এস ডি স্বপন,
আবুধাবিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০২৩ সালের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের জন্য বাংলাদেশে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করা হবে। ফেব্রুয়ারি ২০১৯, প্রধানমন্ত্রী সংযুক্ত আরব আমিরাতে নির্বাচনের পর প্রথম সফরে এসে এই উদ্যোগের কথা জানান ।এ ব্যাপারে একটি ‘ডেভেলপার’ চুক্তি এবং একটি ‘ল্যান্ড লিজ’ চুক্তি সহ কিছু আইনী বিবরণ সম্পন্ন করা বাকি রয়েছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ সরকার এই অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য জমি সরবরাহ করতে প্রস্তুত। সমস্ত প্রয়োজনিয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার পরে, ২০২৩ সালের মধ্যে এই অঞ্চলটি প্রতিষ্ঠা করা হবে বলে আশা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন–আমিরাত রফতানিমুখী হালাল পণ্য উত্পাদন এবং কৃষি পণ্যাদি প্রক্রিয়াজাতকরণ করতে পারেব এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রভাবশালি দৈনিক গাল্ফ নিউজের সাথে এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় তিনি জানান কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে অর্থনৈতিক অঞ্চলের কার্যক্রমের জন্য আরো একটি চুক্তিও গত ফেব্রুয়ারিতে শেখ আহমদ ডালমুক আল মাকতুমের বেসরকারি কার্যালয়ের সাথে স্বাক্ষর করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আরো জানান, এই চুক্তিগুলো অনুযায়ী সংযুক্ত আরব আমিরাতকে স্বল্প ব্যয়যুক্ত শিল্প প্লট এবং বিনিয়োগের উপর উচ্চ আয় প্রদান করবে। বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে মার্কেট শেয়ার দখল করারও সুযোগ পাবে, যেখানে ‘কন্সাম্পশন’ রোজ বেড়েই চলেছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে সম্পর্ক :
বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ২০১৯ সালে উল্লেখযোগ্যভাবে জোরদার করা হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিনিয়োগকারীরা গত বছর বাংলাদেশের জ্বালানি, বন্দর, বিদ্যুৎ এবং অবকাঠামোয় ১০ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ৩৬.৭ বিলিয়ন দিরহাম বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
বাংলাদেশী প্রবাসীরা, সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগকারীর ভুমিকা রেখে আসছে। তারা বর্তমানে ৫০,০০০ ব্যবসা পরিচালনা করে যা ১,৫০,০০০ এর ও বেশি লোককে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন শেষে এই পর্যন্ত তিন বার আমিরাত সফরে এসেছেন ও আমিরাতের নানা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন ও বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকও করেছেন দুদেশের সম্পর্ক আরো দৃঢ় করতে।
আমিরাত সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন “সংযুক্ত আরব আমিরাত একটি অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ [এবং দীর্ঘদিন ধরে]। বিমানের মাধ্যমেও মাত্র পাঁচ ঘণ্টার ভ্রমণে আসা যায় বলেই যখনই সুযোগ আসে আমি আসি “।
বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য ভিসা :
প্রায় ৭ লক্ষ প্রবাসী বাংলাদেশী বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাস করছেন, মালয়েশিয়ার পর অনাবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম অংশ।
তবে এই নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে যে গত কয়েক বছর ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসা বাংলাদেশি শ্রমিকদের দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশে সংযুক্ত আরব আমিরাত দূতাবাস কর্তৃক প্রদত্ত পরিসংখ্যান দেখায় যে ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে বাংলাদেশীদের ৪৯৫ টি কর্মসংস্থান ভিসা সহ মোট ৮৪৯ টি ভিসা দেওয়া হয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ আমাদের আশ্বাস দিয়েছে যে বাংলাদেশী প্রবাসীদের জন্য সব ধরণের ভিসা শিগগিরই চালু হবে। আমরা এখনও এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে আশাবাদী বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশী প্রবাসীরা কঠোর পরিশ্রম ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছে এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজারে বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা বাড়ছে।
অনাবাসী বাংলাদেশীদের জন্য এনআইডি নিবন্ধনে
ইতোমধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রবাসী বাংলাদেশীদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। বড়-বড় লেনদেনের জন্য এখন এই আইডি কার্ডগুলি পুরো বাংলাদেশ জুড়ে প্রয়োজন, এবং শেখ হাসিনা বলেছিলেন যে এনআইডি ডাটাবেসে নিবন্ধিতরা আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোটেও অংশগ্রহণ করতে পারবেন।