বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী জামাইবরণ ‘কেল্লাপোশী’ মেলা বিদ্যমান মরণঘাতি করোনাভাইরাসের কারণে এবারও অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। গত বছরও চলমান করোনাভাইরাসের কারণে সাড়ে ৪শ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি।
তিথি অনুযায়ী প্রতিবছর জৈষ্ঠ্য মাসের দ্বিতীয় রবিবার থেকে বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার বরেন্দ্র জনপদের কুসুম্বী ইউনিয়নের কেল্লা ও পোশী গ্রামের বিস্তৃীর্ণ ফাঁকা মাঠে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। এ মেলাটি মাদারের মেলা, জামাই মেলা নামেও পরিচিত।
এই মেলার মূল আকর্ষণ বড় মাছ আর মিষ্টি। তাছাড়া হরেক রকম খেলনা, কাঠের ফার্ণিচার, কার খেলা, মোটরসাইকেল খেলা, সার্কাস, যাত্রা সহ আনন্দ বিনোদনের নানা আয়োজন চলত। তিনদিনের মেলার সরকারি অনুমতি নিয়ে মেলা চলতো ৫দিন। মেলায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হতো। মেলা উপলক্ষ্যে আশে পাশের শতাধিক গ্রামে নতুন জামাইদের দাওয়াত দেয়া হতো। কিন্তু করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি ও লকডাউনের কারণে দ্বিতীয় বছরের মতো মেলার আয়োজন হচ্ছে না।
কথিত আছে, ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এই মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বৈরাগ নগরের বাদশা সেকেন্দারের ছেলে গাজী মিয়া ও দত্তক পুত্র কালু মিয়া রাজ্যের মায়া ত্যাগ করে ফকির সন্যাসীর বেশ ধারণ করে ঘুরতে ঘুরতে ব্রাহ্মণনগরে আসেন।
সেখানে ব্রাহ্মণ রাজমুকুটের একমাত্র কন্যা চম্পা গাজীকে দেখে মুগ্ধ হন। একপর্যায়ে তারা দু’জন দু’জনকে ভালোবেসে ফেলেন। পালিত ভাই কালু মিয়া বিষয়টি জানতে পেরে গাজীর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে মুকুট রাজার কাছে যান। মুকুট রাজা ফকিরবেশী যুবকের এ স্পর্ধা দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে বন্দি করেন। এতে গাজী মিয়া দারুণ আঘাত পান। তিনি মুকুট রাজার কাছ থেকে ভাই কালু মিয়াকে উদ্ধারের জন্য কেল্লাপোশী নামক একটি দুর্গ নির্মাণ করেন। পরে রাজার সঙ্গে যুদ্ধ করে ভাইকে উদ্ধার এবং তার কন্যাকে বিয়ে করেন।
আর তিথি অনুযায়ী ওই দিনটি ছিল জ্যৈষ্ঠের দ্বিতীয় রোববার। ওই সময় গাজীর বিয়ে উপলক্ষে কেল্লাপোশী দুর্গে নিশান উড়িয়ে তিন দিনব্যাপী আনন্দ-উৎসব চলে এবং সেখানে গড়ে তোলা হয় একটি মাজার। ওই দিনগুলোকে স্মরণ করে রাখতে প্রতি বছর জৈষ্ঠ্য মাসের দ্বিতীয় রোববার থেকে তিন দিনব্যাপী বসত এইমেলা। আর এই মেলা উপলক্ষে এলাকাবাসী নতুন জামাইকে ঘরে এনে আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠেন। পর পর দুবছর মেলাটি করোনা ভাইরাসের কারনে অনুষ্ঠিত হচ্ছেনা।
এ প্রসঙ্গে কুসুম্বী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার আলী সনজু জানান, মরণঘাতি করোনার বিদ্যমান পরিস্থিতি ও লকডাউনের কারনে এ বছরও মেলার কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এলাকার ঐতিহ্যবাহী মেলা হলেও করোনা সংক্রমন এড়াতে সরকারি নিদের্শনাই মানা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, এই মেলার ঐতিহ্য সম্পর্কে আমি শুনেছি। মেলার কয়েকদিন সবাই খুব আনন্দে থাকে। তবে মেলার অনুমতি নিতে এখনো কেউ আসেনি। তাছাড়া লকডাউনের মাঝে মেলার কোন অনু