চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় ওটারচর গ্রামের দীলমোহাম্মদ দীলু এবার ব্রি ধান ২৮ এর পরিবর্তে ব্রি-ধান ৮১ চাষ করে সফলতার সপ্ন দেখছেন। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী হলেও নিজস্ব চাহিদা মিটানোর জন্য নিজের ২ বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেন। যা দিয়ে তার পরিবারের চাহিদা মিটে যায়। তিনি জানান, আমি কৃষি কাজকে অত্যন্ত ভালোবাসি। কিন্তু সারাদিন ব্যবসায়িক কাজে বেস্ত থাকার কারণে বনিজ্যিক উদ্যেশ্যে চাষাবাদ করতে না পারলেও নিজের পরিবারে সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য বাজারের ভেজাল চালের পরিবর্তে নিজ জমিতে ভালোমানের প্রিমিয়াম কোয়ালিটির চাল উৎপাদনের জন্য প্রতি বছর ২৮ ধান চাষ করি। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে ২৮ ধানে ব্লাস্টের প্রকোপ দেখে এবছর বিকল্প হিসাবে “কৃষি উদ্যোক্তা পরিষদ মতলব উত্তর উপজেলা, চাঁদপুর”এর এক কৃষি উদ্যোক্তার পরামর্শে গত বছরের এ জাতের প্রদর্শনীর সফলতা দেখে প্রিমিয়াম কোয়ালিটির আগাম জাতের ব্রি-ধান ৮১ চাষ করেছি। আলহামদুলিল্লাহ, শীষ আসা পর্যন্ত আমার জমির লক্ষণ সন্তোষজনক। আশাবাদী সর্বোচ্চ ফলন পাবো।
তিনি আরো জানান, ব্লাস্ট প্রতিরোধের জন্য ইতিমধ্যে ১০ দিন অন্তর অন্তর ২ বার “সেলটিমা” স্প্রে করেছি। সেলটিমা প্রয়োগে আমার জমিতে কোন রকম ত্রুটি দেখতে পাচ্ছি না।সবুজ সতেজে শীষ গুলো দুল খাচ্ছে। শীষের হাসি মাখা দোল দেখে আমার মনে আনন্দ ঢেউ বইছে।
মূলত, উচ্চ ফলনশীল একটি নতুন জাতের ধান ব্রি ৮১। গত বোরো মৌসুমে দেশে রেকর্ড পরিমাণ ফলন দিয়েছে নতুন এই ধানের জাতটি। মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর আওতায় বিভিন্ন ব্লকে প্রদর্শনী স্থাপন করা হয়েছিল জাতটির। ওটারচরে স্থাপিত প্রদর্শনীর উচ্চ ফলন দেখেই এবার এ জাতের আবাদ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি। সেখান থেকেই বীজ সরবরাহ করেন। গতবছর এই জাতের ধানের বিঘাপ্রতি উৎপাদন হয়েছে ৩১ মণ। এ ধানের ফলন বেশি হওয়াতে কৃষকরাও এবার এ জাতের ধান চাষে ব্যাপক আগ্রহী হয়েছে। বাকি কৃষকেরা ও আগামীতে এ ধান চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এ ধানে সেচ ও পরিচর্যা কম লাগে। পাশাপাশি অন্য ধানের চেয়ে ফলন পেতে সময়ও লাগে কম। ব্রি ২৯ জাতের ধানের তুলনায় ১০-১৪ দিন আগেই এ ধান পাকে।
গত বছরের নতুন জাতের ধান চাষ করা চাষিরা জানান, এই জাতের ধান চাষ করে বিঘাপ্রতি ৩০ মণ করে ফলন পেয়েছি। এর আগে ব্রি ২৮ আবাদ করে ২০ থেকে ২২ মণ ধান পেতাম। নতুন ধানের ফলন খুব ভালো। ভাত খেতেও সুস্বাদু। বাজারের যে দর যাচ্ছে বিঘাপ্রতি কমপক্ষে পাঁচ হাজার টাকা বাড়তি দাম পাওয়া যাবে।
এ প্রসঙ্গে ব্রির মহাপরিচালক ড. শাহজাহান কবীর বলেন, রান্না করার পর এটি বাসমতির মতো দেড় গুণ লম্বা হয়ে যায়। ভাত ঝরঝরে ও খেতে সুস্বাদু। ধান থেকে তৈরি আতপ চাল বিদেশে রফতানিযোগ্য।
তিনি আরও বলেন, ব্রি ৮১ হচ্ছে ব্রি ২৮ জাতের পরিপূরক। কিন্তু এটি ব্রি ধান২৮ এর চেয়ে চিকন। ঝড়বৃষ্টিতে ব্রি ধান ২৮ হেলে পড়লেও নতুন ব্রি ধান ৮১ হেলে পড়ে না। আগের জাতগুলো থেকে অনেক বেশি রোগ প্রতিরোধী।