আন্তর্জাতিক ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা- ওআইসির যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক মন্ত্রীদের ৫ম সম্মেলনে সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও ওআইসির স্থায়ী প্রতিনিধি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী আজ এ আহবান জানান।বাংলাদেশে অবস্থিত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে সৃষ্ট অচলাবস্থা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বিশেষ করে তাদের তরুণদের সম্ভাবনাকে বিনষ্ট করছে এবং তাদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী হতাশা তৈরী করছে, যা স্থানীয় ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।মুসলিম বিশ্বের শরণার্থী সংকট সমাধান এবং তরুণ শরণার্থীদের প্রয়োজন মোকাবেলায় ওআইসিকে তার প্রচেষ্টা বাড়ানো প্রয়োজন।রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, মুসলিম দেশগুলোর অনেকেই বিশাল সংখ্যক শরণার্থী সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। অনেক শরণার্থী তরুণরা হতাশা থেকে মাদক, সন্ত্রাস ও মানব পাচারের মত অনেক ধরণের অবৈধ ও বেআইনি কাজে লিপ্ত হয়ে সমাজে ভয়ংকর সমস্যা সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশ প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় প্রদান করেছে এবং দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও তাঁদের প্রত্যাবাসনের রাজনৈতিক সমাধান দেখা যাচ্ছেনা যা এই বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর যুব সমাজের জীবন ও ভবিষ্যৎ ঝুকির মুখে ফেলে দিয়েছে।
রাষ্ট্রদূত জাবেদ পাটোয়ারী আরো বলেন, বৈশ্বিক সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য নিরাপত্তা, বিভিন্ন দেশে চলমান সংঘাত এবং বিভিন্ন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গৃহীত বিভিন্ন নীতি ও কর্মসূচিতে তরুণদের অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
রাষ্ট্রদূত বলেন, যুব সমাজের জন্য কারিগরি শিক্ষা এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষনের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি করে উপযুক্ত কর্মসংস্থান বা আত্মকর্মসংস্থান এর জন্য বিনিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, সমগ্র মুসলিম বিশ্বজুড়ে নতুন প্রযুক্তি ব্যাবহারের সুযোগ এবং এ বিষয়ে বিনিয়োগ যুব সমাজের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে। এ বিষয়ে এলডিসিভুক্ত দেশ ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানের জন্য ওআইসির সদস্যভুক্ত উন্নত দেশ এবং ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংকের সহযোগিতা কামনা করেন রাষ্ট্রদূত। পাশাপাশি, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করার উপরও তিনি জোর দেন যাতে করে আমাদের তরুনরা এর নেতিবাচক প্রভাব থেকে বিশেষ করে সন্ত্রাস, চরমপন্থা, ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানোর মত বিষয়গুলো থেকে সচেতনভাবে দূরে থাকতে পারে।রাষ্ট্রদূত সভাকে জানান যে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৩৩ শতাংশই তরুণ যাদেরকে সকল জাতীয় উন্নয়ন নীতির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের গৃহীত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কর্মসূচিতে যুব সমাজকে উন্নয়নের অংশীদার করা হয়েছে যা আমাদের উন্নয়ন ও সমাজ বিনির্মান প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করছে।
‘ঢাকা ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল-২০২০’ এর কর্মসূচি সফল করার জন্য আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত সভাকে অবহিত করেন।
জেদ্দাতে দুই দিন ব্যাপি অনুষ্ঠিত ওআইসির যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রীদের এই ৫ম সম্মেলনে সৌদি আরবের ক্রীড়া মন্ত্রী যুবরাজ আব্দুল আজিজ বিন তুর্কি আল ফয়সাল সভাপতিত্ব করেন। ওআইসি সদস্য রাষ্ট্র সমূহের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রীগন ছাড়াও ওআইসি মহাসচিব, ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক এর প্রেসিডেন্টসহ ওআইসির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের প্রধানগন এ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও ওআইসির স্থায়ী প্রতিনিধি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। সম্মেলন শেষে একটি যৌথ ঘোষণাপত্র ও ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে একটি রেজুলেশন গৃহীত হয়।