মো:মজিবুর রহমানঃহাজীগঞ্জ উপজেলার বলাখাল চন্দ্রবান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে চলছে রমরমা কোচিং বাণিজ্য। সরকারের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই ৮ম-১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সবার জন্য কোচিং করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে কোচিং না করলেও প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ফি পরিশোধ করতে হয়। বিদ্যালয় কতৃপক্ষ কোচিং এর নামে অসহায় অভিভাবকদের কাছে থেকে প্রতি মাসে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের এ সরলতাকে পুঁজি করে বিদ্যালয় কতৃপক্ষ কোচিং এর নামে তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং নীতিমালায় বলা হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত সময়ের পূর্বে বা পরে শুধু অভিভাবকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠান প্রধান অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে প্রতি বিষয়ে মেট্রোপলিটন শহরে মাসিক ৩০০ টাকা, জেলা শহরে ২০০ টাকা এবং উপজেলা বা স্থানীয় পর্যায়ে ১৫০ টাকা করে রসিদের মাধ্যমে নেয়া যাবে। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধান স্ববিবেচনায় এই হার কমাতে বা মওকুফ করতে পারবেন। একটি বিষয়ে মাসে সর্বনিম্ন ১২টি ক্লাস হতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে প্রতিটি ক্লাসে সর্বোচ্চ ৪০ জন শিক্ষার্থী অংশ নিতে পারবে। এই টাকা প্রতিষ্ঠান প্রধানের নিয়ন্ত্রণে একটি আলাদা তহবিলে জমা থাকবে। প্রতিষ্ঠানের পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সহায়ক কর্মচারীর ব্যয় বাবদ ১০ শতাংশ টাকা কেটে রেখে বাকি টাকা অতিরিক্ত ক্লাসে নিয়োজিত শিক্ষকদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। কোনোক্রমেই এ টাকা অন্য খাতে ব্যয় করা যাবে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রণীত কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলে আরো জানা যায়, বিদ্যালয়ে কোচিং করা বাধ্যতামূলক । তবে কোচিং না করলেও ফি পরিশোধ করতে হয় এটি বাধ্যতামূলক। তাদের পরিবারে উপার্জনাক্ষম ব্যক্তি একজন এবং যে পরিবারে দু তিন জন ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া করে তাদের এ কোচিং বাণিজ্যের কবলে পড়ে নিঃস্ব হওয়ার কথাও বলেন। সরকার শিক্ষাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌছেঁ দেয়ার লক্ষ্যে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করলেও এ বিদ্যালয়ে তার ঠিক বিপরিত চিত্র দেখে হতবাক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, শুধু শুধু কিছু লোক দেখানো কয়েকটি ক্লাস নিয়ে আমাদের কাছ থেকে প্রধান শিক্ষক টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক অবদুর রাজ্জাক
বলেন, ‘দেশের কোথাও এমন কোচিং বাণিজ্য চলে না। বছরের শুরু থেকে সব শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের কোচিং করতে বাধ্য করেছেন শিক্ষকরা। মাত্র ১-২ ঘণ্টা কোচিংয়ের নামে শিক্ষকরা টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। সব মিলিয়ে এক সময়ের ঐতিহ্যবাহি বিদ্যালয়টি এখন ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। কোচিং বাণিজ্য নিয়ে কোন এক শিক্ষার্থীর অভিবাবক অবদুর রাজ্জাক প্রতিবাদ করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তাংক্ষনিকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়ে পড়লে ঐ অভিভাবকে স্কুলে ডেকে এনে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রতিবাদের বিষয়টি উড্ড করতে বলা হয় বিদ্যালয় কতৃপক্ষ। অবদুর রাজ্জাক জানান আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা বান্ধব, আমরা কেন ৩০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা কোচিং ফি দেব আমরা এই ভাবে পারছি না আমার মত অনেক অভিবাবক আছেন এই টাকা দিতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমি একজন রিকসা চালক আমার পক্ষে এত টাকা দিতে কষ্ট হয়। আমি এর সুষ্ঠু তদন্তদের মাধ্যমে বিচার চাই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালের অধ্যক্ষ মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, সরকারের নিয়ম মেনেই কোচিং করানো হচ্ছে। এবং অভিবাবকদেও সম্মিতি নিয়ে কোচিং করানো হচ্ছে। তিনি আরো সরকারি নিয়ম অনুযায়ি বিশেষ ক্লাস ফি প্রতিজন শিক্ষার্থীর একশত পঞ্চাশ টাকা হলেও আমরা চার বিষয় পড়ায়ে তিনশত টাকা নিই। তবে এ টাকায় কোন রশিদ দেয়া হলে ও রশিদ না থাকায় দিতে পারিনি। তবে রেজিষ্টার বইয়ে লিপিবদ্ধ করা হয়। এ ব্যাপারে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমি অভিযোগ পেয়েছি।নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যাবস্হা নেয়া হবে।