বিভিন্ন সরকারি অফিসের সেবার মান নিয়ে জনমনে প্রশ্ন থাকলেও অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। অনেকটাই বদলে গেছে চাঁদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের চিরচেনা দৃশ্যপট ও সেবার ধরন। সহজেই মিলছে সব সেবা। কর্তৃপক্ষের সেবাদান নিয়ে খুশি সেবা প্রত্যাশী ও গ্রহীতারা। কর্তৃপক্ষের নানামুখী উদ্যোগ আর নজরদারিতে গতি পেয়েছে ডিজিটাল সেবাদান কার্যক্রম। পাসপোর্ট অফিসে আবেদন গ্রহণ থেকে শুরু করে ফ্রিঙ্গার প্রিন্ট ও পাসপোর্ট ডেলিভারিসহ প্রতিটি স্তরে ফিরে এসেছে শৃঙ্খলা। মিলছে সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান। পাসপোর্টের জন্য আবেদন গ্রহণ ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনা নিয়ে সেবা গ্রহীতরা স্বস্তি পেল। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাসহ স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছেও রয়েছে এই খবর। চাঁদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস নিয়ে এক সময় নানান অভিযোগ থাকলেও এখন আর তেমনটি শোনা যায় না তা বললেই চলে।
বুধবার (৩১ জুলাই) সরেজমিনে চাঁদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দেখা যায়, কর্তৃপক্ষের নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণের ফলে গতি পেয়েছে সেবাদান কার্যক্রম। কোনো ভোগান্তি ছাড়াই সেবা পেয়ে খুশি সেবা গ্রহীতারা।
ভুক্তভোগী সূত্রগুলো জানায়, নানা অব্যবস্থাপনা আর অরাজকতার মডেল হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছিল চাঁদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। দালাল চক্রের ফাঁদ ডিঙ্গিয়ে সহজে পাসপোর্ট পেতে পদে পদে হয়রানি ছিল অনেকটাই নিয়তির মত। নির্ধারিত ফিয়ের বাইরে দর কষাকষির বাড়তি টাকা আর ধরাধরি ছাড়া সহজে মিলত না কোন পাসপোর্ট। অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীর অসহযোগিতা সেবা প্রত্যাশীদের এই হয়রানিকে আরও অসহনীয় করে তুলেছিল। প্রতিবাদ করেও মেলেনি কোন প্রতীকার। এসব নানা কারণে চাঁদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতি ও হয়রানি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছিল।
সূত্র জানায়, ই-পাসপোর্ট পেতে এখন প্রতিদিন গড়ে শতাধিক আবেদন জমা পড়ছে। অনলাইনে জমা দেয়া এসব আবেদনের বিপরীতে প্রতিদিন গড়ে ডেলিভারি দেয়া হচ্ছে গড়ে ২শত ই-পাসপোর্ট। সরকার নির্ধারিত ফি দিয়ে অনলাইনে ই- পাসপোর্টের আবেদন করতে পারছেন পাসপোর্ট প্রত্যাশীরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়েই মিলছে পাসপোর্ট। কোন আবেদনকারী চাইলে পাসপোর্ট অফিসের ওয়েবসাইট থেকে তার আবেদন কী অবস্থায় আছে কিংবা হালনাগাদ তথ্য জেনে নিতে পারছেন। এছাড়া এসএমএস এর মাধ্যমেও আবেদনকারীকে পাসপোর্ট সম্পর্কিত তথ্য জানিয়ে দেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, চাঁদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গত অর্থবছরে আবেদন জমা পড়েছিল ৫০ হাজার ৬৪৪টি। এরমধ্যে ৪৯ হাজার ৪৩টি পাসপোর্টের আবেদন নিষ্পত্তি করে গ্রহীতা বা সেবা প্রত্যাশীদেরকে ডেলিভারি দেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ১ হাজার ৬০১টি আবেদন নানা কারণে পেন্ডিং রয়েছে। পেন্ডিং আবেদনগুলোও দ্রুত সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তির জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
হাজীগঞ্জ উপজেলার আব্দুর রহমান ও মতলব উত্তর উপজেলার কবির হোসেন বলেন, ‘বিদেশে যাওয়ার জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট প্রয়োজন ছিল। দ্রুত পাসপোর্ট প্রয়োজন শুনে অনেকেই সহযোগিতার নামে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্ত আমি নিজে নিজে আবেদন করে পােসপোর্ট অফিসে এসে দেখি এখানে কোন ঝামেলা ছাড়াই সেবা পাওয়া যাচ্ছে। এখানকার স্যারেরাও যথেষ্ট আন্তরিক। আবেদনের এক মাসের মধ্যেই পাসপোর্ট পেয়েছি।
চাঁদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের হিসাব রক্ষক ফারুক হোসেন জানায়, চাঁদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে প্রতিমাসে গড়ে সাড়ে ৩ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় হচ্ছে সরকারের। ৪৮ পৃষ্ঠা ৫ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট জন্য সাধারণ ফি ৪ হাজার ২৫ টাকা, জরুরি ৬ হাজার ৩২৫ টাকা ও অতি জরুরি ৮ হাজার ৬২৫ টাকা। ই-পাসপোর্ট ৪৮ পৃষ্ঠার ১০ বছর মেয়াদী পাসপোর্টের জন্য সাধারণ ফি ৫ হাজার ৭৫০ টাকা, জরুরি ৮ হাজার ৫০ টাকা ও অতি জরুরি ১০ হাজার ৩৫০ টাকা। তবে ২ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট পেতে পুলিশ ভেরিফিকেশন নিজে করিয়ে ঢাকা থেকে পাসপোর্ট নিতে হবে।
চাঁদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ পরিচালক মোঃ ইউসুফ বলেন, ‘সেবা প্রত্যাশীদেরে ঝামেলামুক্ত সেবা প্রদানে আমরা নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছি। দালালদের দৌরাত্ম্য রোধে একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করেছি এবং অনেক দালালকে জরিমানা করা হয়েছে। অধিকাংশ আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়েছে। পুলিশ নেগেটিভ রিপোর্ট, মাল্টিপল একটিভ পাসপোর্ট, ব্যাকেন্ড ভেরিফিকেশনসহ নানা কারণে অল্প কিছু আবেদন পেন্ডিং আছে, সেগুলো নিষ্পত্তি করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সকলের আন্তরিক সহযোগিতার ফলেই এটি সম্ভব হয়েছে।’
তিনি বলেন, এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরাও অনেক এগিয়ে যাচ্ছি। প্রতিদিন ই-পাসপোর্টের গড়ে শতাধিক আবেদন হচ্ছে। সহজেই গ্রাহকরা ই-পাসপোর্ট হাতে পেতে পারে আমরা বিভিন্ন ধরনের প্রদক্ষেপ নিয়েছি। ই-পাসপোর্টের প্রতি মানুষের যেন আগ্রহ বাড়ে সেই লক্ষ্যে আমরা কাজও করছি। সাধারণ জনগণকে নতুন পাসপোর্ট বা সংশোনের ক্ষেত্রে দালালদের শরণাপন্ন না হয়ে অনলাইনে আবেদন করে সরাসরি নিজে এসে সেবা নেয়ার আহবানও জানান এই কর্মকর্তা।