদ, সাধারণ সম্পাদক নুরুল আবছার লিটন, কৃষকদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন খোন্দকার হারুন।আলোচনা সভা শেষে ধান কাটায় চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলকে ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়েছে।