ইউনানি ল্যাবরেটরিতে তৈরি হচ্ছে নকল ওষুধ এতে ব্যবহার করা হচ্ছে আটা, ময়দা, রং ও চিনির মিশ্রণে তৈরি হচ্ছে নকল ওষুধ। পরে তা মিটফোর্ডকেন্দ্রিক মুনাফালোভী চক্র ওষুধ ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে রাজধানীসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে।
গত এক বছরে গোয়েন্দা পুলিশের ১৯টি অভিযানে অসাধু এ চক্রটির প্রায় ৫০ জনকে গ্রেফতারের পর নকল ওষুধ তৈরির ভয়াবহ তথ্য পাওয়া গেছে। পুলিশ বলছে, নকল ওষুধ তৈরি হচ্ছে ৫০টিরও বেশি বৈধ আয়ুর্বেদিক কারখানায়।
কুমিল্লায় হিমালয় নামে একটি ইউনানি ল্যাবরেটরিতে তৈরি হচ্ছে ওষুধ। আয়ুর্বেদিকের অনুমতি থাকলেও গোপনে তৈরি করা হচ্ছে অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ। গোয়েন্দা পুলিশ কারখানাটিতে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করেছে বিপুল পরিমাণ নকল ওষুধ। গ্রেফতার করা হয় ১০ জনকে।
এর আগে চুয়াডাঙ্গার অভিযান চালিয়ে গোয়েন্দারা সন্ধান পায় নকল ওষুধের কারখানার। ২০২১ সালের আগস্ট থেকে ২০২২ সালের জুন– এ ১০ মাসে মোট ১৯টি অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় ৪৪ জনকে। এ সংক্রান্ত মামলা হয়েছে ১৫টি। ৪০ ধরনের নামিদামি কোম্পানির কোটি টাকার নকল ওষুধ উদ্ধার করা হয় তাদের কাছ থেকে।
ঢাকার বাইরে বিভিন্ন ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক কারখানায় তৈরি করা এসব ভেজাল ওষুধ প্রথমে আসে রাজধানীর মিটফোর্ডে। এখান থেকেই অসাধু চক্র কুরিয়ারের মাধ্যমে চালান পাঠিয়ে দেয় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ফার্মেসি মালিকদের কাছে। অধিক মুনাফার আশায় জেনেশুনেই ফার্মেসি মালিকরা তা কিনে নিচ্ছেন।
হুবহু মোড়কে গ্যাস্ট্রিক, ক্যানসার, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগের নকল ওষুধ বাজারে ছাড়ছে সংঘবদ্ধ চক্রটি। মোড়ক দেখে ভোক্তাদের আসল নকল পরখ করা অনেকটাই কষ্টসাধ্য।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (লালবিভাগ) রাজীব আল মাসুদ বলেন, দেশের সবজেলায় ১০ থেকে ১৫টি কোম্পানি (ইউনানি) পেয়েছি, যারা এ ধরনরে ওষুধ তৈরি করে। অভিযানে তাদের কারখানা বা আস্তানা ভেঙে দেয়া হয়েছে। আরও কিছু ইউনানি কোম্পানি সম্পর্কে আমাদের সন্দেহ আছে, তাদের নাম দিয়েছি ওষুধ প্রশাসনকে।
এক বিশেষজ্ঞ জানান, এসব ভেজাল ওষুধে মেশানো হচ্ছে কাপড়ের রং ও ক্ষতিকর কেমিক্যাল। ফলে জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কাও রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এক কে লুৎফুল কবির বলেন, আমাদের মিটফোর্ডকেন্দ্রিক কাঁচামাল বেচাকেনা হয়। এই জায়গাটা বা এর উৎসকে বন্ধ করতে না পারলে এটা চলতেই থাকবে। বন্ধ হলে তাদের কাছে কাঁচামালটা আর যাবে না। যদি কেমিক্যাল মিশ্রিত জিনিস দিয়ে যদি ওষুধ বানানো হয়, তাহলে অবশ্যই সেটা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক হবে।
খোলাবাজারে ওষুধের কাঁচামাল বিক্রি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরকে আরও শক্তিশালী করার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।