*বাইজিদ মন্ডল ডায়মন্ড হারবার:-*
আবহমান গ্রামবাংলার ইতিহাস ঐতিহ্যের অনেক কিছুই আজ বিলুপ্তির পথে। একসময় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী উৎসবের মধ্যে অন্যতম ছিল ঘোড়ার দৌড় (ঘোড়দৌড়) প্রতিযোগিতা। কালের পরিবর্তনে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামবাংলার জনসাধারণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণমূলক এইসব প্রতিযোগিতা। তবে এখনও পশ্চিম বঙ্গের পাশাপাশি দক্ষিন ২৪ পরগনা জেলায় কোথাও কোথাও এটি সবান্ধব উপস্থিতিতে আয়োজন করা হয়ে থাকে। সম্প্রতি দক্ষিন ২৪ পরগনা জেলার ডায়মন্ড হারবার মোহনপুর চাঁদনগর ইয়ং সোসাইটির উদ্যোগে মোহনপুর ও চাঁদ নগর গ্রামে স্থানীয় এ মাঠে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার ও গ্রামীন মেলার আয়োজন করা হয়। প্রতি বছর নিয়মিত আয়োজনেরই অংশ হিসেবে এবছরও ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা ও মেলার আয়োজন করা হয়। শনিবার ও রবিবার দুই দিনের এ প্রতিযোগীতার শেষে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারী ঘোড়ার মালিকদেরকে বিশেষ পুরুস্কারে পুরস্কৃত করে সম্মানিত করা হয়। এদিন ঘোড়দৌড় উপলক্ষে নানা সাজে সজ্জিত হয়ে টগবগিয়ে খুরের আওয়াজ তুলে ছুটে যায় রঙ-বেরঙের ঘোড়া। সাজে সজ্জিত হয়ে ছুটে চলে ঐতিহ্যের ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা। এ ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা ও মেলা উপভোগ করতে ডায়মন্ড হারবার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ আসে। এতে শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষ ষাটোর্ধ বয়স্কসহ নানা শ্রেণীপেশার হাজারো মানুষের ভিড় হয়।ঘোড়াদৌড় দেখতে আগের দিনই স্থানীয়দের বাড়ি ভরে যায় আত্মীয়-স্বজনে। দুপুর থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন বয়সী শিশুরা মাঠে জড়ো হতে থাকেন। উৎসবমুখর পরিবেশে ঘোড়ার দৌড় ও সওয়ারিদের রণকৌশল উপভোগ করতে মাঠের দুই প্রান্তে হাজির হয় হাজার হাজার দর্শনার্থী। তারা মাঠের দুই পাশে দাঁড়িয়ে ঐতিহ্যবাহী এই ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন। খেলা শুরু হলে মাঠের চারদিকে হাজারো দর্শকের উচ্ছ্বসিত আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে। দুরন্ত গতিতে ছুটে চলে ঘোড়া আর সেই ঘোড়দৌড় দেখে উৎসাহিত নানা বয়সের দর্শনার্থীরা। দর্শকের মুহুর্মুহু করতালি আর চিৎকারে অন্যরকম আনন্দ বয়ে যায়। এ যেনো চিরায়ত বাঙালির চিরচেনা মিলনমেলা। এই প্রতিযোগীতায় বিভিন্ন এলাকার ৭ টি ঘোড়া অংশ নেয়। গ্রাম-বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিযোগিতা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন আগত দর্শকেরা।ঘোড়াদৌড় দেখতে আসা এক ছোট্ট ফুটফুটে সুন্দরী মহিলা সাদিয়া বলেন, টিভিতে ঘোড়াদৌড় দেখে ছিলাম সরাসরি কখনো দেখি নাই। শহরে কোথাও ঘোড়াদৌড় হয় না। তাই শহর থেকে এক কাছের আত্মীয়ের সঙ্গে এখনে ঘোড়াদৌড় দেখতে এসেছি।এ আয়োজন দেখতে আমার মতো অনেক মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন। এ প্রতিযোগিতা দেখে খুবই ভালো লাগছে। এমন আয়োজনে হাজারো দর্শকের উপস্থিতিতে আবেগ আপ্লুত হয়েছি। এ প্রতিযোগিতা দেখে স্থানীয় এক যুবক বলেন হারিয়ে যাওয়া ঐহিত্যকে মনে করিয়ে দেবে। তবে এমন আয়োজন প্রতিবছর হলে ভালো হয়,তাহলে মানুষ গ্রামীণ ঐতিহ্য হারাবে না।এই ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজক ইয়ং সোসাইটির পক্ষ থেকে সাকিল আহমেদ বলেন,প্রতি বছরের মতো এবারও মেলা ও ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। মূলত গ্রামীণ ঐতিহ্য ধরে রাখতে ও বিনোদনের উদ্দেশ্যেই এই আয়োজন করা হয়।পাশাপাশি এলাকার দুঃস্থ সর্বসাধারন মানুষের জন্য ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও বস্ত্র বিতরণ করা হয়।