আল-আমিন: বৈশ্বিক মহামারি (কোভিড-১৯) ‘ক’রো’না’ ভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্ত সারাবিশ্ব, বাধাগ্রস্ত উন্নয়ন অগ্রগতি, ক্ষতিগ্রস্ত স্বাস্থ্যখাত। হুমকিতে অর্থনীতি, স্তম্ভিত কর্মক্ষেত্র, বিপর্যস্ত জনজীবন। প্রাণের শহর গ্রাম নির্মল বিশুদ্ধ বাতাস আজ বিষাক্ত ‘ক’রো’না’র বিষে। প্রাণঘাতী (কোভিড-১৯) ‘ক’রো’না’ ভাইরাস সংক্রমণে নারী-পুরুষ, ছেলে-বুড়ো-যুব-শিশু-বৃদ্ধা সহ সারাবিশ্বে আক্রান্ত ৪৩ লাখ ২৮ হাজার ৫৯৮, মৃত ২ লাখ ৯১ হাজার ৮৯৪ জন, স্বুস্থ্য ১৫ লাখ ৭১ হাজার ৩৯৮ জন। বাতাসে লাশের গন্ধ, বাহিরে মৃত্যুর মিছিল। কিছুতেই কমছে না ‘ক’রো’না’র তান্ডবলীলা। লণ্ডভণ্ড জীবন যাত্রা ভংগুর সামাজ ব্যবস্থা সহ পারিপার্শ্বিক অবস্থা। কিছুতেই কমছেনা মৃত্যুর মিছিল, বেড়েই চলেছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা, বাড়ছে জন-দূর্ভোগ, ক্রমশই দূর্বল হচ্ছে সেবা খাত। ডাক্তার-নার্স আইনজীবী বুদ্ধি-জীবি নির্বাহী বিভাগ থেকে শুরু করে কৃষক-শ্রমিক- দিনমজুর সহ সর্বস্তরের মানুষ আজ নিমজ্জিত মরনব্যধি ‘ক’রো’না’র গ্রাসে। বিভিন্ন গবেষনা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীদের মতে মহামারি ‘ক’রো’না’ বিপর্যয়ে সর্বোচ্ছ ঝুকিপূর্ণ অবস্থানে বাংলাদেশ।
বিশ্বের সাথে একাত্বতা করে বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ১৭৮২২ মৃত্যু ২৬৯ জন এবং স্বুস্থ্য ৩ হাজার ৩ শত ৬১ জন। প্রতিদিনের আক্রান্তের গড় সংখ্যা এখন হাজারের কোঠায়.! কঠিন খারাফ অবস্থার মধ্য দিয়ে দিন কাটছে আমাদের।
আতঙ্কিত প্রতিটি প্রাণ, ভীত সংকোচিত জীবনমান। ৬ষ্ঠ ইন্দ্রিয় কানে কানে বলে যায় নিয়তি আজ কতটা নির্মম.! ‘জন্মিলে মরিতে হইবে এটাই বিধির বিধান’ চরম সত্য জেনেও মৃত্যু কারোরই কাম্য নয়। মরার আগেই মরে যায় প্রিয়জনের বিয়োগ ব্যথায়। নিমিষেই হয়ে যায় পর কিংবা অপরিচিতা.! প্রাণের প্রিয়তমাও ছেড়ে চলে যায় দূরে। মৃত্যুর সাথে সাথেই সংক্রমণের ভয়ে আত্নরক্ষায় নীরব শত্রুতে পরিনত হয় মামা-বাবা ভাই-বোন আত্নীয়-স্বজন সহ পাড়া-প্রতিবেশী। কেউই আসতে চায় না কাছে, থাকতে চায়না পাশে। প্রিয় দেহের পরিণত বিদায়ী মৃতদেহটাকে গ্রহণ করতে চায় না জন্মদাতা পিতা এমকি গর্ভধারিনী ‘মা’ ও ছিন্ন করে মায়ার বাঁধন এমন নজির অহরহ। চরম স্বার্থপর আপন সহোদর, নির্দয় মহাজন প্রিয় উত্তরাধিকার.! ভাগ্যে জোটে না শবকাজ কিংবা দাফন-কাফন। অনিশ্চিত জানাযা ও সাড়ে তিন হাত মাটির কবর। সৃষ্টিকর্তার নিকট পাঝর ভাঙা সরব আর্তনাদ লাঞ্চিত মৃত্যুর দ্বায়মুক্তি -আরোগ্য লাভের আশায় কি নিদারুন করুণ মিনতি.! কালের স্বাক্ষী, মহাকালের স্মৃতি অপ্রত্যাশিত মৃত্যু। তিক্ত স্বাদের অভিজ্ঞতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না সম্রাজ্ঞী সাম্রাজ্যবাদ মহাজ্ঞানী মহারাজ। কেউ জানেনা তাদের মুক্তির পথ.! অব্যাহত আছে স্বাস্থ্য-সেবা, লকডাউন, আইসোলেশন,কোয়ারেন্টাইন সহভ সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ সহায়তা। প্রাণ রক্ষায় নেই কোন প্রতিষেধক। পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্বাস্থ্যবিধি ও সচেতনতাই একমাত্র প্রতিরোধক। তিনহাতি বাঙালি আমরা বীনা-প্রয়োজনে বিভিন্ন অযুহাতে অহেতুক কারনে শুধুমাত্র খামখেয়ালি আর আপেক্ষিক নিষিদ্ধ কৌতুহলে ছদ্মবেশী প্রাণঘাতী ‘ক’রো’না’র সাথে চোর-পুলিশ আর জীবনের সাথে সাপ-লুডু খেলায় মত্ত আজ সমগ্র জাতি.! গার্মেন্টস, ফ্যাক্টরি, শিল্প কারখানার পর বাংলাদেশ সরকার সীমিত আকারে দোকানপাট, মার্কেট,শপিং-মল খোলে দেওয়ার খবরে মেঁও মেঁও বলে জেগে উঠেছে ঘুমের বিড়াল। স্বইচ্ছায় মার্কেট কিংবা ঈদ-শপিং এ যাবেন কেউ নিষেধ করবে না আবার না গেলেও জোর করবে না কেন যাবেন না। শপিং যেন কাফন না হয় কারো গায়ে। আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রত্যাহার না করলেও মৌন শীতীলতায় লকডাউন ভেঙে জনপদ সহ মার্কেট শপিংমল গুলোতে জনতার উপছে পড়া ভীড়। রাত পোহালেই হুঁ-হুঁ করে চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে ‘ক’রো’না’ য় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। দিশেহারা নীতি-নির্ধারক, বিপাকে নাগরিক জীবন। কেবলই আর্তনাদে ভারী হচ্ছে আকাশ বাতাস। নির্ভরতার জায়গাটুকুও আস্তে আস্তে সংকোচিত হয়ে আসছে। আত্নগাতী হয়ে উঠছে আপন ভুবন। “সকলের তরে সকলে মোরা- প্রত্যেকে মোরা পরের তরে” সম্মিলিত চেষ্টায় করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করি। প্রিয় জীবনকে সর্বাপেক্ষা ভালই যদি বাসি তাহলে কেন এই লাগাম ছাড়া ঘোরাঘুরি.?! জীবন একটাই তাকে ভাল না বেসে অনিশ্চয়তা আর হুমকির মুখোমুখি না করে আসুননা পরিবার নিয়ে ঘরে থাকি.? আল্লাহ না করুন প্রতিকূল পরিবেশে যদি বাহিরে একটা সড়ক দুর্ঘটনা কিংবা প্রাকৃতিক দূর্যোগের কবলে পড়েন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকেন কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত একটা মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়ে ১ মাস কারাভোগে থাকেন তাহলে কি করবেন.?! মেনে নিতেই হবে। প্রিয় জীবন রক্ষা ও আগামীর নিশ্চিত সুন্দরের প্রত্যাশায় সাময়িক বিলাসীতা, ফেরারি মানসিকতা আর মাল্টিকালার সপ্নগুলো উৎস্বর্গ হোক পরিবারের কল্যাণে। “জীবন আপনার সিদ্ধান্তও আপনার” -মনে রাখবেন জীবন কারো একার নয়, আপনার /আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে পরিবারের সকল সদস্যের জীবন। আপনি বাঁচলে- আপনার পরিবার বাঁচবে। বেঁচে থাকলে ঈদ-শপিং পূঁজা-পার্বণ বিয়ে বড়দিন জন্মদিন চাঁদের বুঁড়ি সহ বহু বসন্ত ভোগের সুযোগ আসবে জীবনে। সীমাহীন অনন্ত সূখ- সাচ্ছন্দ্য অনাবিল আনন্দ ও সুন্দর জীবন উপভোগের নিশ্চয়তায় পরিবার নিয়ে ঘরে থাকি। নিজে বাঁচি এবং অন্যকে বাঁচতে সাহায্য করি। ‘ক’রো’না’ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি, ঘরে থাকি সুস্থ্য থাকি, নিজে নিরাপদে থাকি পরিবারকে নিরাপদে রাখি। ‘ক’রো’না’ মুক্ত সমাজ গড়ি।