চলমান জীবনের খেরোখাতায় শব্দের ক্যানভাসে একজন লেখক তুলে আনেন বহমান সময়ের স্থিরচিত্র। বিগত অনেক দিন ধরেই কর্ম জীবনের নানা আঙিনায় বহুমাত্রিক শৈল্পিক চিত্ররূপময় স্মৃতি এবং মনের একান্ত ভাবনাগুলো প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট রূপম চক্রবর্ত্তী বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় তুলে ধরছেন। একুশের বইমেলায় দেশ পাবলিকেশন্স থেকে এসেছে রূপম চক্রবর্ত্তী’র তৃতীয় গ্রন্থ সমাজ, রাজনীতি ও সংস্কৃতির খেরোখাতা। বইয়ের প্রকাশক ছিলেন অচিন্ত্য চয়ন, মুদ্রণে দেশ প্রিন্টার্স ঢাকা, বইটির মূল্য ২০০ টাকা, রাজিব রায়ের প্রচ্ছদে বাস্তব জীবন ছোঁয়া অনেক লেখায় সমৃদ্ধ হয়েছে বইটি। বইটি যেমন সুখপাঠ্য তেমনি তথ্যবহুল।
রূপম চক্রবর্ত্তীর জন্ম ০১ জানুয়ারি ১৯৮০ সাল। তিনি সাতকানিয়া উপজেলার পূর্ব নলুয়া গ্রামে শৈশব ও কৈশর জীবন কাটান। পিতা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সুনিপুন চক্রবর্তী ও মাতা গৃহিণী পুষ্প চক্রবর্ত্তী। বড় ভাই সাতকানিয়া উপজেলার শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার চক্রবর্ত্তী। বড় বোন অর্চিতা ভট্টাচার্য্য দেশের প্রখ্যাত হোমিও চিকিৎসক প্রয়াত ডা. তারাপদ ভট্টাচার্য্য মহোদয়ের কৃতি সন্তান ব্যাংকার অরুপ ভট্টাচার্য্য’র সহধর্মিণী। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি শিক্ষিকা প্রিয়াংকা ভট্টাচার্য্য মহোদয়ার সাথে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ। তাদের একমাত্র সন্তান শুভম চক্রবর্ত্তী। লেখক ছাত্রজীবন থেকে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত। তিনি নিজের মনের ভাবনা, মানুষের বিভিন্ন চাওয়া পাওয়া, সামাজিক বিভিন্ন সমস্যা দেশের স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকার মাধ্যমে তুলে ধরছেন।
গ্রন্থটি সম্পর্কে জানতে চাইলে লেখক বলেন- বাংলাদেশের বিভিন্ন চিত্র প্রতিনিয়তই বদলে যাচ্ছে; বাঁক বদল ঘটছে নানাদিক থেকে। ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে আমাদের ব্যক্তিগত জীবনের অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। সেই পরিবর্তনে কিছু চিত্র আমি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। প্রাবন্ধিক রূপম চক্রবর্ত্তী বিভিন্ন প্রবন্ধের মাধ্যমে “সমাজ রাজনীতি ও সংস্কৃতির খেরোখাতা” বইটিতে তাঁর দর্শন ও বিশ্লেষণী চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগিয়েছেন- সমাজ, রাজনীতি, শিক্ষা, সাহিত্য, শিল্প, ইতিহাস, বিজ্ঞান ও কৃষিসহ সমাজের প্রতিটি বিষয়ে। সাহিত্যপাঠের মাধ্যমে একজন পাঠক রস আস্বাদন ও আনন্দ উপভোগ করে থাকে; হোক সেটা গল্প, কবিতা, উপন্যাস গান প্রবন্ধ বা নিবন্ধ; সাহিত্য পাঠের মাধ্যমেই মানুষ অবসর বিনোদন বা মনের খোরাক সংগ্রহ করে থাকে। সাহিত্যের পাশাপাশি সংগীত প্রিয় লেখক তাঁর বইতে লতা মঙ্গেশকর, গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় এবং বাপ্পি লাহিড়ীর কথা তুলে ধরেছেন যাতে তরুণ সমাজ কালজয়ী এই মানুষগুলোর কথা জানতে পারেন। সংগীতের পাশাপাশি হারিয়ে যাওয়া বাংলার লোক ঐতিহ্যের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে এই বইতে তুলে ধরা হয়েছে। বন্যপ্রাণী, জলবায়ু সংকট, মাদকের কাছে যুব সম্প্রদায়ের পরাজয়ের ব্যাপারে বেশ কিছু লেখা অবশ্যই পাঠক সমাদৃত হবে বলে আমি মনে করছি। প্রাবন্ধিক রূপম চক্রবর্ত্তী তাঁর বইয়ের মাধ্যমে ২১ শের চেতনাকে ধারণ করার আহবান জানিয়েছেন এবং দেশের বিভিন্ন জায়গায় অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকা বধ্যভূমির সংস্কারের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। পরিশেষে বলতে চাই বইটি পড়ে মনে হবে সংশয়-সংকট ও চিন্তার দারিদ্র্যের এই কঠিন সময়ে প্রসঙ্গগুলো সবার জীবনের সাথে কোনো না কোনোভাবে জড়িত। সমাজ রাজনীতি ও সংস্কৃতির খেরোখাতা বইটি পাঠক সমাদৃত হোক। প্রত্যাশা করছি লেখক আগামীতে আরও নতুন বই আমাদের উপহার দিয়ে পাঠকের তথ্যভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করবে। বইটি পড়ে পাঠকরা উপকৃত হলে লেখকের পরিশ্রম সার্থক হবে। আমি বইটির বহুল প্রচার কামনা করছি, রূপম চক্রবর্তীর সৃজনশীল সকল কার্যক্রম যেন অব্যাহত থাকে। বইটি পাঠক ও শ্রোতাদের নিকট যেন সমাদৃত হয় নিরন্তর শুভ কামনা রইল।
লেখক: সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তি, সংগঠক ও সমাজকর্মী ।