মো: আতাউর রহমান সরকার (মতলব উত্তর প্রতিনিধি)
প্রকৃতিতে প্রচণ্ড দাবদাহ। ভেঙে যাচ্ছে গরমের যুগ যুগের রেকর্ড। দাবদাহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়া লোডশেডিংয়ের কারণে মানুষের স্বাভাবিক জীবন ও ব্যবসা-বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছেন চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার পোলট্রি খামারিরা।
মতলব উত্তরে বিভিন্ন এলাকায় দিনে ও রাতে বেশির ভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। বিদ্যুৎ না থাকায় প্রচণ্ড গরমে হিটস্ট্রোকে নিয়মিত বিভিন্ন এলাকার খামারের বিপুল মুরগি মারা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পোলট্রি খামারিরা।
যদিও সারাদেশে বিদ্যুৎ সংকট তবুও খামারিরা বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান স্থানীয় চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২কে এ জন্য দুষছেন। কোনো প্রকার রুটিন কিংবা শিডিউল না করে দিন-রাত মিলে ৮-৯ ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকা ক্ষতির বড় কারণ বলে জানান খামারিরা। এতে দুপুরের দিকে প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে হিটস্ট্রোকে মুরগি মারা যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৩৫৭টি পোলট্রি খামার রয়েছে। এ গুলোর মধ্যে ব্রয়লার খামার রয়েছে ৩১৫টি এবং লেয়ার ও দেশি মুরগির খামার রয়েছে ৪২টি। তীব্র লোডশেডিংয়ের ফলে প্রতিদিনই এসব খামারের মুরগি মারা যাচ্ছে। খামারের ওপর নির্ভরশীল অনেক খামারি দুশ্চিন্তায় রয়েছে। বিদ্যুতের বিকল্প জেনারেটর না থাকাসহ পর্যাপ্ত আলো-বাতাস খামারে ঢুকতে না পারাটা মুরগির হিটস্ট্রোকের প্রধান কারণ।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা বলেন, হিটস্ট্রোক কোনো রোগ নয়। গরমের হাত থেকে যদি মুরগিকে রক্ষা করা যায়, তাহলে হয়তো হিটস্ট্রোকে মুরগির মারা যাওয়া ঠেকানো সম্ভব। এ ছাড়া কোনো প্রকার ওষুধ কিংবা চিকিৎসা দিয়ে মুরগি বাঁচানো সম্ভব নয়। বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে জেনারেটর দিয়ে মুরগি পালন করলে উৎপাদন খরচ আরও বেড়ে যাবে।
ছেংগারচর পৌরসভার ঘনিয়ারপাড় গ্রামের খামারি মো. সাদ্দাম হোসেন দৈনিক বাংলার অধিকারকে বলেন, আমার খামারে ৩ হাজার ব্রয়লার মুরগি রয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকা এবং প্রচণ্ড গরমের কারণে গত ৬-৭ দিনে আমার প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ মুরগি মারা গেছে। এ জন্য আমি মনে করি, লোডশেডিং সর্বোচ্চ দায়ী। যদি রুটিনমাফিক লোডশেডিং হতো, তবু আগাম ব্যবস্থা নিলে হয়তো মুরগিগুলো বাঁচানো যেত।
ওটারচর গ্রামের খামারি মো. শিপন মিয়া বলেন, গত দুই দিনে হিটস্ট্রোকে আমার খামারের ৯০টি মুরগি মারা গেছে। প্রতিটি মুরগি দুই কেজির উপরে। গরমের কারণে কোনো ভাবেই হিটস্ট্রোক থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে না। লোডশেডিংয়ের কারণে ফ্যান চালিয়েও রাখতে পারছি না। এভাবে চলতে থাকলে লোকসান কোথায় ঠেকবে বলা মুশকিল।
চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর মতলব উত্তর জোনাল অফিসের এজিএম রায়হানুল ইসলাম বলেন, প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার গ্রাহকের জন্য আমাদের প্রতিদিনের বিদ্যুতের যা চাহিদা, তার মাত্র ৫০ শতাংশ বরাদ্দ পাচ্ছি। এ ছাড়া প্রধান সংযোগ লাইনও মাঝে মাঝে বন্ধ হচ্ছে। এ জন্য বাধ্য হয়ে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের উপ-সহকারী কর্মকর্তা (প্রানি ও স্বাস্থ্য) পলাশ কুমার দাস বলেন, বিদ্যুৎ না থাকলে শুধু জেনারেটর দিয়ে মুরগি পালন করা কঠিন। এ জন্য এমন স্থানে খামার তৈরি করতে হবে, যাতে সেখানে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস আসতে পারে। এ ছাড়া তীব্র গরমের সময় বিদ্যুৎ না থাকলে মুরগির শরীরে পানি স্প্রে করতে হবে। তাহলে হিটস্ট্রোকে মুরগি মারা যাওয়ার হার কমবে।