বিশেষ প্রতিনিধি: জাতীয় গৃহায়ণের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী এবং কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন ওরফে শাহ পরান বেতন পান ৩০ হাজার টাকা কিন্তু ৬০ হাজার টাকায় ভাড়া বাড়ীতে থাকেন তার সত্যতা পাওয়া গেছে। ব্যবহার করছেন একাধিক দামি গাড়িও। দেলোয়ার হোসেন নামে-বেনামে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গড়েছেন একাধিক প্লট ও ফ্ল্যাট। বর্তমানে দেলোয়ার হোসেন রাজধানীর লালমাটিয়ার এ্যাসুরেন্স ডেভোলেপম্যান্ট এর ৪/৫, (২য় তলা) ভাড়া বাসায় থাকেন। প্রতি মাসে তিনি ভাড়া দেন ৬০ হাজার টাকা। নাম না প্রকাশ করার শর্তে কয়েকজন জানান, ‘দেলোয়ার হোসেন একজন ৩য় শ্রেণীর কর্মচারী হয়ে ৬০ হাজার টাকা মাসিক বাসা ভাড়া দেন, দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা ইনকাম ছাড়া এটা কখনোই সম্ভব না। একজন মন্ত্রীর বাসায় যা না আছে দেলোয়ারের বাসার মধ্যে তা আছে।’ ঢাকার মোহাম্মদপুরে বিটিআই ডেভোলেপম্যান্ট কোম্পানীর নিকট ক্রয়কৃত এ ব্লকের ৭/১ প্লটে, ১৭শত স্কয়ার ফিট (চতুর্থ তলা) ফ্ল্যাট রয়েছে যার মূল্য প্রায় ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। মোহাম্মদপুরের জাকির হোসেন রোডের ১/১৫ ব্লক-ই (তয় তলা) ৬শত স্কয়ার ফিটের দুটি ফ্ল্যাট-যার মূল্য ৮০-৯০ লাখ টাকা এবং প্লট-এফ-৪, ব্লক-ই (৬ষ্ঠ তলা) ১১শত স্কয়ার্য ফিট ফ্ল্যাট রয়েছে যার মূল্য ৩৫-৪০ লাখ টাকা। মোহাম্মদপুরের লাল মাটিয়ায় ঈড়সঢ়ৎবযবহংরাব হোল্ডিংয়ে ১৭শত স্কয়ার ফিট একটি ফ্ল্যাট রয়েছে যার মূল্য প্রায় আড়াই কোটি টাকা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়- দেলোয়ার হোসেনের পিতা আব্দুল ওহিদ জাতীয় গৃহাণেয়র চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী, হাউজিং পাম্পের ইলেক্ট্রিশিয়ান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সে সময় দেলোয়ার হোসেন মোঃপুরে একটি ডিস ব্যবসায়ির প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। সে প্রতিষ্ঠানে বাড়ী বাড়ী গিয়ে প্রতি মাসে ডিস বিল সংগ্রহ করাই ছিল তার মূল কাজ। তাদের সংসারে তখন খুব টানাপোড়েন অবস্থায় ছিলো। পিতা অহিদ মিয়া হঠাৎ মৃত্যুবরণ করলে পরবর্তীতে জাতীয় গৃহায়ণের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে দেলোয়ার হোসেন যোগদান করেন। চতুর্থশ্রেণী থেকে পদোন্নতি পেয়ে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচার্রী হিসেবে তিনি বর্তমানে জাতীয় গৃহায়নে সহকারী হিসাব রক্ষক হিসেবে কাজ করছেন। এরই মাঝে মিষ্টভাষী দেলোয়ার হোসেন গৃহায়নের জাতীয় কর্মচারী ইউনিয়ন (সিবিএ) এর সুকৌশলে সাধারণ সম্পাদক বনে গেছেন।
এছাড়াও স্ত্রী নুসরাত জাহান পপির নামেও কুষ্টিয়া, খুলনা ও ঢাকায় প্লট, রেস্টুরেন্ট ও ফ্ল্যাট রয়েছে। দেলোয়ার হোসেন ওরফে শাহ পরানের গ্রামের বাড়ী কুমিল্লার মুরাদনগর থানার নবীপুর ইউনিয়নের উত্তর ত্রিশ গ্রামে।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়- গ্রামের বাড়ীতেও কয়েকটি প্লট ও বাপের ভিটায় প্রায় কোটি টাকা খরচ করে বিল্ডিং নির্মাণ করেছেন। বিল্ডিংয়ের ফ্লোর মার্বেল পাথর দিয়ে খচিত। নাম না প্রকাশ করার শর্তে কয়েকজন এলাকাবসী জানান- ‘শাহ পরান বছরে দুই-তিনবার গ্রামে আসে। সাথে অন্যরাও আসে। দুইটি গাড়ী নিয়ে তিনি দেশে আসে। হাইলাক্স এবং এফ প্রিমিও। আমরা যতটুকু জানি ওই দুইটা গাড়ি-ই শাহ পরানের। তারা আরও জানান- শাহ পরানের বাবা অহিদ মিয়া খুব কষ্টে পোলাপান নিয়া দিন কাটাইছে। তিনি মারা যাওয়ার পর তার ছেলে শাহ পরান ওই পদে চাকরি নিছে। এখন শাহ পরানতো হাজার কোটি টাকা মালিক। ও বেতনই-বা কয় টাকা পায়? এতো কিছু করলো কি দিয়া? কোন আলাদিনের চেরাগ পাইছে হয়তো!’ এ ব্যাপারে দেলোয়ার হোসেনের নিকট জানতে চেয়ে তার মুঠো ফোনে কল দিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। বিষয়টি সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে মনে করেন অনেকেই।